মেয়ের সঙ্গে ৯ম শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষা দিলেন মা

  © সংগৃহীত

৩৫ বছর বয়সে মেয়ের সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন নবম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন শেফালী আক্তার। শেফালী আক্তার টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার ভুয়াইদ টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড বিএম কলেজের ছাত্রী। তার মেয়ের নাম সাবরিনা। একই প্রতিষ্ঠান থেকে তারা সখীপুরের সূর্য তরুণ শিক্ষাঙ্গন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। 

উপজেলার বড়চওনা বিন্নাখাইরা গ্রামের মৃত আব্দুস সবুর মিয়ার স্ত্রী শেফালী আক্তার। তার ছোট ছেলে সামিউল ইসলাম তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। জানা যায়, ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় শেফালীর স্বামী মারা যান। বড় মেয়ে সাবরিনা তখন অষ্টম শ্রেণিতে উঠার জন্য বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব তার ঘাড়ে চাপে। মেয়েকে বিদ্যালয়ে ও শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়াতেও তাকে সঙ্গে যেতে হয়। 

এসময় তিনি ভাবলেন, মেয়ের সঙ্গে যেহেতু তাকে স্কুলে যেতেই হয়। তাহলে তিনিও স্কুলে ভর্তি হবেন। এমন চিন্তা থেকেই তিনি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মেয়ের সঙ্গে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। বিরোধীদলের অবরোধ কর্মসূচির কারণে ১ নভেম্বর সারা দেশে পরীক্ষা শুরু হতে পারেনি। মঙ্গলবার ছিল গণিত পরীক্ষা। ১ নভেম্বরের বাংলা পরীক্ষা আগামী শনিবার অনুষ্ঠিত হবে।

শেফালী আক্তার বলেন, ‘পড়াশোনার প্রতি আমার আগ্রহ থাকলেও অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আমার বিয়ে হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী মারা যাওয়ার পর মেয়েকে বিদ্যালয়ে ও প্রাইভেট পড়াতে আমাকেই সঙ্গে যেতে হয়। পরে চিন্তা করি মেয়ের সঙ্গে আমিও পড়াশোনা করব। পরে নবম শ্রেণিতে মেয়ের সঙ্গে আমিও ভর্তি হই। ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মেহেদী হাসান আমাকে পড়ার জন্য উৎসাহ দেন। একই কেন্দ্রে ও একই কক্ষে মেয়ের পেছনের বেঞ্চে বসে  আমি পরীক্ষা দিচ্ছি। মেয়ের চেয়েও আমার পরীক্ষা ভালো হয়েছে।

পড়ালেখা করে অনেক দূরে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ শেফালী আক্তারের। তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেয়ার ইচ্ছা আছে। যাতে সমাজে আর দশজনের মতো করে নিজেকে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পারি। আমি বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে সময় মতো পড়তে পারেনি। আমার মেয়েকে মাস্টার্স পাস করিয়ে বিয়ে দেব।

মায়ের পড়ালেখার প্রতি এমন আগ্রহের বিষয়ে মেয়ে সাবরিনা আক্তার বলেন, ‘ভাবতে খুব ভালো লাগছে, আমরা মা-মেয়ে একই সঙ্গে এসএসসি ভোকেশনাল নবম শ্রেণি ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছি। এমন সুযোগ আর কয়জনার ভাগ্যে আসে। মা শুধু আমার মা-ই নন, তিনি ভালো একজন বান্ধবী।

উপজেলার ভুয়াইদ টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মেহেদী হাসান বলেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে লেখাপড়ায় বয়স কোনো বাধা নয়। শেফালী আক্তারের এমন উদ্যোগ অনেককে অনুপ্রাণিত করবে। দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে সমাজে। আমরা ওই মা-মেয়ের সাফল্য কামনা করি।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence