গুগল নির্ভরতা আপনার জীবনে বিপদ ডেকে আনছে না তো?

গুগল সার্চ
গুগল সার্চ  © সংগৃহীত

তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় ইন্টারনেট এখন মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। অজানা যেকোনো তথ্য জানা এবং বের করার জন্য ইন্টারনেটই বর্তমানে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। গুগল নামের সার্চ ইঞ্জিনে শুধুমাত্র কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমেই আমরা দেশ-বিদেশের অতীত ইতিহাস এবং বর্তমানের অনেক বিষয় জেনে নিতে পারি।

কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, ইন্টারনেট এবং গুগলে জেনে নেওয়া অনেক বিষয়ই বেশ কিছুদিন পর কারোই মনে থাকে না। কারণ এসব তথ্য আদতে মনে রাখার উদ্দেশ্য নিয়ে কখনোই খোঁজা হয়নি। ফলে পরবর্তীতে যদি আবারও ইন্টারনেট ঘেঁটে একই তথ্য বের করেন, তাহলে দেখবেন কিছুদিন পর পুনরায় আপনি সেই জিনিস ভুলে বসে আছেন।

এই বিষয়টিকে বলা হয় গুগল ইফেক্ট, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যেটি ডিজিটাল অ্যামনেসিয়া নামে পরিচিত। কিন্তু মূলত বিষয়টি কী? আর কেনই বা এমন হয়? বাস্তব জীবনে একজনের ওপর জিনিসটি কীভাবে প্রভাব ফেলে থাকে?

গুগল ইফেক্ট বা ডিজিটাল অ্যামনেসিয়া কী?
গুগল ইফেক্ট বা ডিজিটাল অ্যামনেসিয়া হচ্ছে মস্তিষ্কের দীর্ঘমেয়াদে তথ্য ধারণ করে রাখার ব্যর্থতা। ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের এক গবেষণায় বলা হয়, অনেক মানুষ তথ্য আত্মস্থ করার পরিবর্তে তারা সেগুলো ইন্টারনেট কিংবা সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজে থাকে। আর সার্চ ইঞ্জিনে তথ্য খোঁজার এই প্রবণতাই হলো গুগল ইফেক্ট বা ডিজিটাল অ্যামনেসিয়া। মানবজীবনের ওপর গুগল ইফেক্ট বা ডিজিটাল অ্যামনেসিয়া বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে থাকে।

আরও পড়ুন: মহাকাশে সিনেমার শ্যুটিং করবেন টম ক্রুজ!

অধ্যাপক মারিয়া উইম্বারের ভাষ্যমতে, ইন্টারনেটের সার্চ ইঞ্জিন থেকে সহজেই এই তথ্য খুঁজে বের করার প্রবণতা দীর্ঘ মেয়াদে স্মৃতিশক্তি গঠনের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। কম্পিউটার এবং সার্চ ইঞ্জিনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা মানুষের স্মৃতিশক্তিকে দুর্বল করে দেয়। কারণ যেসব তথ্য আমরা সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজলে সহজেই পেয়ে যাই, সেগুলো আমরা মূলত শিখি না। আমরা যতবার কোনো তথ্য মনে করার চেষ্টা করি, আমাদের স্মৃতিশক্তি তত সবল হয় এবং অনেক অপ্রয়োজনীয় তথ্য আমরা ভুলে যাই।

অনেক মনোবিজ্ঞানীর ধারণা, কেবলমাত্র নম্বর কিংবা তারিখ মনে রাখার জন্যই মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখা অনুচিত। বরং এগুলো অন্য কেউ মনে রাখলে আমাদের মস্তিষ্ক আরও গঠনমূলক এবং বিশ্লেষণধর্মী চিন্তায় ব্যবহৃত হতে পারে।

গুগল ইফেক্টের ফলে কী হয়?
মানবজীবনের ওপর গুগল ইফেক্ট বেশ প্রভাব বলেও সেটি প্রকৃতপক্ষে কতটা দীর্ঘমেয়াদি, তা এখনও স্বীকৃত নয়। পেন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বলা হয়, ডিজিটাল অ্যামনেসিয়া এখনও বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত না হলেও কগনিটিভ সাইন্টিস্ট অর্থাৎ যারা ভাষাবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান, দর্শন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং নৃবিজ্ঞান আলোকে মানুষের মন নিয়ে গবেষণা করেন, তারাও গুগল ইফেক্টের নেতিবাচক প্রভাবের কথা স্বীকার করেছেন। তাদের মতে, মনে রাখার জন্য মস্তিষ্কের ওপর নির্ভরশীলতা কমলে তা নিউরনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং ফলে মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয়।

গুগল ইফেক্ট কীভাবে কমানো সম্ভব
গুগলে কোনো কিছু সার্চ করলে সেটি অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে খুঁজতে হবে। কোনো কিছু খোঁজার সময়ে শুধু কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ না করে পুরো বাক্য ব্যবহার করে লিখে সার্চ করা বেশি শ্রেয়। পরবর্তীতে সার্চের ফলাফল অর্থাৎ কাঙ্ক্ষিত যে তথ্য আসবে, সেটি নিজেই নিজেকে পড়ে শোনানো উচিত। এক্ষেত্রে মনে রাখার জন্য কিছু পদ্ধতিও ব্যবহার করা যেতে পারে।

গুগল কিংবা সার্চ ইঞ্জিনে কোনো তথ্য বের করার পর সেটি কি-বোর্ডে টাইপ করে সেভ করার চেয়ে হাতে-কলমে কিংবা কাগজ-কলমে লিখলে মনে রাখতে সুবিধা হয়। কারণ হাত এবং মাংসপেশি ব্যবহার করে কলম বা পেনসিল ঘুরিয়ে কিছু লিখলে সেটি মস্তিষ্কে জোরালো সংযোগ সৃষ্টি করে। ফলে তা সহজে মনে থাকে এবং কার্যকরীভাবে ব্যবহার করা যায়।

কোনো কিছু ভুলে গেলে, তা আবার আগের মতোই বারবার পড়ুন। পড়ার সময়ে মনে রাখার সুবিধার্তে নিজের পছন্দমতো পদ্ধতি ব্যবহার করুন। পরবর্তীতে সেগুলো আবার ঝালাই করে নিলে, মনে রাখার ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence