খাতা লেখাতেই সীমাবদ্ধ মাধ্যমিকের ব্যবহারিক শিক্ষা 

ব্যবহারিক ক্লাস ও খাতা
ব্যবহারিক ক্লাস ও খাতা   © টিডিসি ফটো

শিক্ষার্থীদের উন্মুক্ত ও বিজ্ঞানমনস্ক করতে তত্ত্বীয় জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক শিক্ষার গুরুত্ব বেশি। কিন্তু দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যবহারিকের হালচাল সম্পূর্ণ বিপরীত। তত্ত্বীয় শিক্ষাকে যতটা গুরুত্ব দেয়া হয় তার সিকি পরিমাণ গুরুত্বও পায় না ব্যবহারিক শিক্ষা। কেবল খাতা লেখাতেই সীমাবদ্ধ মাধ্যমিকের ব্যবহারিক শিক্ষা। ফলে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে বিজ্ঞান শিখতে পারছে না। এই করুণ অবস্থার কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ল্যাব না থাকা, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, শিক্ষক সংকট এবং প্রতিকূল শিক্ষার পরিবশে। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও আগ্রহের ঘাটতি ও অবহেলাকেও দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য মতে, দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ২৯ শতাংশেই কোনো বিজ্ঞানাগার স্থাপন করা হয়নি অর্থাৎ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কোনো বিজ্ঞানাগার নেই। এর মধ্যে অধিকাংশ স্কুলে ল্যাব থাকলেও সেখানে হয় না কোন ক্লাস। এমনও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খোঁজ পাওয়া গেছে যেখানে ৫-১০ বছরেও খোলা হয়নি ল্যাবের তালা। ভেতরের যন্ত্রপাতিতে ধুলাবালি জমে তা নষ্ট হয়ে গেছে। 

আরও পড়ুন: মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে দক্ষতায় ভারত-শ্রীলঙ্কার চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ

খোঁজ নিয়ে জানা যায় দেশের স্বনামধন্য কিছু স্কুল ছাড়া অধিকাংশ স্কুলে ‍নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাস হয় না। জেলা পর্যায়ের শীর্ষ দুয়েকটি স্কুলে কেবল পরীক্ষার আগে ৮-১০টা ক্লাস হয়। যা থেকে শিক্ষার্থীরা হাতে কলমে কোন কিছুই শিখতে পারে না। অনেক স্কুলে আবার ল্যাবে না নিয়েই ক্লাসরুমে ব্যবহারিক ক্লাস করানো হয়। পাঠ্য পুস্তকে যে বিষয়ে পড়ানো হয় সেগুলো হাতে কলমে শিখানোর জন্য ল্যাবে ব্যবহারিক ক্লাসের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু দেশের মাধ্যমিকের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যবহারিক শিক্ষা কেবল গাইড দেখে দেখে খাতা লিখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এ ব্যাপারে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড (মাউশি), শিক্ষাবোর্ড, স্কুল এবং শিক্ষকসহ সবার আগ্রহের ঘাটতি দেখা যায়। ব্যবহারিক শিক্ষা বাস্তবায়নে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না কাউকেই। সরকার যেখানে কর্মমুখী এবং ব্যবহারিক শিক্ষার প্রতি জোর দিচ্ছে সেখানে মাধ্যমিকের কর্তাব্যক্তিরা এ ব্যাপারে বরাবরই উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছেন। 

বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, বিজ্ঞান শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ স্কুলে নবম শ্রেণীতে তেমন কোন ব্যবহারিক ক্লাস হয় না। দশম শ্রেণীতে কয়েকটি ক্লাস করানো হয়।  

সরকারি কিছু স্কুলে ল্যাব থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। এমপিওভুক্ত স্কুলগুলোতে কিছু যন্ত্রপাতি থাকলেও ল্যাব নেই। আর অধিকাংশ বেসরকারি স্কুলে ল্যাবতো দূরে থাক কোন যন্ত্রপাতিও নেই। মাধ্যমিকের ক্লাস রুটিনে নবম-দশম শ্রেণীতে নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাস করানোর জন্য মাউশির নির্দেশনা থাকলেও এসব স্কুলে দুই বছরে একদিনও ব্যবহারিক ক্লাস হয় না। 

Untitled-1

বেসরকারি স্কুল থেকে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা জানান, নবম-দশম শ্রেণীর ২ বছরে আমাদের কোনদিন ব্যবহারিক ক্লাস করানো হয়নি। আমাদের স্কুলে কোন ল্যাব নেই এবং ব্যবহারিকের জন্য প্রয়োজনীয় একটা যন্ত্রপাতিও নেই। 

তাহলে কিভাবে ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছে সেই প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, আমাদেরকে আগের বছরের ব্যবহারিক খাতা দেওয়া হয়েছে সেগুলা দেখে দেখে লিখেছি। পরীক্ষার সময়ও খাতা দেখে লিখেছি। 

কুমিল্লা বোর্ডের কয়েকজন এসএসসি পরীক্ষার্থী জানান, মৌখিক পরীক্ষার সময় পরীক্ষক আমাদেরকে জিজ্ঞেস করেছেন মৌখিক পরীক্ষা নিলে আমরা খুশি হবো, নাকি না নিলে? আমরা বলেছি না নিলে খুশি হবো। তখন আর মৌখিক পরীক্ষা নেয়নি। আমরা ব্যবহারিক খাতা এবং গাইড থেকে লিখে পরীক্ষা দিয়েছি। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিটিউটের প্রভাষক জেবা ফারহানা ও অধ্যাপক কাজী আফরোজ জাহান ‘বাংলাদেশের মাধ্যমিক স্তরের জীববিজ্ঞানের ব্যবহারিক শিক্ষার বর্তমান অবস্থা’ শীর্ষক একটি গবেষণা করেন।  বাংলাদেশের ৭টি জেলার মোট ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, জীববিজ্ঞান শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মাঝে পরিচালিত জরিপ পদ্ধতিতে এই গবেষণাটি সম্পাদিত হয়। গবেষণায় দেখা যায় যে, বাংলাদেশের মাধ্যমিক স্তরে ২৫ ভাগ শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়ন করেন। কিন্তু অধিকাংশ স্কুলে মান সম্মত শিক্ষকের অভাব রয়েছে । তাই যারা থাকেন তাদের  উপর বেশি চাপ পড়ে এবং তারা ব্যবহারিক শিক্ষারর প্রতি নজর দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এছাড়া বিজ্ঞানাগারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে যন্ত্রপাতি ও পরীক্ষণ উপকরণের স্বল্পতা রয়েছে। 

শতকরা ১৭.৬৫ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ক্লাব আছে। ৪১.১৭% বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয় বা এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিজ্ঞান মেলায় অংশগহণ করে থাকে। প্রায় ১৭.৬৫% বিদ্যালয়ে বাৎসরিক বিজ্ঞান সফর বা বিজ্ঞান বিষয়ক বিতর্ক সভার আয়োজন করা হয়। 

বিজ্ঞান শিক্ষার দুরবস্থার কথা ‘সেভ দ্য চিলড্রেনের’ এক গবেষণায়ও উঠে এসেছে। বেসরকারি এই উন্নয়ন সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত ‘চাইল্ড পার্লামেন্ট’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার না থাকা এবং ব্যবহারিক ক্লাস না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক জ্ঞানের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জরিপের আওতাধীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ৬১.৭ শতাংশ বলেছে, তাদের কোনো ব্যবহারিক ক্লাস হয় না। এ ছাড়া ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী বলছে, বিজ্ঞানাগারের জন্য তাদের অতিরিক্ত ফি পরিশোধ করতে হয়।

করোনার কারণে ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষা নেয়া হয়নি ২০২১ সালে লিখিত পরীক্ষা হলেও ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া হয়নি। ২ বছর পর আবার নেয়া হলো ব্যবহারি পরীক্ষা। তবে বোর্ড থেকে নির্দেশনা না মেনে নিজেদের ইচ্ছামত পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে। এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিষয়ভিত্তিক নির্দেশনা দেয়া হয়।

এতে বলা হয়, জীববিজ্ঞান বিষয়ের দুই ঘণ্টার ব্যবহারিক পরীক্ষায় পূর্ণমান হবে ২৫ নম্বর। লটারির মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের যেকোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এতে পরীক্ষণের নামে ১ নম্বর, উপকরণ বা যন্ত্রপাতি ১ নম্বর, কার্যপদ্ধতি ও প্রদর্শনে ৩ নম্বর, চিত্রাঙ্কনে ৩ নম্বর, চিত্র চিহ্নিতকরণে ২ নম্বর, পর্যবেক্ষণে ২ নম্বর, সিদ্ধান্তে ২ নম্বর এবং সতর্কতায় ১ নম্বর থাকবে। এ ছাড়া উপস্থাপনকৃত পরীক্ষণটির ফল ব্যাখ্যায় ৪ নম্বর, মৌখিক পরীক্ষা ৪ নম্বর এবং ব্যবহারিক খাতা ও শিটে ২ নম্বর থাকবে।

কিন্তু সরজামিনে গিয়ে পরীক্ষক এবং পরীক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব নির্দেশনার কোনটিই মানা হয়নি। যশোর বোর্ডের এক পরীক্ষার্থী জানান, তাদের জীব বিজ্ঞান ব্যবহারিক পরীক্ষা তাত্ত্বিক পরীক্ষার মতই হয়েছে। কেউ মুখস্ত আবার কেউ খাতা অথবা মোবাইল দেখে ১৫ নম্বরের প্রশ্নের উত্তরটি লিখেছে। কোন পরীক্ষন হয়নি এবং পরীক্ষনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানও সংগ্রহ করা হয়নি। মৌখিক পরীক্ষাও নেয়া হয়েছে নাম মাত্র। একটা প্রশ্ন করেছে সেটার উত্তর দেয়ার জন্য ত্রিশ সেকেন্ড ও সময় দেয়নি। 

আরও পড়ুন: মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে হারিয়ে গেছে ৬১ হাজার শিক্ষার্থী

ফরদিপুরের নগরকান্দার গভ. এম এম একাডেমী থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের স্কুলে একদিনও ব্যবহারিক ক্লাস হয়নি। তবে ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় পরীক্ষন হয়েছে। 

ব্যবহারিক ক্লাস হয়নি কিন্তু পরীক্ষায় পরীক্ষন করতে হয়েছে তাহলে কিভাবে করেছে এ প্রশ্নের জবাবে সেই শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যে যেভাবে পেরেছি করেছি। ইউটিউব দেখে কীভাবে পরীক্ষন করতে হয় সেটা শিখেছি। অনেকেই আবার পরীক্ষার হলে অন্যদের দেখাদেখি করেছে। 

শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ অস্বকীর করেছেন ফরিদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার বিষ্ণু পদ ঘোষাল। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার জেলায় ব্যবহারিক ক্লাস করায় না এমন স্কুল নেই। আমরা সব সময় মনিটরিং করি। উপজেলা শিক্ষা অফিসাররাও বিষয়টি তদারকি করেন। আমরা জেলা শিক্ষা অফিসের প্রত্যেক মিটিংয়ে এ বিষয়ে নির্দেশনা, পরামর্শ দিই। যদি কোন স্কুুল এসব নির্দেশনা না মানে, ব্যবহারিক ক্লাস না করায় তাহলে আমরা জানতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করবো। 

প্রতি বছর কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়া একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে মানা হয়নি শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনা। কেবল মাত্র লিখিত এবং মৌখিকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। শিক্ষার্থীদের শিখন যাচাই করার জন্য কোন পরীক্ষন করানো হয়নি। আবার কোন কোন হলে মৌখিকও নেয়া হয়নি। এতে অবশ্য খুশি শিক্ষার্থীরা। 

ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র প্রধান সুব্রত নাথ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি। এই কমিটিতে যারা ছিলো আমি তাদের সাথে কথা বলে খোঁজ নিবো। 

ব্যবহারিক ক্লাস নিয়ে তিনি বলেন, সরকার এটি নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করছে। উদ্যোগ নিয়েছে কিন্তু আমাদের শিক্ষকদের মাঝে আগ্রহ কম। শিক্ষকরা পজিটিভ হলে এ সমস্যা সমাধান হবে। আর আমাদের জনবল সংকট আছে। যেখানে আমাদের ৫২ জন শিক্ষক থাকার কথা সেখানে আছে ৩৬ জন। এর মধ্যে অনেকেই ছুটিতে থাকে, অসুস্থ থাকে। এই সংকটটা কাটাতে পারলে নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাস করানো যাবে। আর এই সমস্যাটা শুধু আমার স্কুলে না প্রত্যেক স্কুলেই একই সমস্যা। নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিলে শিক্ষক সংকট কাটলে এ সমস্যা সমাধান হতে পারে। 

এ সমস্যা সমাধানে ফেনী সিটি গার্লস হাইস্কুলের (বেসরকারি) প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ বলেন, এ ক্ষেত্রে স্কুলগেুলোর অককাঠামোগত দুর্বলতা ও শিক্ষক সংকটের কথা অস্বীকার করা যাবে না। তবে আমি মনে করি ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়ার সময় বোর্ডের নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করলে স্কুলগুলোতে ব্যবহারিকের বিষয়ে জোর দিতো। তাহলে পরীক্ষায় ভালো করার জন্য হলেও নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাস করানো হতো। 

ব্যবহারিক ক্লাসের বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ব্যবহারিক ক্লাস সপ্তাহে কয়দিন, কয়ঘন্টা হবে সেটি মাউশি রুটিন করে ঠিক করে দিয়েছেন। আমরা পরীক্ষার বিষয়টা দেখি। 

অনেক কেন্দ্রে বোর্ডের নির্দেশনা পুরোপুরি না মেনে পরীক্ষা নেয়া হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি আপনার কাছে এমন কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকে তাহলে আমাদেরকে জানাবেন। আমারা সেটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। 

এদিকে পরীক্ষকরা অভিযোগ করেন একসাথে কয়েকশ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা হওয়ার কারণে তারা পরীক্ষার্থীদেরকে ভালো করে যাচাই করার সুযোগ পান না। একদিনে আরও কম সংখ্যক পরীক্ষার্থী অংশ নিলে পরীক্ষার মান বজায় থাকবেন বলে মনে করেন তারা। এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, আমরা তারিখ ঘোষনা করি সেই তারিখ অনুযায়ী কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় এই পরীক্ষা হয়ে থাকে। তারা তাদের ইচ্ছামত শিফট করে পরীক্ষা নেয়। এক শিফটের পরীক্ষা হয় ২ ঘন্টা করে। আর একটা কেন্দ্রে ৫০০-১০০০ এর বেশি পরীক্ষার্থী থাকে না। সেক্ষেত্রে কেন্দ্র শিফট বাড়িয়ে অল্প শিক্ষার্থী নিয়ে পরীক্ষা নেয়ার সুযোগ আছে। 

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ব্যবহারিক ক্লাস নিশ্চিতের জন্য আমরা ক্লাস রুটিনে সেটি অন্তর্ভুক্ত করেছি। ক্লাসের বিষয়টি তদারকি করার জন্য আমাদের মনিটরিং উইং আছে। জেলা শিক্ষা অফিস, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এটি দেখেন। 

এসএসসি পরীক্ষায় বোর্ডের নির্দেশনা না মানা নিয়ে তিনি বলেন, যদি কোন কেন্দ্র পুরোপুরি বোর্ডের নির্দেশনা না মেনে পরীক্ষা নেয় তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। এজন্য অবশ্যই আমাদের কাছে অভিযোগ করতে হবে। যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি। 

সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলছে। অথচ গোড়াতেই এমন বড় গলদ থাকলে তা কতটা কার্যকর হবে? দেশে যদি বিজ্ঞানের শিক্ষক ও গবেষক তৈরি না হয, তাহলে কারা বাস্তবায়ন করবেন ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন? এমন প্রশ্ন জেগেছে সচেতন মহলের মনে। 

শিক্ষকরা মনে করেন, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক শিক্ষা না পেলে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। কেবলমাত্র তত্ত্বীয় বিষয় পড়লে শিখন ঘাটতি পূরণ হয় না। এতে করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলে এর প্রভাব পড়ে। পড়া বুঝতে কষ্ট হয়।  ভিত্তি মজবুত না হওয়ার কারণে পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়েন অনেকেই। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ব্যবহারিক শিক্ষা পেলে পরবর্তীতে গবেষণায় আগ্রহ তৈরীতেও এটি ভূমিকা পালন করে। 

মাধ্যমিক পর্যায়ে ব্যবহারিক ক্লাসে না উচ্চ মাধ্যমিকে কি সমস্য হয় সে বিষয়ে ফেনী সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. নূরুল আজিম ভূঁইয়া বলেন, মাধ্যমে ব্যবহারিক ক্লাস না করার কারনে উচ্চ মাধ্যমিকে বুঝতে সমস্যা হয়। সময় বেশি লাগে। যন্ত্রপাতি চিনে না। এগুলোর ব্যবহার জানে না। যেহেতু এখানে নিজে পরীক্ষন করতে হয় তাই এসব না চিনলে সমস্যা। সাধারণ ক্লাস শেষে একটার পর ব্যবহারি ক্লাস আগের অভ্যাস না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা দুর্বল হয়ে যায়। মাধ্যমিকে ব্যবহারি ক্লাস করলে এই সমস্যাটা হতো না। 

উচ্চ শিক্ষায় ব্যবহারিক ক্লাসের প্রভাব সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিটিউটের প্রভাষক জেবা ফারহানা বলেন, কেউ যদি স্কুলে ব্যবহারিক ক্লাস করতে না পারে কিন্তু কলেজে করে তাহলে শিখন ঘাটতি কিছুটা পূরণ হয়। যদি কোন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক উভয় পর্যায়ে ব্যবহারিক ক্লাস না করে তাহলে শেখাটা পরিপূর্ণ হয় না। তাত্ত্বিক পড়া পড়ে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো ৩০-৪০% বুঝা যায় হয়তো সর্বোচ্চ ৬০% । তাত্ত্বিক বিষয়টা যখন ল্যাবে বা বাইরের পরিবেশে হাতে কলমে শেখানো হয় সেটি বেশি কার্যকরি হয়। 

মাধ্যমিকে জীব বিজ্ঞানের ব্যবহারিক নিয়ে আমরা একটি গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছি এমন অসংখ্য স্কুল আছে যেখানে ল্যাব থাকলেও সেটিতে ব্যবহারিক ক্লাস হয় না। ১০-১২ বছরেও ওই রুমের তালা খোলা হয়নি। এটা সত্য যে শিক্ষার্থীরা তাত্ত্বিক ক্লাসের চেয়ে ব্যবহারিক ক্লাস বেশি উপভোগ করেন। এ ব্যপারে তাদের আগ্রহ আছে কিন্তু এর বিপরীত হলো শিক্ষকরা। শিক্ষকদের আগ্রহ খুব কম। আবার এর পিছনেও অনেক কারণ আছে। এজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ব্যবহারিকের জন্য আলাদা শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। তাহলে হয়তো এ পরিস্থিতি উত্তরণ করা যাবে। 


সর্বশেষ সংবাদ