বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন?

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি   © সংগৃহীত

কিছুদিন পরেই শুরু হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। এ ভর্তি পরীক্ষা অনেকটা যুদ্ধের মতোই এককথায় ‘বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধ’। তবে এ যুদ্ধে জয় পেতে হলে আপনাকে ‘আদা জল খেয়ে’ নামতে হবে। নামতে হবে বলতে পড়াশোনা করতে হবে। 

আপনি উচ্চশিক্ষার জন্য অনার্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেরিন, টেক্সটাইল ইত্যাদি বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেন। তবে প্রয়োজন সঠিক প্রস্তুতি। না হলে ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া অনেক কঠিন। আর সিলেবাস নির্দিষ্ট নয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংকট তো আছেই। এসব কিছু বিবেচনায় আপনাকে সঠিক প্রস্তুতি নিতেই হবে। 

যা জানা জরুরি: ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত ইউনিট-ভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা হয়। তবে ভর্তি পরীক্ষা যেভাবেই হোক না কেন ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি মোটামুটি একই। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। 

প্রস্তুতির জন্য পড়ার বিষয়: বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সাধারণ জ্ঞানসহ পদার্থ, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞান ভালোভাবে পড়তে হবে। এইচএসসির সিলেবাস অনুযায়ীই নয়, বরং খুঁটিনাটি সবই পড়তে হবে।

মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, আইসিটি ও গণিত বিষয়ে ভালোভাবে পড়তে হবে। হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় নীতি বিষয়েও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের পড়তে হবে। 

বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি   

বাংলা: বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গদ্য ও পদ্য অংশ থেকে বেশকিছু প্রশ্ন প্রতিবারই এসে থাকে। এজন্য গদ্যের মূল বিষয়, লেখক পরিচিতি, সাহিত্যকর্ম, জীবনী বিষয়ে জানতে হবে। কবিতার ক্ষেত্রেও একই রকম। ব্যাকরণ অংশে ভাষা, বাংলা ভাষা, ব্যাকরণ, শব্দ, কারক, সমাস, সন্ধি, বিভক্তি, বচন, বাক্য সংকোচন, বাগধারা, উপসর্গ, অনুসর্গ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ।

ইংরেজি: ইংরেজির ক্ষেত্রে গ্রামার অংশে জোর দিতে হবে। এজন্য Parts of speech, Article, Tense, Voice, Narration, Correction, Right form of verbs, Translation, Synonyms, Antonyms, Transformation of sentences, Joining sentence, Comprehension বিষয়ে ভালো করে পড়তে হবে। এর সঙ্গে কবি ও সাহিত্যিকদের জীবন ও সাহিত্যকর্ম, লেখার বিষয়, উদ্ধৃতি ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয়ও মনে রাখা জরুরি।

রসায়ন: উচ্চমাধ্যমিকের মূল বইয়ের মধ্য থেকে পদার্থের বিভিন্ন অবস্থা, পর্যায় সারণী, রাসায়নিক গণনা, জারণ-বিজারণ, রাসায়নিক বন্ধন, রাসায়নিক বিক্রিয়া, প্রতীক, সংকেত, যোজনী, গাঠনিক সংকেত, আণবিক সংকেত, রাদারফোর্ড, বোরের পরমাণু মডেল বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে।

পদার্থ: গতির সূত্র, মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ, স্থিতিস্থাপকতা, তাপ, গতিবিদ্যা, ভেক্টর ও স্কেলার রাশি, বেগ, ত্বরণ, বল ও বলের প্রকারভেদ, মাত্রা ও বিভিন্ন পদ্ধতিতে একক ইত্যাদি পড়তে হবে।

দ্বিতীয় পত্র থেকে স্থিরবিদুৎ, বিদুৎপ্রবাহের তাপীয় ও রাসায়নিক ক্রিয়া, চৌম্বক পদার্থ, আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ইলেকট্রন, প্রোটন, পরমাণুসহ ইলেকট্রনের প্রতিটি অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা, সূত্রাবলি, ঘটনা ও কারণ, প্রভাব, পার্থক্য, গাণিতিক সমস্যার সমাধান জানতে হবে। গাণিতিক সমস্যার সমাধানগুলো ভালোভাবে করতে হবে।

জীববিজ্ঞান: উদ্ভিদবিজ্ঞান থেকে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, আবিষ্কারকের নাম, প্রয়োজনীয় সংজ্ঞা, উদাহরণ, পার্থক্য, উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস, মূল, পাতা, গোত্র পরিচিতি, সালোকসংশ্লেষণ, শ্বসন, প্রস্বেদন, টিস্যু, টিস্যুতন্ত্র বিষয়গুলো পড়তে হবে।

প্রাণীবিজ্ঞান অংশে ম্যালেরিয়ার জীবাণু, হাইড্রা, দেহপ্রাচীর, কলা, কোষ, প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম, পরিপাকতন্ত্র, রক্ত ও রক্ত সংবহনতন্ত্র, রেচনতন্ত্র, পেশীতন্ত্র, প্রাণীর প্রজননতন্ত্র ইত্যাদি বিষয় পড়তে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই যতটা সম্ভব খুঁটিনাটি বিষয়ে জানতে হবে। 

হিসাববিজ্ঞান: হিসাববিজ্ঞানের প্রশ্ন সাধারণত মৌলিক বিষয়গুলোর ওপর হয়। তাই হিসাববিজ্ঞানের প্রতিটি শাখার ওপর ভালো দখল দরকার হবে। মুনাফা ও মূলধন জাতীয় আয়-ব্যয়, সম্পত্তি, দায়, মালিকানা, হিসাববিজ্ঞানের বিভিন্ন নীতি, ঋণ, অবচয়, সঞ্চয় নীতি, অংশিদারী ক্রয়-বিক্রয় মূলনীতি, শেয়ার ইস্যু, অনুপাত প্রভৃতি বিষয়ের ওপর ধারণা থাকতে হবে। হিসাববিজ্ঞানে অঙ্ক থাকে। দ্রুত সমাধানের জন্য বাসায় অনুশীলনের বিকল্প নেই। 

ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ: ব্যবসায়ের প্রকৃতি ও প্রকারভেদ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, ব্যবস্থাপনার প্রকৃতি ও আওতা, ব্যাংক ব্যবস্থা, মুদ্রা ব্যবস্থা, বাণিজ্যিক ব্যাংক নীতিমালা ইত্যাদি বিষয় ভালোভাবে জানতে হবে।

সাধারণ জ্ঞান: এ অংশে ভালো করতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চলতি ঘটনাবলির ওপর নজর রাখতে হবে। এজন্য নিয়মিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকা পড়া এবং বিবিসি, টেলিভিশন, রেডিওর সংবাদ শুনতে হবে। এর বাইরে বাংলাদেশ অংশের জন্য দেশের ভূ-প্রকৃতি, আয়তন, শিক্ষা, অর্থনীতি, সমাজ, রাজনীতি, উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ও স্থপতির নাম, প্রশাসনিক কাঠামো, চলচ্চিত্র, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, খেলাধূলা, আবহাওয়া, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ প্রভৃতি বিষয়ে জানতে হবে।

আন্তর্জাতিক বিষয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা, স্থাপনা, স্থাপত্য, স্থপতি, নোবেল পুরস্কার, বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, রাজধানী, মুদ্রা, ভাষা, বিভিন্ন ধরনের পুরস্কার যেমন অস্কার, পুলিৎজার, বুকার, ম্যাগসেসে, বিশ্বের উচ্চতম, দীর্ঘতম, ক্ষুদ্রতম, বৃহত্তম বিষয়সমূহ, আন্তর্জাতিক চুক্তি, বিশ্বের নামকরা নগর, বন্দর, ব্যয়বহুল শহর ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয় জানতে হবে। 


সর্বশেষ সংবাদ