শুধু ঢাবিতে নয়, রক্তের ‘বাঁধন’ ছাড়িয়েছে পুরো দেশে

বাঁধন
বাঁধন  © লোগো

আজ ১৪ জুন। বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচায় তাদেরসহ সাধারণ জনগণকে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য। ১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালন করা হয়, তবে ২০০০ সালে ‘নিরাপদ রক্ত’-এই থিম নিয়ে পালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম বিশ্ব রক্তদান দিবস পালিত হয়েছিল। ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের পর থেকে প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ দিবস পালনের জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে। 

রক্তদান একটি মহৎ কাজ। রক্তদান করা মানে মানবতার কল্যাণে পাশে থাকা। রক্তদানের মাধ্যমে হাজারো মুমূর্ষু ব্যক্তিদের জীবন বাঁচতে পারে। একবার রক্ত দানে একজন মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে। এ কাজটি সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করার মত একটি মহৎ কাজ। এ কাজে সমগ্র মানবজাতি যেমন উপকৃত হয়, তেমনি ব্যক্তিগতভাবেও লাভবান হওয়া যায়। এ কাজে মেলে মানসিক পরিতৃপ্তি এবং এতে জাগ্রত করে মানবিক অনুভূতি।

বাংলাদেশেও একসময় প্রতিবছর হাজারও মানুষ শুধু রক্তের অভাবেই মৃত্যুর কোলে অসহায় আত্মসমর্পণ করতো। কিন্তু এই মানুষের অসহায়ত্ত্ব থেকে জাতিকে রক্ষা করতে ১৯৯৭ সালের ২৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে একদল শিক্ষার্থী বাঁধন নামের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। যা মূল কাজ হলো বিনামূল্যে অসুস্থ মানুষের কাছে রক্ত পৌঁছে দেয়া। 

‘একের রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন’ স্লোগানে শিক্ষার্থীদের পরিচালিত এ সংগঠনটি গত ২৬ বছর ধরে স্বেচ্ছায় রক্তদানকে সবার সামনে সহজ হিসেবে তুলে ধরছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১০ লাখ ব্যাগ রক্তের যোগান দিয়ে সহযোগিতা করেছে বলে জানিয়েছে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সবচেয়ে বড় এ সংগঠনটি। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’র প্রবেশমুখে বাঁধনের অফিসে স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রম পরিচালা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ইউনিটের বাঁধনের স্বেচ্ছাসেবীরা।

বাঁধন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল থেকে যাত্রা শুরু করে ২৫ বছর ধরে ‘বাঁধন’ এখন দেশের ৫৩টি জেলার ১৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৫৯টি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে মোট ৭৬টি ইউনিটের মাধ্যমে মানবসেবা করে যাচ্ছে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবকরা।

শুধু রক্তের যোগান দেয়াই বাঁধনের মূল উদ্দেশ্য নয় বরং স্বেচ্ছায় রক্তদানের পাশাপাশি বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা এবং শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে উৎসাহিত করা বাঁধনের অন্যতম প্রধান কাজ। স্বেচ্ছায় রক্তদান নিয়ে আমাদের সমাজে রয়েছে অনেক ভুল ধারণা। এই ভুল ধারণাকে কাটিয়ে উঠে স্বেচ্ছায় রক্তদানে মানুষ যত বেশি এগিয়ে আসে সেই ব্যাবস্থা করতেও বাধনের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। 

মাঝেমাঝে এমনও অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যেখানে রোগীর ইমার্জেন্সি রক্ত প্রয়োজন কিন্তু কোথাও রক্ত পাচ্ছেন না। এমতাবস্থায় এগিয়ে এসে সেই রোগীর প্রাণ রক্ষায় ভূমিকা রেখেছেন এই বাঁধন কর্মীরা। এজন্য রক্তের প্রয়োজন হলেই নির্দ্বিধায় ছুটে আসছে সংগঠনটির কর্মীদের কাছে। ফলে দিনদিন একটি আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে এই সামাজিক সংগঠনটি।


সর্বশেষ সংবাদ