সেক্রেটারি থেকে সভাপতি— শিবিরের ৩৩ সভাপতির মধ্যে ৩০ জনই একই পথ অনুসরণ

ছাত্রশিবির
ছাত্রশিবির  © লোগো

১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এই পর্যন্ত ৪৯ বছরে ছাত্রসংগঠনটির ৪৯টি কমিটি গঠিত হয়েছে। শিবিরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সর্বমোট ৩৩জন এই সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কেউ কেউ একাধিক মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন। সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবেও কেউ কেউ একাধিকবার দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে এই ৩৩জন সভাপতির মধ্যে ৩০ জন তার পূর্ববর্তী সেশনে সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন।

সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সদস্য সম্মেলনে ভোটের ভিত্তিতে ২০২৫ সেশনের সংগঠনটির নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন জাহিদুল ইসলাম, যিনি এর আগে ২০২৪ সেশনে সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৫ সালের জন্য সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন আগের কমিটির দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাদ্দাম।

এই কমিটি হওয়ার আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাহিদুল ইসলামই সংগঠনটির নতুন সভাপতি নির্বাচিত হচ্ছেন বলে বেশে আলোচনা হয়েছিল। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, শিবিরের সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। যেহেতু আগে সেক্রেটারি থেকে সভাপতির হওয়ার রীতি বেশিই ছিল, সে কারণে এই আলোচনাটি হয়েছিল বলে দাবি তাদের।

ছাত্রশিবিরের সংবিধানের ১৩ ও ১৪ নম্বর ধারায় সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া বর্ণিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সংগঠনের সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে এক বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। যদি কোনো কারণবশত কেন্দ্রীয় সভাপতির পদ স্থায়ীভাবে শূন্য হয়, তাহলে কার্যকরী পরিষদ, পরিষদের মধ্যে থেকে একজনকে সাময়িকভাবে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত করে খুব শিগগির সম্ভব সদস্যদের ভোটে সেশনের অবশিষ্ট সময়ের জন্য কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। যদি কেন্দ্রীয় সভাপতি সাময়িকভাবে ছুটি গ্রহণে বাধ্য হন, তাহলে তিনি কার্যকরী পরিষদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরিষদের মধ্যে থেকে তিন মাসের জন্য অস্থায়ী সভাপতি নিযুক্ত করতে পারবেন।

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ বলেন, ছাত্রশিবিরের সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। সদস্যরা যে কাউকে ভোট দিতে পারেন। আর কেন্দ্রীয় সভাপতির এখতিয়ারে থাকে তিনি কাকে ছুটি দিবেন আর কাকে দিবেন না। নতুন সভাপতি নির্বাচনের পরে উনি মূলত সিদ্ধান্ত নেন পরবর্তী সকল কার্যক্রমের। উনি ইন্ডেপেন্ডেন্টলি সবকিছু পরিচালনা করে থাকেন। 

তবে কেন্দ্রীয় সভাপতি যা কিছুই করেন, কার্যকরী পরিষদের সাথে পরামর্শ করে করেন বলে উল্লেখ করেন সিবগাতুল্লাহ।

তিনি বলেন, কার্যকরী পরিষদে সারাদেশের বিভিন্ন ইউনিট পরিচালনার জন্য যতজন প্রয়োজন সদস্য সংখ্যা ততজন থাকেন। ৫০ থেকে ৬০ জন স্বাভাবিকভাবে হয়। আবার কার্যকরী পরিষদও সদস্যের ভোটে গঠিত হয়। তাদের মধ্য থেকে একজনকে সেক্রেটারি জেনারেল করা হয়।

মীর কাশেম আলী ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে তার সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালনের সুযোগ ছিলোনা। সেক্রেটারি জেনারেল না হয়ে সরাসরি সভাপতির দায়িত্ব পালন করা বাকী দুইজন হলেন মুহম্মদ কামারুজ্জামান এবং মুহাম্মদ শাহজাহান।

সর্বশেষ পাঁচ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, সালাহউদ্দিন আইউবী, হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, রাজিবুর রহমান পলাশ, মঞ্জুরুল ইসলাম এবং জাহিদুল ইসলামও আগে সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছেন।

ছাত্রশিবিবের কমিটির মেয়াদকাল বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়, ৪৯ কমিটির কোনোটি এক বছরের বেশি মেয়াদে ছিল না। ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে তারা নেতৃত্ব নির্বাচনের কার্যক্রম শেষ করেছেন।

একই চিত্র ঢাবি শাখায়
এদিকে ২ জানুয়ারি ২০২৫ সেশনের জন্য ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এতে শাখার সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল এসএম ফরহাদ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রের মতো ঢাবি শাখার বেশির ভাগ সভাপতিও একই শাখার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এসএম ফরহাদ সেক্রেটারি জেনারেল থাকাকালীন সভাপতি ছিলেন আবু সাদিক কায়েম। সাদিক কায়েমও আগে সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছেন।

এ বিষেয়ে সাদিক কায়েম বলেন, সংগঠনের ৩৪ নম্বর ধারা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন করা হয়। সারাদেশের সদস্যরা নিজেরা প্রার্থী এবং ভোটার। ৩৪ নম্বর ধারায় বর্ণিত গুনাবলি যার মধ্যে থাকবে তাকে নির্বাচিত করা হয় প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে। কাজেই যে সেক্রেটারি জেনারেল হয় তার মধ্যে সব গুণাবলি থাকে। খুব রেয়ার কেইস আছে যাদের নৈতিক অধঃপতন হয়েছে।

সব চেয়ে সুন্দর গণতন্ত্রের চর্চা শিবিরে হয় বলেও উল্লেখ করেন জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া এই ছাত্রনেতা। 

সাদিক বলেন, সারাদেশের সদস্যরা আবার কার্যকরী পরিষদ গঠন করে। কেন্দ্রীয় সভাপতি কার্যকরী পরিষদের সাথে আলাপ আলোচনা করেন। এই পরিষদ যদি নন-কনফিডেন্স ভোট দেন, তাহলে সভাপতিরও অপসারণ হতে পারে।

শিবিরে নেতা নির্বাচনে আঞ্চলিকতা, পদ বাণিজ্য এবং কোনো অনৈতিক লেনদেন নেই উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, শিবিরের আরেকটা সুন্দর দিক হলো সারাদেশের প্রান্তিক ওয়ার্ড শাখা থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত সব শাখার নির্বাচন এবং কমিটি গঠন জানুয়ারীর ২য় সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যায়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence