পড়াশোনা চালাতে হয়েছেন নিরাপত্তা কর্মীও, মোত্তালিব এখন বিসিএস ক্যাডার
- জবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৫৩ AM , আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:০৮ PM
জীবনে অনেক সংগ্রাম করে নিজের পড়াশুনা চালিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী এম এ মোত্তালিব মিহির। টিউশনি, প্রুফ রিডার এমনকি নিরাপত্তা কর্মীর চাকরি করেও পড়ালেখার খরচ চালিয়েছেন তিনি। শত বাধা এবং কোনও সীমাবদ্ধতাই দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে।
মোত্তালিব নিজের অদম্য চেষ্টায় সব সীমাবদ্ধতা জয় করেছেন। সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে। বগুড়ার শিবগঞ্জের বর্গাচাষী মহাবুল ইসলাম ও জামিলা বিবির সন্তান এম এ মোত্তালিব মিহির। গ্রামে বর্গাচাষী বাবা আর গৃহিণী মায়ের একমাত্র স্বপ্ন ছিল তাদের সন্তান একদিন সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছাবে। আর্থিক দুরবস্থার কারণে এক সময় চাচার বাড়িতে থাকতে হয়েছে মোত্তালিবকে।
পরিবার থেকে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ায় কিছুদিন পড়াশোনাও বন্ধ ছিল। তবে থেমে যাননি মোত্তালিব। শত বাধা জয় করা মোত্তালিব বলেন, ‘জীবনে দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করে আল্লাহর অশেষ রহমতে আজকে আমি ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। আশা করি, নিজের ওপর অর্পিত সব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে দেশের মানুষের সেবা দিতে পারব।’
তবে এ পর্যন্ত আসার পথটা কখনোই মসৃণ ছিল না। গ্রামের স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে কলেজে ভর্তি হলে আর্থিক টানাপড়েনে পড়তে হয় পুরো পরিবারকে। ফলে কলেজের পড়াশোনাও কিছুদিন বন্ধ ছিল। তাই স্থানীয় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরিও নিতে হয়েছিল তাকে। একদিকে চাকরি অপর দিকে পড়াশোনা।
মোত্তালিব বলেন, ‘এইচএসসি পড়াশোনা শেষে ২০১২ সালে ঢাকায় এসে আর্থিক অভাবের অনটনের জন্য আবারও পড়াশোনা ছেড়ে দিই। একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি নেই। প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা ডিউটি করতাম। সারাদিন গেটে বসে থাকতে হতো। সময় কাটতো না। তাই মাঝে মাঝে বই পড়তাম। একদিন ছুটি নিয়ে আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা করি। সে ঢাকায় এসেছিল কোচিং করে অ্যাডমিশন দেবে।’
তিনি বলেন, ‘তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সম্পর্কে জেনে পড়াশোনার উদ্দীপনা আবার জাগে। নিরাপত্তা কর্মী চাকরির বেতন হতে কিছু টাকা জমিয়ে ভর্তি হই একটি কোচিংয়ে। এভাবে চাকরির পাশাপাশি কোচিং করে ২০১৩ সালে ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই। সিকিউরিটি চাকরিটি ছেড়ে দিলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে, এ ভয়ে ঢাকাতেই থেকে যাই। ভর্তি হই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।’
আরো পড়ুন: স্ত্রীর প্রথম স্বামীর শেষ বিসিএস— একসঙ্গে ক্যাডার হলেন দু’জন
এরপরই শুরু হয় নতুন এক সংগ্রাম। প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা ডিউটি করে কলাবাগান থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে ক্লাস করতে হতো। ভাড়া বাঁচানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে যাতায়াত করতেন। একদিন ক্যাম্পাস থেকে ফেরার সময় স্টুডেন্ট ভাড়া ছয় টাকা না থাকার কারণে সদরঘাট থেকে কলাবাগান পর্যন্ত হেটে আসতে হয়। এভাবে কখনো নিরাপত্তা কর্মীর চাকরি কখনো বা টিউশনি করে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে হয়েছে মোত্তালিবকে।
তিনি বলেন, ‘শত বাঁধা পেরিয়ে আমাকে এ পর্যন্ত আসতে হয়েছে। তবে কখনো হাল ছাড়িনি। আমি এমন একটা গ্রাম থেকে উঠে এসেছি, যেখানে ছেলে-মেয়েদের নাম দস্তখত শেখার পরে স্বপ্নই থাকতো বিদেশ চলে যাবে। এরকম একটা পরিবেশে আমি স্বপ্ন দেখতাম আমি একদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করব। তবে কখনো ভাবিনি যে, বিসিএসর মতো এতো তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ একটা পরীক্ষা দিয়ে দেশের প্রথম শ্রেণির একটা চাকরি করব।’
ভবিষ্যতে যারা বিসিএস পরীক্ষা দিবে তাদের উদ্দেশ্যে মোত্তালিব বলেন, বিসিএস ক্যাডার হওয়া যতটা না কষ্টের, তার থেকে বেশি কষ্টসাধ্য কাজ হচ্ছে লেগে থাকা। তাই ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত লেগে থাকলে একদিন সফলতা আসবেই।