শ্রমিক সঙ্কট, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেটে দিল কৃষকের ধান

তিন দিনের কর্মসূচিতে কৃষকের জমির ধান কেটে দেয় স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা
তিন দিনের কর্মসূচিতে কৃষকের জমির ধান কেটে দেয় স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা  © সংগৃহীত

এলাকায় ধান কাটা শ্রমিক সঙ্কট হওয়ায় কৃষকের ধান বাঁচাতে নড়াইলের শেখহাটি ইউনিয়নের গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী মিলে জমি ধান কেটে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্তাপন করেছেন ।

শ্রমিক সঙ্কট, তার ওপর টানা বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে যাচ্ছিল। জমিতেই ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষক ও কর্মচারীরা কৃষকদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। গতকাল রোববার দুপুরে তিন দিনব্যাপী ধান কাটা উৎসব শেষ হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার সকাল থেকে মাঠে নেমে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছুটির তিন দিনে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে তাঁরা ১২ জন কৃষকের ১৫ বিঘা জমির ধান কেটে দিয়েছেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগের প্রশংসায় পঞ্চমুখ এলাকার সর্বস্তরের মানুষ।

নড়াইলের গুয়াখোলা গ্রামের মোহন বিশ্বাস বলেন, আমাদের এলাকায় বর্তমানে ধান কাটা শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তিন বেলা খাবারসহ জনপ্রতি শ্রমিকের মূল্য গুনতে হচ্ছে এক হাজার টাকা। তাও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। গুয়াখোলা স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে আমার ৬০ শতক জমির ধান প্রায় ১০ মিনিটে কেটে দিয়েছেন। এ দুর্যোগের সময় তাঁদের পাশে পেয়ে আমি ভীষণ খুশি।

এ বিষয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষজন বলেন, গুয়াখোলা স্কুলের ছেলেমেয়েরা যে উদ্যোগ নিয়ে আমাদের ধান কেটে দিচ্ছে, তাতে আমদের অনেক উপকার হয়েছে। 

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিপুল দেব বলে, শ্রমিক সংকটকালে আমাদের বিদ্যালয়ের ৩১৫ জন শিক্ষার্থী মাঠে নেমে ধান কেটে দিয়েছি। ‘ঘূর্ণিঝড় অশনি’র কারণে কৃষকদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ফসল তুলতে আমরা কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, বোরো ধানের ভরা মৌসুমে বর্তমানে শ্রমিক সংকট চলছে। পাশাপাশি ‘ঘূর্ণিঝড় অশনি’র প্রভাবে গত ৩-৪ দিন ধরে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে পানি জমে অনেক ধানখেত নষ্ট হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে এলাকার গরিব কৃষকের গত শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি, শনিবার সংরক্ষিত ছুটি ও রোববার বৌদ্ধপূর্ণিমার ছুটি মিলে তিন দিন ধান কাটা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ তিন দিনে অন্তত ২০ জন কৃষকের প্রায় ১৫ বিঘা জমির ধান বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। 

এলাকাবাসীরা বলছেন, গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পুথিগত বিদ্যার পাশাপাশি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার যে শিক্ষা তাঁদের শিক্ষার্থীদের দিতে সক্ষম হয়েছেন, তার গুরুত্ব অপরিসীম। যে শিক্ষা মানুষের মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটায় না, দেশপ্রেম শেখায় না, সে শিক্ষা কখনো আদর্শ শিক্ষা হতে পারে না। 


সর্বশেষ সংবাদ