ফি পরিশোধ না করলে অনলাইনেই বহিষ্কারের হুমকি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২০, ০৮:৪৪ AM , আপডেট: ১৯ জুন ২০২০, ০৯:০৪ AM
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি আদায় করতে কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ না করতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রতি নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে সেটি উপেক্ষা করেই রাজধানীর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান টিউশন ফি আদায়ে নানা কৌশল অবলম্বন করছে।
শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখানো, পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত না করা, শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বলা এমনকি অভিভাবকদের মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে টিউশন আদায়ে অনেকটা বাধ্য করা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বলছেন, টিউশন ফি আদায় করতে না পারলে শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া যাবতীয় উন্নয়নমূলক কাজও বন্ধ হয়েছে। অন্যদিকে করোনার এই সময়ে টিউশন ফি আদায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাপ অভিভাবকদের কাছে অনেকটা মরার উপর ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মণিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বাংলা মাধ্যমের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি আদায়ে চাপ সৃষ্টি করছে। এছাড়া ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডিপিএস এসটিএস (দিল্লি পাবলিক) ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশন ফি আদায়ে অভিভাবকদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মণিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করে দিতে স্কুল থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান থেকে শ্রেণি শিক্ষকদের মোবাইলে এ সংক্রান্ত খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে। অভিভাবকদের সেটি পাঠিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধে চাপ দিতে শিক্ষকদের বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভিভাবক ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু গণমাধ্যমকে বলেন, কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানা ফন্দি করে টিউশন ফি আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্কুল বন্ধ অথচ শিক্ষার্থীদের বেতন আদায়ে অভিভাবকদের নানাভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে।
মতিঝিল আইডিয়ালে ২৬ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তিন মাসের অগ্রিম বেতন আদায় করা হয়। প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা স্কুল ফান্ডে জমা হয়। অথচ করোনা মহামারি পরিস্থিতিতেও অভিভাবকদের কাছে ফোন করে টিউশন ফি আদায়ে শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
টিউশন ফি আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, করোনার কারণে অনেক শিক্ষার্থী চার থেকে পাঁচ মাসের বেতন পরিশোধ করেননি। এ কারণে বকেয়া বেতন পরিশোধে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। টিউশন ফি আদায় না করলে শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করা যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানের সব উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে শ্রেণি শিক্ষকদের মাধ্যমে অভিভাবকদের মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
টিউশন ফি পরিশোধ না করলে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস থেকে রিমুভ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ ডিপিএস এসটিএস (দিল্লি পাবলিক) স্কুলের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বকেয়া বেতন পরিশোধে গত ১৪ জুন পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। যারা অর্থ পরিশোধ করবে তাদের অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করা হবে, অন্যদের নাম কেটে দেয়া হবে। এছাড়া পরবর্তী ক্লাসে তাদের উন্নীত করা হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিল্লি পাবলিক স্কুলের অভিভাবক ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। সব অভিভাবক সমস্যায় আছেন, এটি বলব না। তবে যাদের সমস্যা আছে তাদের ওপর তো চাপ দেয়া যাবে না। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান উভয়েই উভয়ের পরিপূরক মনে করে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনার এমন পরিস্থিতিতে সহনীয় ও মানবিক আচরণ করবে— এমন দাবি আমরা করতেই পারি।