মত প্রকাশের স্বাধীনতা রোধ করেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: ছাত্র ফেডারেশন
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৫৭ PM , আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৫৭ PM
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দেশের নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রোধ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। আজ রবিবার (২ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের উদ্যোগে সিন্ডিকেট ভাঙা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো, র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিন হত্যার যথাযথ তদন্ত, প্রথম আলোর সম্পাদক ও সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নামে হয়রানীমূলক মামলা প্রত্যাহার ও শামসুজ্জামানের মুক্তির দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড বলেন, প্রধানমন্ত্রী র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে বলেছিলেন এতে র্যাবের ভয়ের কিছু নেই। সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই আজ র্যাব ৬৫ বছরের বৃদ্ধকে যিনি অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদ করেছিলেন তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। জেসমিনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। আজকে একজন সরকারি কর্মকর্তা বা সাংবাদিকের সাথেই যদি এমনটা হয় তাহলে আমাদের মত খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের কি হবে? সরকার গণমাধ্যমের কর্মীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছেন যেনো তারা সত্যকে সাধারণের সামনে তুলে ধরতে না পারেন। এই আইনের কোন অপব্যবহার হয় না বরং এই আইনটিই একটি অন্যায় আইন যা সাংবাদিক ও গণ মানুষের সত্য কথা প্রকাশে, মানুষের স্বাধীন চিন্তাকে, মুক্ত চিন্তাকে বাধা দেয়। ফলে আজকে একজন কিশোর, একজন দিনমজুর, একজন বৃদ্ধ, একজন সাংবাদিক কিংবা সরকারি কর্মচারীর টুটি চেপে ধরা হচ্ছে। অথচ সেই দিনমজুর জাকির যা বলেছিলেন, সেটাই আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের সামগ্রিক চিত্র। আজকে এক দিনমজুরের সামান্য কথায় জাতির নগ্নতা প্রকাশ করে দেয়। যারই ফলশ্রুতিতে সরকাল ডিবি পুলিশকে শামসুজ্জামানের উপর লেলিয়ে দেন।
আজকে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করে বলেন, সাধারণ মানুষ না চাইলে নাকি তিনি ক্ষমতায় থাকতেন না। তিনি নাকি আমাদের মোবাইল দেন, মানুষের খাবার, পড়নের কাপড় দেন। অথচ উনার বেতন, খাবার, সিকিউরিটি গার্ডের বেতন, আপনার মন্ত্রীপরিষদের বেতন, তাদের ভোগ বিলাসিতা সবই দেয়া হয় ১৮ কোটি মানুষের শ্রমের টাকায়, ঘামের টাকায়। আপনার সাবেক অর্থমন্ত্রী বাজারে এখনো ৫ টাকা পাওয়া যায় বলে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। সেই কথাটা আজকে সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। আজ ৫ বা ১০ টাকায় ভালো কোন জিনিস পাওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, আইসিটি অ্যাক্টে কেউ রাত দেড়টার সময় যিনি মামলা করতে যায়, তিনি অবশ্যই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপেই মামলা করে। আমরা দেখি দেশে লক্ষাধিক মামলা পড়ে আছে, কেউ ছুঁয়েও দেখছে না। মামলা নিতেও দ্বিধাবোধ করে পুলিশ। কিন্তু অপরদিকে যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়া হলো সাথে সাথেই তাকে রাত দেড়টায় গ্রেফতার করা হলো। শুধু তাই না, টানা ২০ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো কিন্তু তারা সেটা স্বীকার পর্যন্ত করেনি। যখন রাতের খাবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে ৪০/৪৫ টাকায় বিক্রি হয় সেটা সাহরিতে হয় ৭০ টাকা। আবার এটার দাবি নিয়ে ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয় তখন ভিসি তাদের বেয়াদব বলে সম্বোধন করেন। আমরা এমন একটি দেশে বসবাস করছি যার কোন সঠিক ব্যবস্থাপনা নেই। যে যার মত ইচ্ছে চলছে ফিরছে, শোষণ করছে, শুধু সরকারের বিরোধিতা না করলেই সে বেঁচে যাচ্ছে সবকিছু থেকেই।
ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক ফারহানা মল্লিক মুনা বলেন, বর্তমানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১১৩৬ জনের নামে মামলা, ২২০ জন সাংবাদিক। এর বড় একটা অংশ তারা যারা অনেক চিন্তা করে দুটি কথা মানুষের সামনে প্রকাশ করেন। কিন্তু এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে তাদের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়। শামসুজ্জামান মুক্ত চিন্তা প্রকাশ করার ফলেই তাকে প্রথমে গুম করা হয় পরবর্তীতে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আজকে দিনমজুর জাকিরের কথাই সমগ্র দেশের মানুষের মুখের কথা। সরকার বলছে জাকির হোসেনের মাছ, মাংসের স্বাধীনতা চাওয়াটা নাকি দেশের ভিত্তি দূর্বল করে দিয়েছে। এই দূর্বল ভিত্তিসম্পন্ন দেশ তো আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীন করিনি। আমরা একাধারে মাছ মাংসের স্বাধীনতার পাশাপাশি কিথা বলার স্বাধীনতা চাই, প্রতিবাদ করার স্বাধীনতা চাই, কথা বলে অন্যায় মামলা যেনো না হয় সেই স্বাধীনতা চাই।
ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, সরকার বলেছিলো বাচ্চাটিকে নাকি ১০ টাকা দিয়ে বক্তব্য নেয়া হয়েছে। যেমনটা বলা হয়েছিলো বাসন্তির ক্ষেত্রে। সেসময়ও বলা হয়েছিলো বাসন্তিকে ১০ টাকা দিয়ে জাল পড়িয়ে ছবি তোলা হয়েছে। একজন নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রোধ করেছে এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। পদে পদে সরকার দেশের মানুষকে গলা চেপে ধরা হচ্ছে। ৯ টাকার বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে ভারতের আদানী কোম্পানি থেকে ১৬ টাকায় বিদ্যুৎ কেনা হলেও তারা বললো এতে নাকি দেশের মানুষের উপকার হয়েছে। অথচ এই কথা ভারতের কংগ্রেসে রাহুল গান্ধীও বলেছিলেন কেন আদানী গ্রুপের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশের ক্ষতি করা হচ্ছে। আমরা যখন দেশের ভাত, মাছ, মাংসের দাবি জানিয়েছি সেদিন তারা বলছে স্বাধীনতার দিনে নাকি এসব কথা বলা যায় না। এই কথা বলার পরে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
ছাত্র ফেডারেশনের আহবায়ক আরমানুল হক বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই দেশে একটা অরাজকতা চলছে। দেশে যখন ভোটাধিকার থাকে না, গণতন্ত্র থাকে না তখন এই অরাজকতা তৈরী হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সিট দিতে না পারায় ছাত্ররা অবৈধ হয়েই হলে অবস্থান করে। হল চালায় ছাত্রলীগ, তাই প্রশাসনের কোন মাথাব্যথা নেই শিক্ষার্থীদের সিট প্রদান করার ক্ষেত্রে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাবি ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওবামা ফাতেমা, ঢাকা কলেজের সাধারণ সম্পাদক আলামিন রজমান ও তুহিন ফরাজি প্রমুখ।