রাজমিস্ত্রী-সিকিউরিটি গার্ড থেকে ফ্রিল্যান্সার, মাসে আয় আড়াই লাখ

সফল ফ্রিল্যান্সার সাদ্দাম হোসেন
সফল ফ্রিল্যান্সার সাদ্দাম হোসেন  © সংগৃহীত

খুলনার কয়রা উপজেলার দুই নম্বর কয়রা গ্রামের আব্দুস সাত্তার ও সায়রা বেগমের ছোট ছেলে সাদ্দাম হোসেন। তার আছে বড় এক ভাই ও ছোট দুই বোন। এক সময় কাজের সারা দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। কোনো উপায় না পেয়ে মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা বেতনে করেছেন সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি। জীবিকার তাগিদে এরপর প্রায় পাঁচ বছর করেছেন রাজমিস্ত্রীর কাজও। আর এইভাবেই চালাতেন তার সংসার।

রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়েই জানতে পারেন অনলাইনে কাজের খবর। এরপর অনলাইন প্লাটফর্মে কাজের বিষয়ে খোঁজ নিতে থাকেন। অল্পদিনেই রাজমিস্ত্রী থেকে হয়ে ওঠেন সফল ফ্রিল্যান্সার ও ইউটিউবার। সেই থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি সাদ্দাম হোসেনকে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তেমন না পেলেও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এখন সফল মানুষ তিনি। 

অনলাইনের আয়ের ওপর নির্ভর করেই জিরো থেকে কোটিপতি হয়েছেন তিনি। নড়াইল উপশহর সংলগ্ন দলজিতপুর মৌজায় পাঁচ শতক জমির ওপর একতলা পাকা বাড়ি এবং সাড়ে তিন শতক জমিতে মার্কেটসহ ১২৬ শতক চাষাবাদের জমি কিনেছেন সাদ্দাম হোসেন। 

এখন ইউটিউব, ফ্রিল্যান্সিং, ফেসবুক পেজসহ অনলাইন মার্কেটিংয়ের উপর নিয়মিত ক্লাস নেন সাদ্দাম হোসেন। সরাসরি ও অনলাইনে সাদ্দাম হোসেনের ক্লাস করে অনেকেই এখন প্রতিষ্ঠিত ফ্রিল্যান্সার ও ইউটিউবার।

আরও পড়ুন: সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অদম্য মেধাবী তামান্না এবার পড়বে আর্মেনিয়ায়

নিজের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে সাদ্দাম বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেছি। তবে হাল ছাড়িনি। বিক্রয় প্রতিনিধি থেকে শুরু করে সিকিউরিটি গার্ড, রাজমিস্ত্রীর কাজ করেছি। পরিশ্রম অনুযায়ী বেতন পাইনি। অবশেষে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মিলেছে সাফল্য। ফ্রিল্যান্সার বা অনলাইন মার্কেট প্লেসের কাজটি শুরু করেছি ২০১৩ সালে। প্রথমে কাজ শেখার জন্য ভালো কোনো শিক্ষক পাইনি। তবে হাল ছাড়িনি। ‘ওয়েব ডিজাইন’ দিয়ে অনলাইন জগতে প্রথমে কাজ শুরু করি। পরে ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক পেজসহ ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিভিন্ন ধরনের কাজ করছি। সবমিলে বর্তমানে প্রতি মাসে আয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি নড়াইল জেলা শাখার সভাপতি প্রসেনজিৎ কুন্ডু বলেন, সাদ্দামের সফলতা দেখে আরো অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে আগ্রহী হবেন। দিন দিন অনলাইনে মার্কেটপ্লেস বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদাও বাড়ছে। এই খাতে মানুষ আগ্রহী হলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে যেমন নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারবেন, তেমনি দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে।

সাদ্দামের শূন্য থেকে সফল হওয়ার এই গল্প এখন অনেক হতাশাগ্রস্ত তরুণ-তরুণীকে অনুপ্রেরণা যোগায়। তার জীবন সংগ্রাম ও সাফল্যের কাহিনী নিয়ে ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়েছে ‘সিক্স ফিগার সিলভার টিউবার’ শিরোনামে একটি বই।


সর্বশেষ সংবাদ