বহন করেন অর্ধশতাধিক ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব

প্রতিদিন ইফতার নিয়ে রোজাদারদের পাশে ছাত্রদল নেত্রী নওরীন

  © টিডিসি ফটো

পবিত্র রমজান মাসে ঢাকা শহরের ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ছাত্রী ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক জান্নাতুল নওরীন। প্রতিদিন নিজ উদ্যোগে ঢাকার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে এসব রোজাদারদের ইফতার বিতরণ করেন তিনি। তাছাড়া বরিশালে নিজ অর্থায়নে একটি ইয়াতিম খানা মাদ্রাসা পরিচালনাও করেন তিনি। বাবা ও তার আয়ের টাকায় মিটছে ৫৭ ইয়াতিম শিশুর পড়াশোনা-খাবারসহ যাবতীয় চাহিদা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নওরীন ঢাকার ধানমন্ডিতে পরিবারের সাথেই বসবাস করেন। অনার্স করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে। বর্তমানে তিনি 'সার্টিফিকেট অব কমন ল ইন ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন রিজিওনাল ক্যাম্পাস ভুঁইয়া একাডেমি' থেকে আইন বিভাগে পুনরায় অনার্স করছেন।

পারিবারিক ব্যাবসার টাকা জমিয়ে এবং পরিবারের সহায়তায় তিনি ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর ঢাকা শহরের ছিন্নমূল মানুষদের ইফতারি করিয়ে থাকেন। তিনি ঢাকার ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, আজীমপুর, লেকের আশেপাশের এলাকায় বিকেলে ঘুরে ঘুরে ইফতার বিতরণ করেন। এসময় তিনি কোন রাজনৈতিক ব্যানার ব্যাবহার করেন না বা কোনো রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে রাখেন না। তাকে সহযোগিতা করেন তার বাসায় কেয়ারটেকার। 

কেন এমন মহৎ উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন জানতে চাইলে নওরীন বলেন, ছোটবেলা থেকে নানী, দাদী, মা-বোনকে দেখেছি প্রতিদিন অন্তত দুজন মানুষকে ইফতার করাতে। কিন্তু শহরের বহুতল ফ্লাটে কেউ দরজায় কড়া নাড়েনা, "মা ইফতার করান বলে"। তাই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

ইফতার বিতরণ প্রসঙ্গে জনসম্মুখে কথা বলতেও দেখা যায় না নওরীনকে। তবে মানুষকে অনুপ্রেরণা যোগাতে ফেসবুকে পোস্ট দেন তিনি। তার জবাবও তিনি দিয়ে বলেন, দানের ছবি তুলতে আমার নিতান্তই অসহনীয় অনুভব হয়। কিন্তু কয়েকবছর আগে আমিও একজনের ফেইসবুকে এই ইফতার নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছানো দেখে অনুপ্রেরণা পাই। যত মানুষকে খাবার দেওয়া হয়েছে এখানে সবার ছবি নেই। 

আমি চেষ্টা করি যথা সম্ভব কম ছবি তুলতে, চেহারা রিভিল না করতে ও গ্রহণকারী ব্যক্তির অনুমতি নিয়ে কমফোর্টজোনে ছবিটি তুলতে।

মানুষের সাহায্য নেন কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যে এতিমখানার জন্য কাজ করি, ফেসবুকে পোস্ট করার ফলে অনেক মানুষ আমাকে নক করে ঐ এতিমখানার জন্য খাবার দিতে চায়। আমি তাদের বলি আপনার বাসার পাশের এতিমখানা, অনগ্রসর, এ দ্রব্যমূল্যের বাজারে যাদের ভাত খেতে কষ্ট তাদের একবেলা বা একদিনের আহারের ব্যবস্থা করুন। এভাবেই বহু মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে যাবে। 

ইয়াতিম খানা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি যখন ইয়াতিম খানায় কাজ শুরু করি তখন মাত্র ১৯ জন শিশু ছিলো। বর্তমানে তা বেড়ে ৫৭ জনে দাঁড়িয়েছে। নিজের আয়ের পাশাপাশি বাবা ও আমার ভাইবোনের আয় থেকেও তাদের ভরণপোষণের জন্য অর্থায়ন করে থাকি। তাছাড়া এলাকার মানুষজনের কাছ থেকেও ইয়াতিম খানার হুজুরগণ ডোনেশন পেয়ে থাকেন।


সর্বশেষ সংবাদ