উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ

বোর্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা, শিক্ষিকার বকেয়া পরিশোধে গড়িমসি কর্তৃপক্ষের

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ  © সম্পাদিত

আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে বোর্ডের নির্দেশনা থাকলেও রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের এক শিক্ষিকাকে তার পদ এবং তার পাওনা বকেয়া বুঝিয়ে দিতে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ইংরেজি মাধ্যমের প্রভাতি শাখার সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান নাজমা হোসেন লাকীকে তার পদে যোগদানের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করছে—তার পাওনা সকল বেতন-ভাতাদি বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও।

এর আগে বিদ্যালয়ের নানা-অনিয়ম নিয়ে কথা বলার অপরাধে তাকে বরখাস্ত করে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। তখন তিনি বিদ্যালয়টির প্রভাতি শাখার ইংরেজি মাধ্যমের শাখা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ ঘটনায় ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এবং দেশের উচ্চ আদালতে যান ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা। পরবর্তীতে তাঁকে স্বপদে বহালের পাশাপাশি বরখাস্ত থাকাকালীন সময়ের সকল বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধাদি বুঝিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন আদালত।

এরপর আদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে, নাজমা হোসেন লাকীকে স্বপদে বহাল এবং সকল সুযোগ-সুবিধা বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর উইলস লিটলকে একটি চিঠি দেওয়া হয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে। এরপর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা জারি করে নাজমা হোসেন লাকীকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদানের কথা জানানো হলেও পূর্বের পদে বহালের বিষয়ে কোনো সহায়তা করা হয়নি।

আরও পড়ুন: ‘এমপিও বাণিজ্য’সহ নানা অনিয়ম বন্ধ চান মতিঝিল মডেলের শিক্ষকরা

ফলে পূর্বে রাজধানীর নামি এ শিক্ষালয়ের ইংরেজি মাধ্যমের শাখা প্রধানের দায়িত্ব পালন করলেও তিনি তার পদে ফেরত যেতে পারছেন না। এছাড়াও তার বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অর্থ তিনভাগে পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রথম অংশ সম্পন্ন করার পর বাকী অর্থ ছাড়ে আলসেমি করছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই শিক্ষকের সকল সুযোগ-সুবিধা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং অর্থ পর্যায়ক্রমে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

উইলস লিটল কর্তৃপক্ষ বলছে, নাজমা হোসেন লাকীকে আদালত এবং বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে সহকারী শিক্ষকের পদে পুনর্বহাল করা হয়েছে জানিয়ে তারা বলছেন, এখানে স্বপদ বলতে তার ‘সহকারী শিক্ষক’ হিসেবে পূর্বে পালনকৃত দায়িত্বে কথা বলা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে বরখাস্ত হওয়ার পূর্বে শাখা প্রধানের দায়িত্ব পালন করলেও সে দায়িত্ব আরেক শিক্ষককে দেওয়া হয়েছে এবং এটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত বলেও জানানো হয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে।

এ নিয়ে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের ইংরেজি মাধ্যমের প্রভাতি শাখার শিক্ষিকা নাজমা হোসেন লাকী বলছেন, আমি কোনো অপরাধ করিনি বিধায় আদালত এবং বোর্ড আমাকে আমার দায়িত্ব এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বুঝিয়ে দিতে বলেছেন। আমাকে বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলেও আমার পূর্বের পালনকৃত শাখা প্রধানের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়াও পাওনা অর্থের এক-তৃতীয়াংশ দেওয়া হলেও বাকী অর্থ পরিশোধ করতে গড়িমসি করছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: শিক্ষক নিয়োগের আগেই অনুমোদন-জালিয়াতি, ২৮ বছর পর মামলা

বিনা কারণে অন্যায়ভাবে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে জানিয়ে এই শিক্ষিকা বলছেন, আমি আমার পূর্বের শাখা প্রধানের দায়িত্ব ফেরত চাই—আদালত যেভাবে বুঝিয়ে দিতে বলেছেন। এছাড়াও আমার বাকী অর্থ আমি দ্রুত ফেরত চাই। 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হয় উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আ ন ম সামশুল আলম খানের কাছে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, আমরা বোর্ডের সাথে কথা বলে তাকে তার স্বপদ ‘সহকারী শিক্ষক’ হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। এছাড়াও তার পাওনা অর্থের প্রথম ভাগ পরিশোধ করা হয়েছে এবং বাকী অর্থও পরিশোধ করা হবে। তাকে শাখা প্রধানের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি বোর্ড এবং আদালতের নির্দেশনায় নেই বলেও জানান তিনি।

আর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের অ্যাড-হক কমিটির চেয়ারম্যান ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামানিক বলছেন, নির্দেশনায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে ওই শিক্ষিকাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। শাখা প্রধানের দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়। একজন শিক্ষক ইতোমধ্যে দায়িত্ব পালন করছেন। ‘সহকারী শিক্ষক’ হিসেবে স্বপদে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে—শাখা প্রধান হিসেবে নয়।

আরও পড়ুন: ৪০৬ কোটি ব্যয়ে মাধ্যমিকের সোয়া ৪ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেবে মাউশি

ভুক্তভোগী শিক্ষিকার পাওনা অর্থের একটি অংশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে অ্যাড-হক কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, তার পাওনা অর্থের দ্বিতীয় অংশ এ মাসের মধ্যে এবং এর এক-দেড়মাসের মধ্যে অবশিষ্ট বাকী অর্থাৎ তৃতীয় এবং শেষ অংশে সম্পূর্ণ অর্থ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেও ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার এবং একই প্রতিষ্ঠানের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ