ক্যাম্পাসে হেঁটে হেঁটে খাবার সরবরাহ করেন ইউআইইউয়ের নিলয়, মাসে আয় লাখ টাকা
- আমান উল্যাহ আলভী
- প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪৩ AM , আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৪, ০৬:২২ PM
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) ক্যাম্পাসে গেলে চোখে পড়বে এক ছাত্রের পায়ে হেঁটে খাবার পৌঁছে দেওয়ার দৃশ্য। তিনি আগে থেকে শিক্ষার্থীদের খাবারের অর্ডার নিয়ে সেটি পায়ে হেঁটে ক্যাম্পাসে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেন। শিক্ষার্থীরা জানান, মধ্যাহ্নভোজে এতোদিন ক্যাম্পাসের ক্যান্টিন আর কিছু টংয়ের দোকান ছিলো তাদের একমাত্র ভরসা। তবে ওই ছাত্রের নতুন এ পদক্ষেপে তাদের খাবারে এখন নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের থেকে খাবারের অর্ডার নিয়ে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ওই শিক্ষার্থীর নাম খালেকুজ্জামান নিলয়। তিনি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। নিজের বিষয় সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান নিয়ে কাজ করার তীব্র ইচ্ছা থেকে খাবার সরবরাহের এমন চিন্তা মাথায় আসে। আর সেখান থেকে যাত্রা শুরু। পেয়েছেন সাফল্যও।
নিলয় বলেন, ২০২০ থেকে ভিন্ন ভিন্ন কাজ করে আয়ের চেষ্টা করছিলাম। এরপর ২০২৩ সালের আগস্টে আমার পায়ে হেঁটে ক্যাম্পাসে খাবার সরবরাহের উদ্যোগ হাতে নিই।
নিলয়ের খাবারের আইটেমগুলোও ভিন্ন ভিন্ন। তিনি বলেন, আমার কাছে রেগুলার মিল সিস্টেমের ব্যবস্থা আছে। সাদা ভাতের সাথে মাছ, মুরগি, লাউ চিংড়ি, মিক্সড সবজি, ডিম ভুনা। আর সাথে থাকে বেগুন ভাজি, শুঁটকি ভর্তা, মাছ ভর্তা, ডিম ভর্তা, মিষ্টি কুমড়ার ভাজি।
তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহের বুধবার বা শুক্রবার কিছু আলাদা করার চেষ্টা করি। যেমন- মোরগ পোলাও, খিচুড়ি, গরুর মাংস, মুরগির তেহারি ইত্যাদি। কাচ্চিও রাখার ইচ্ছে আছে সামনে। মূলত এমনভাবে রান্না করা হয়, যেন মুখের স্বাদটা ঠিক থাকে। একই খাবার যেন প্রতিদিন না খাওয়া লাগে।
আরো পড়ুন: ছুটিতে বাড়ি না গিয়ে ফুড কোর্ট দিলেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্যা
নিলয়ের ইউআইইউতে পড়াশোনা, ইউআইইউতেই ব্যবসা। ক্যাম্পাসে পায়ে হেঁটে তার এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা। তবুও তার এমন যাত্রা খুব একটা মসৃণ ছিল না। তিনি বলেন, সব জায়গাতেই কিছু বাধা থাকে। এটা মেনে নিয়েই কাজ করতে হয়। বাধা ছিল অনেক কঠিনই বলা চলে। তবুও তা শক্ত মনোবলের মাধ্যমে অতিক্রম করেছি।
এক হাজার আয় দিয়ে শুরু করার নিলয়ের ব্যবসা এখন লাখ টাকায় পৌঁছেছে। তিনি বলেন, শুরুতে করেছিলাম প্রতিদিন এক হাজার টাকা বিক্রি দিয়ে। বর্তমানে আমার দিনে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি হয়। আর মাসে এই বিক্রি গিয়ে দাঁড়ায় লাখ টাকার উপরে।
তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকে এখন পর্যন্ত সবাই ভীষণ সাপোর্ট করে যাচ্ছে। কখনো কোনো ধরনের বিরূপ মন্তব্যের শিকার হইনি। এদিক থেকে নিজেকে ভাগ্যবানদের একজন মনে হয়। এ কাজে যেকোনো ধরনের খারাপ সময়ে আমার বন্ধু, বড় ভাই ও কাছের মানুষরা সবচেয়ে বেশি সমর্থন দিচ্ছে।
নিলয়ের বাসায় প্রস্তুত হয় এ খাবার। শুরুর দিকে নিলয়ের মা নিজেই এ খাবার প্রস্তুত করতেন। পরে চাহিদা বাড়ায় এ খাবার রান্নার জন্য শেফ নিয়োগ দেন তিনি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে খালেকুজ্জামান নিলয় বলেন,এই বিষয়ে আরও বড় কিছু করার ইচ্ছে আছে। যা কোনো একটা সমাজে পরিবর্তন এনে দেবে বলে আমার বিশ্বাস। আরও কিছু মানুষ যেন আগ্রহী হয়, তাই প্রবলেম সলভিং নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।