যেসব কারণে স্থগিত হলো জবি ছাত্রলীগের কমিটি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২২, ০৮:১৬ AM , আপডেট: ০২ জুলাই ২০২২, ০৮:১৬ AM
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। শুক্রবার (০১ জুলাই) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে বিজ্ঞপ্তিতে কোনো কারণ উল্লেখ নেই। তাহলে কেন এই সিদ্ধান্ত?
ধারণা করা হচ্ছে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছেলের ব্যক্তিগত গাড়িচালককে মারধরের ঘটনাই এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ। সংগঠনের নেতারা জানালেন, এটি প্রধান কারণ বটে, তবে একমাত্র কারণ নয়। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজির বিষয়ও আছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি, সম্পাদকের বক্তব্য না পাওয়া গেলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা জানান, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলের গাড়ি চালককে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের লোকজনই মারধর করেছে। তাই আপাতত কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।
গত রোববার ওয়ারীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী রাষ্ট্রপতির ছেলের গাড়িচালককে মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠে। সোমবার সন্ধ্যায় ওয়ারী থানায় কয়েকজনকে অজ্ঞাত করে মামলা করেন ভুক্তভোগী চালক নজরুল ইসলাম।
এর মধ্যে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়ে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মীদের দিয়ে চাঁদাবাজির করার ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ বের হয়েছে।
এটিও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিতের সিদ্ধান্তের একটি কারণ বলে জানান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আরেক সহসভাপতি।
তিনি বলেন, ইব্রাহীম ও আকতারকে সভাপতি-সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণার পর থেকেই পুরান ঢাকায় লুকিয়ে তারা বেপরোয়া চাঁদাবাজি শুরু করেছে। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সিসিটিভির ফুটেজ তো সবার কাছেই আছে।
আরও পড়ুন: জবি ছাত্রলীগ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ‘কুপ্রস্তাব’ অভিযোগ নারী নেত্রীর
ফুটেজে দেখা যায়, জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতির কর্মী সাইদুল ইসলাম সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের কর্মী মো. মাসুদ রানা পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঢুকেছেন।
পরে প্রকাশ হয় তারা প্রতি মাসে চাঁদা দেয়ার রফাদফা করতেই সেখানে যান। আর গিয়ে হুমকি ধমকি দিয়েছেন।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা নারী হেনস্তার অভিযোগও আছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক ছাত্রীকে থাপ্পড় দেয়ার ঘটনায় ওই বিভাগেরই দুই শিক্ষার্থী খায়রুল ইসলাম ও মফিজুল্লা রনিকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে রনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজির অনুসারী।
গত ১৯ জুন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের কর্মী মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান একই বিভাগের এক ছাত্রীকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করেন বলেও অভিযোগ উঠে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হলেও প্রশাসন এবং ওই ছাত্রীকে চাপ প্রয়োগ ও হুমকি-ধামকি দিয়ে ঘটনাটির রফাদফা করা হয়।
রাষ্ট্রপতির ছেলের গাড়িচালককে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত জবি ছাত্রলীগকর্মী কৌশিক সরকার সাম্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনের গ্রুপের কর্মী বলে পরিচিত।
কৌশিক ফেসবুকে নিজের পরিচয়ে শাখা ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ফেসবুক ওয়ালে সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনের সঙ্গে তার ছবি ছাড়াও নিয়মিত ছাত্রলীগকেন্দ্রিক পোস্ট শেয়ার করতে দেখা যায়।
আড়াই লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ায় গত ৬ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এফ আর হিমাচল পরিবহনের একটি বাস পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার এলাকা থেকে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে আটকে রাখে আকতার হোসাইনের অনুসারী ও দর্শন বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় কোতয়ালি থানা পুলিশ বাসটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ছাত্রলীগের উৎপাতে সেই এসি বাস সদরঘাট রুটে চলাচল ও বন্ধ করে দেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সমবায় ব্যাংকের একটি জায়গা দখল করে সেটি টিএসসি হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। এখানে গড়ে তোলা দোকানগুলো থেকে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে চাঁদা তোলার অভিযোগ আছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেছেন ‘নেতা হয়ে নষ্টামি করার কারণে কমিটি স্থগিত হয়েছে। এ ছাড়া পদে থাকা আরও দুইজন নেতা বলেছেন, রাষ্ট্রপতির ছেলের গাড়ির ড্রাইভারকে মারার অপরাধে এবং ইসলামপুরে কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক বিচারে গিয়ে সিদ্ধান্ত না মানায় এক ব্যবসায়ীকে নাকি তুলে নিয়ে এসেছিলেন।’
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল রনি বলেন, অভ্যন্তরীণ অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেটা না ঘটলে ভালো হতো। আমাদের মধ্যে একটু ভুল বোঝাবুঝি আছে, যাদের সঙ্গে ঘটনাগুলো ঘটেছে। আমাদের আওয়ামী লীগের যে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আছেন, উনাদের নির্দেশনা আসলেই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
অভিযোগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজী ও আকতার হোসেনকে কল করলে তারা কল রিসিভ করেননি।