বাংলাদেশের এগারো জনের বিশ্বকাপ দলে এগারো সমস্যা

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল  © সংগৃহীত

বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল গত ১৫ বছরে ছয়টি বিশ্বকাপের মূলপর্বে মাত্র একটি ম্যাচে জয় পেয়েছে। চলতি বছর দলটি ১৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে খেলে ১১টিতেই হেরেছে। জয় যে চারটিতে পেয়েছে তারা কেউই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের ওপরের দল নয়।

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়, যে দেশে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কখনোই কোনও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেনি।

বিশ্বকাপের সেরা আট দল বাছাইয়ের সময় বাংলাদেশ র‍্যাংকিংয়ে আট নম্বরে থাকায় সরাসরি সুপার টুয়েলভ পর্বে খেলবে দলটি। বাংলাদেশের গ্রুপে আছে ভারত-পাকিস্তানের মতো দল, এছাড়া আছে দক্ষিণ আফ্রিকা, যাদের শক্তিশালী ফাস্ট বোলিং লাইন আপ আছে।

বাংলাদেশ দল এখন যে অবস্থায় আছে তাতে করে শক্তিমত্তার জায়গা খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। একাদশে এগারোটি জায়গায় এগারোটি সমস্যা নিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। এসব সমস্যার সমাধান বের করতে পারলেই একমাত্র ভালো কিছু আশা করতে পারে দলটির সমর্থকরা।

লিটন দাসের ইনজুরি

বাংলাদেশ দলের এখন সেরা ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস। তিন ফরম্যাটেই নিয়মিত রান করছেন তিনি। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় ক্রিকেট সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ম্যাচে ৪২ বলে ৬৯ রানের একটি ইনিংস খেলার সময় তিনি হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান। ইনিংসের মধ্যেই পায়ের ব্যথা কমানোর চেষ্টা করা হয়। সেই ব্যথার রেশ এখনও রয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে বলা হচ্ছে তিনি পর্যবেক্ষণে আছেন।

নাজমুল হোসেন শান্ত'র স্ট্রাইক রেট

নাজমুল হোসেন শান্ত, বাংলাদেশের আরেক টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। এখন পর্যন্ত ১২টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নেমে তিনি ১০৩ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করছেন। যা অন্য দলগুলোর ওপেনারদের তুলনায় অনেক কম। পাকিস্তানের বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান গড়ে ১৩০ রেটে ব্যাট করেও সমালোচনা শুনছেন এখন।

অন্যদের ব্যর্থতায় দলে ফিরেছেন সৌম্য

গত কয়েক মাসে একাদশে নানা সমন্বয় ও নানা ধরনের জুটি চেষ্টা করে দলে আবারো নেয়া হয়েছে সৌম্য সরকারকে। সৌম্য সরকার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সেরা পাঁচ রান সংগ্রাহকদের একজন।

কিন্তু সমস্যার জায়গা হলো তিনি পারফর্ম করে দলে ঢোকেননি। বরং অন্যদের ব্যর্থতা সৌম্যকে আবারও বাংলাদেশের জাতীয় দলে ফিরিয়ে এনেছে, যা আসলে ভালো চর্চ্চা না কোনও দলের জন্যই। তবে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে নিয়ে আশাবাদী।

সৌম্য গতিময় উইকেটে ভালো ব্যাট করেন। তার স্লো মিডিয়াম পেস বলও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে উপকারে আসতে পারে।

সাকিব আল হাসান হঠাৎ বল হাতে ফর্ম হারিয়েছেন

সাকিব আল হাসান, তিনি বাংলাদেশের সমস্যা জর্জরিত এই দলটির অধিনায়ক। মাঠে ও মাঠের বাইরে আলোচিত সমালোচিত এই ক্রিকেটার মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজে ব্যাট হাতে রান পেয়েছেন এটা একটা স্বস্তির বিষয় হবে বাংলাদেশের জন্য। তিন ম্যাচে ৫১ গড় ও ১৫০ স্ট্রাইক রেটে ১৫৪ রান তুলেছেন সাকিব।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের ক্রিকেটে কি যেন নেই

কিন্তু বল হাতে সাকিবের ফর্মটা উদ্বেগের কারণ। এই মাসেই টি-টোয়েন্টি সিরিজে তিন ম্যাচ খেলে ১০ ওভার বল করেছেন, রান দিয়েছেন ৯১, কোনও উইকেট নিতে পারেননি। তবে সাকিবের অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বিগ ব্যাশ টি-টোয়েন্টি লিগে পারফর্ম করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। মেলবোর্ন রেনেগেডস ও অ্যাডেলেইড স্ট্রাইকার্সের হয়ে বিগ ব্যাশে খেলেছিলেন সাকিব।

লোয়ার মিডল অর্ডারের চার ব্যাটসম্যানের ফর্ম

ঠিক বিশ্বকাপ শুরুর আগে মিডল অর্ডার ও লোয়ার মিডল অর্ডারে নিজেদের ফর্ম খুঁজে পাচ্ছেন না ব্যাটসম্যানরা। চলতি বছরে টি-টোয়েন্টি ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের খারাপ পারফরমেন্স নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে সবার আগে চোখে লাগে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ব্যর্থতা। তবে এখন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে লোয়ার মিডল অর্ডার নিয়েও।

পাঁচ, ছয় ও সাত- এসব পজিশনে কখনো আফিফ হোসেন বা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত কিছু ভালো ইনিংস খেলে দলকে মোটামুটি অবস্থানে নিয়ে যেতেন। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে একমাত্র ইয়াসির আলীর ২১ বলে ৪২ রানের একটি ইনিংস বাদে লোয়ার অর্ডার থেকে তেমন ভূমিকা দেখা যায়নি।

আফিফ ১০১ স্ট্রাইক রেটে চার ম্যাচে ৬৪ রান করেছেন। আর নুরুল হাসান সোহান করেছেন ৪ ম্যাচে ৩৭ রান। অন্যদিকে, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৩ ম্যাচে মাঠে নেমে মাত্র ১১ রান করেছেন।

ফাস্ট বোলাররা বিশ্বমানের নন

ফাস্ট বোলাররা এখনও আশা দেখানোর মতো কিছু করে দেখাননি সম্প্রতি। তাসকিন আহমেদ এই দলটির ফাস্ট বোলিং আক্রমণের নেতা। তিনি সাম্প্রতিক সিরিজে ৩ ম্যাচে পেয়েছেন মাত্র দুই উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাসকিনের প্রতি বাড়তি প্রত্যাশা থাকবে।

শেষবার ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে তাসকিন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার সাথে জুটি গড়ে বল করেছিলেন। তখন তাসকিন ছিলেন তরুণ সেনসেশন। মুস্তাফিজুর রহমান এক ম্যাচ খেলে ৪ ওভারে ৪৮ রান দিয়েছেন।

গত এক বছরে টি-টোয়েন্টি বোলার হিসেবে মুস্তাফিজের অবনতি হয়েছে। তিনি প্রায় নয় করে রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি। পনের ম্যাচে মুস্তাফিজ উইকেট নিয়েছেন ১০টি। তরুণ ফাস্ট বোলার হাসান মাহমুদ ৪টি উইকেট নিয়েছেন, কিন্তু ইকোনমি রেট ছিল প্রায় আটের কাছাকাছি। তবে পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশের স্পিনার নাসুম আহমেদ কার্যকরী হতে পারেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী গ্যাবায় ফাস্ট বোলাররা বেশ ভুগেছে, যেখানে বাংলাদেশের দুটি ম্যাচ আছে। গত এক বছরে, ফাস্ট বোলাররা প্রতি ওভারে প্রায় নয় রান করে দিয়েছেন।

স্পিনাররা দিয়েছেন ওভারপ্রতি সাতের মতো। পরিসংখ্যানে স্পষ্ট যে স্পিন বোলাররা এই ধরনের উইকেটে সুবিধা পেয়ে আসছেন। এই উইকেটে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের সাথে নাসুম আহমেদকেও কাজে লাগাতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। ফিঙ্গার স্পিনার হিসেবে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ব্যাটিংয়ে ক্রিকেটের শীর্ষ দলগুলোর মধ্যে টি-টোয়েন্টির শেষ চার ওভারে বাংলাদেশের রান রেট সর্বনিম্ন।

ইসপিএনক্রিকইনফোর একটি বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে, বাংলাদেশ এই বছর শেষ তিন ওভারে ১৫টি ছক্কা মেরেছে। যেখানে ভারত মেরেছে ৫১টি, জিম্বাবুয়ে ২৫টি।

গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভে পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিতেই ভালো ব্যবধানে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে সমর্থকদের অনেকের মধ্যেই কোনও আশাবাদ দেখা যাচ্ছে না, তবুও মাঠের খেলায় ভালো কিছু দেখার প্রত্যাশায় অনেকেই টেলিভিশনের সামনে বসবেন। [সূত্র: বিবিসি বাংলা]


সর্বশেষ সংবাদ