‘একমাত্র সন্তান হওয়ায় মা আমাকে পড়াশুনা করিয়েছেন’
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২২, ১০:৪৯ PM , আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২২, ১০:৪৯ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স পাস করে এখন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন সিলেটের চা শ্রমিক বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সন্তোষ রবিদাস অঞ্জন। মাত্র ছয় মাস বয়সে বাবাকে হারান তিনি। জীবন শুরু হতে না হতে বাবাকে হারালেও অঞ্জন তার মায়ের অদম্য ইচ্ছায় এ পর্যন্ত এসেছেন।
অঞ্জনের বাড়ি মৌলভীবাজারের শমসেরনগরে। তিনি জানান, সব চা বাগান মিলিয়ে তার মত উচ্চশিক্ষিত হাতে গোনা কয়েকজন পাওয়া যাবে। প্রায় সবাই সর্বোচ্চ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনার পর আর করতে পারেন না।
দেশের চা শ্রমিকেরা মজুরি বাড়ানোর দাবিতে বাগানে লাগাতার ধর্মঘট করছেন। কিন্তু মালিকপক্ষ দাবি অনুযায়ী মজুরি না বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অনঢ়। ফলে চা শিল্পে একটি অচলবস্থা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে একে একে সামনে উঠে আসছে তাদের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র।
চা বাগানগুলোতে ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এ শ্রেণির চা বাগানেই দিনে সর্বোচ্চ মজুরি ১২০ টাকা। শ্রমিকেরা এখন দিনে ৩০০ টাকা মজুরি চাচ্ছেন। প্রতি দুই বছর পর পর তাদের মজুরি বাড়ানোর কথা থাকলেও ২০১৮ সালের পর আর মজুরি বাড়ানো হয়নি।
আরও পড়ুন: চাকরি পাচ্ছেন সেই ঢাবি ছাত্র সন্তোষ, সুখের আশায় চা শ্রমিক মা
মজুরির বাইরে শ্রমিকেরা সপ্তাহে তিন কেজি আটা পান, দুই টাকা কেজি দরে। এছাড়া তাদের চিকিৎসা ও আবাসন সুবিধা দেয়ার কথা। একইসঙ্গে সন্তানদের শিক্ষা সুবিধা থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন।
ঢাবি থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করা অঞ্জন বলেন, আমি একমাত্র সন্তান হওয়ায় আমার মা খেয়ে না খেয়ে এনজিওর লোন নিয়ে আমাকে পড়াশুনা করিয়েছেন। আর কলেজ ওঠার পর থেকে নিজে টিউশনি করিয়েছি। কিন্তু যাদের সন্তান বেশি তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। একজনকে পড়ালে অন্য সন্তানদের পড়ানো সম্ভব হয় না।
এদিকে, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করার আন্দোলনের জেরে মাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন পোস্ট লিখেছেন অঞ্জন। মুহূর্তেই ভাইরাল হয় তার সেই স্ট্যাটাস। বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনেরও। পরে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাতউদ্দিন তার জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থার কথা জানান।
অঞ্জন বলেন, জন্মের পর থেকেই দেখেছি মায়ের নিরন্তর সংগ্রাম। এখনো দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতে সকাল-সন্ধ্যা খাটতে হয় মাকে। এত কষ্টের পরও মা আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। চাকরি হলে আমাদের কষ্টের কথা তুলে ধরার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।