ডান হাতের এক আঙুল দিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে নিপা

এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে নিপা
এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে নিপা  © সংগৃহীত

জন্ম থেকে এক হাতে কোনো আঙুল নেই। আরেকটি হাতে একটি আঙুল। মেয়েটির নাম নিপা আক্তারের (১৬)। এবার শরীয়তপুরের আংগারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। যাদের হাতে সব আঙুল আছে তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কোনো রকম শ্রুতি লেখকের সাহায্য ছাড়াই পরীক্ষা দিচ্ছে এ শিক্ষার্থী। নিপার বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার চরকাশাভোগ গ্রামে। সে বিল্লাল হোসেন মোল্লা ও নাছিমা বেগম দম্পতির মেয়ে। তার স্বপ্ন বড় হয়ে শিক্ষক হওয়া এবং প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানো।

নিপার বাবা বিল্লাল হোসেন মোল্লা স্থানীয় আংগারিয়া বাজারে একটি মুদিদোকানে শ্রমিকের কাজ করেন। নিপারা তিন বোন ও দুই ভাই। অভাবের সংসারে মা–বাবা নিপাকে কষ্ট করেই পড়াশোনা করাচ্ছেন। জন্মের পর তার হাতে নয় আঙুল না থাকলেও থেমে যায়নি তার পড়ালেখা। এক আঙুল দিয়ে চালাতে পারেন মোবাইল ও সংসারের যাবতীয় কাজ। সহযোগিতা করেন মা ও বোনকে। 

নিপা'র পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিপার স্বপ্ন পড়ালেখা করে হবেন একজন আদর্শ শিক্ষক। ভালো পড়ালেখা করে দাঁড়াতে চান প্রতিবন্ধীদের পাশে। এজন্য যত প্রতিবন্ধকতা আসুক সব উতরে যেতে চান লক্ষে। দেখিয়ে দিতে চান ইচ্ছের কাছে বাধা নয় শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। 

পরীক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন নিয়ম অনুযায়ী সব সুবিধা পাচ্ছে নিপা। এবারও সে ভালো ফল করবে বলে আসা তাদের। সে পিএসসি ও জেএসসিতেও ভালো রেজাল্ট করেছে।

এসএসসি পরীক্ষার্থী নিপা আক্তার বলেন, প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার হাতে নয়টি আঙুল নেই, একটি আঙুল আছে। একটি আঙুল দিয়ে আমি ছোট বেলা থেকে পড়াশোনা করছি। আপনারা দোয়া করবেন আমি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় যেন ভালো রেজাল্ট করতে পারি। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই। প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়াতে চাই।

আরও পড়ুন: পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন কলি

নিপার মা নাছিমা বেগম বলেন, ‘নিপার পড়ালেখা করার অনেক আগ্রহ। তাকে আমরা পড়াতে চাই। ওর নামে একটা প্রতিবন্ধী ভাতা আছে।’ নিপার বাবা বিল্লাল হোসেন মোল্লা শত কষ্টের মধ্যেও মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে আগ্রহী।

আংগারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রনজিত কুমার সাহা বলেন, নিপার বাম হাত নেই এবং ডান হাতে মাত্র একটি আঙুল। নিপা একটি আঙুলের ওপর ভর করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করছি। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে কিন্তু নিপাকে বৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। নিপার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।


সর্বশেষ সংবাদ