শিক্ষকতা ছেড়ে পুলিশ, বাদ পড়ে সাহেদী হাসান এখন পুরোপুরি নিঃস্ব
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২০ PM , আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৫৭ PM
মো. সাহেদী হাসান। ৪০তম ক্যাডেট ব্যাচের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাব–ইন্সপেক্টর (এসআই)। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে যোগদান করেছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের ৪০তম ক্যাডেট এসআই-২০২৩ ব্যাচের প্রশিক্ষণে। দীর্ঘ এক বছর প্রশিক্ষণ করার পর চাকরিতে যোগদানের কিছুদিন পূর্বে ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গের’ অভিযোগে তাকে অব্যাহতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সাহেদী হাসানের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলায়। বাবা মো. লিয়াকত আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (অব.) শিক্ষক। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সাহেদী হাসানের অবস্থান দ্বিতীয়।
মা-বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে পুলিশ অফিসার বানাবেন। বাবা-মায়ের ইচ্ছা পূরণে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন সাহেদী। কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফলে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের ৪০তম ক্যাডেট এসআই-২০২৩ এর চূড়ান্ত পরীক্ষায়। এর আগে, ২০২২ সালে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগদান করেন তিনি।
এসআই পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর শিক্ষকতা ছেড়ে ২০২৩ সালের নভেম্বরের ৪ তারিখ রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে ১ বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য যোগদান করেন তিনি।
প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে সাহেদী বলেন, 'প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলত প্রশিক্ষণের বিভিন্ন কার্যক্রম। পায়ে ৩-৪ কেজি ওজনের বুট আর হাতে ৫-৭ কেজি ওজনের রাইফেল নিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১২ কিলোমিটার দৌঁড়াতাম। প্রথম তিন মাস কাটে সীমাহীন কষ্টে। এমন কোনো দিন নেই, যেদিন পায়ের ব্যথায় কান্না করি নি। শীতকালে ৫-৬ ডিগ্রি আর গ্রীষ্মকালে ৪৩+ ডিগ্রি তাপমাত্রা, কত কষ্ট সহ্য করলাম। তারপরও পরিবারের কথা ভেবে মাটি কামরে পড়ে ছিলাম।'
এক বছর ট্রেনিং করে পোস্টিং পাওয়ার আগ মুহূর্তে ‘নাস্তা না করার অযুহাতে’ ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর ১ম দফায় আমিসহ ২৫২ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। চার দফায় মোট ৩২১ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, সারদার ১১২ বছরের ইতিহসে একসঙ্গে এতজন এসআইকে এর আগে কখনো অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। আমাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ছিল ভিত্তিহীন।
তিনি উল্লেখ করেন, 'এর আগে ২০২৪ সালের ১৮ অক্টোবর আমাদেরকে ৫ দিনের ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়, ২১ তারিখ অব্যাহতি দেওয়া হয়। আর ২৯ তারিখ একাডেমি থেকে ক্লিয়ারেন্স আনতে বলা হয়। বাবা-মা এক বছর আগে খুশিতে কান্না করেছিল। আর এদিন কান্না করেছে আমার এক বছরের সীমাহীন কষ্ট সহ্য করার পরও আমার সাথে অবিচার হওয়ায়।'
তিনি আরো বলেন, 'একটা বছর বেতন তো পাইনি, উলটো বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে, সীমাহীন কষ্ট ভোগ করে প্রশিক্ষণ শেষ করলাম। অথচ প্রাইমারির চাকরিটা না ছাড়লে আর পুলিশের প্রশিক্ষণে যোগদান না করলে পরিবারের হাল ধরতে পারতাম। সাথে ভাইভাগুলো দিতে পারলে ভালো কিছু হতেও পারতো। তাহলে জীবনটা আর এমন হতাশা আর অগোছালো হতো না। এখন পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেছি। কত ইচ্ছা ছিল সেলারি পেলে বাবা-মায়ের মেডিকেল সাপোর্ট, ছোট বোনের পড়াশোনার খরচসসহ সকলের আবদার পূরণ করব। কিন্তু...!’