স্বল্প ব্যয়, স্কলারশিপসহ উচ্চশিক্ষায় গন্তব্য হতে পারে ভারত

আরাফাত আহমেদ আকাশ
আরাফাত আহমেদ আকাশ  © সংগৃহীত

নেত্রকোণার ছেলে আরাফাত আহমেদ আকাশ। স্কলারশিপ নিয়ে পড়ছেন ভারতের চন্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই উইথ স্পেশালাইজেশন ইন ব্লকচেইন টেকনোলজি বিষয়ে। এইচএসসির পর বিভিন্ন দেশের উচ্চশিক্ষার স্কলারশিপ নিয়ে খোঁজ-খবর নিতে থাকেন তিনি। তারপর ফেসবুকে এলাকার একজনের সাথে পরিচিত হন, যিনি উচ্চশিক্ষায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য তখন ভারতে ছিলেন। তার সাথে কথা বলেই Indian Council for Cultural Relations (ICCR) স্কলারশিপ সম্পর্কে জানেন তিনি।

আকাশ জানান, তখন আবেদনের সময়ও খুব কম ছিল। পরবর্তীতে আবেদন করে আইসিসিআর স্কলারশিপে জওহরলাল নেহরু টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। যদিও পরে স্কলারশিপ নিয়ে পাঞ্জাবের চন্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। আকাশ তার নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে দেশটির উচ্চশিক্ষা নিয়ে নানা তথ্য ও ভারতে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের দিয়েছেন অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শ। শুনেছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার—

ভারতে উচ্চশিক্ষার যোগ্যতা
পৃথিবীর প্রায় সব দেশ থেকেই ভারতে পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত আসছে। বিশেষ করে আফ্রিকা, মেক্সিকো, মিশর, ব্রাজিল, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ইত্যাদি বিভিন্ন দেশ থেকেই শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার জন্য ভারতে আসছে।উচ্চশিক্ষায় ভারতে যেতে ন্যূনতম এইচএসসি ও ১৮ বছর বয়সী হতে হবে। এইচএসসি অথবা এ লেভেল উত্তীর্ণ হওয়া যেকোনো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভারতের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারবেন। স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করা শিক্ষার্থী মাস্টার্সের জন্য এবং যারা ডিপ্লোমা গ্র্যাজুয়েট তারাও আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া যারা পিএইচডি করতে চান, তারাও আবেদন করতে পারবেন। হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া ভারতে উচ্চশিক্ষায় আইএলটিএস এর কোনো প্রয়োজন নেই।

কাজের সুযোগ
চাকরি বা খণ্ডকালীন কাজের ক্ষেত্রে ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স করতে আসা শিক্ষার্থীদের কাজের একদম অনুমতি নেই ভারতে। কেউ এসে কাজ করে থাকলে আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন। এগুলো মাথায় রেখে ভারতে আসতে হবে।

ভারতের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র ভারত। দক্ষিণে কন্যাকুমারী থেকে উত্তরে হিমালয় পর্যন্ত, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক দৃশ্য রয়েছে। আবহাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের এক প্রদেশে যখন গরম তখন প্রদেশ বরফে ঢাকা আবহাওয়া নিয়ে ঠিক ব্যাখ্যা দেওয়াটা কঠিন। একজন শিক্ষার্থী যদি ভারতে পড়াশোনা করতে আসেন তাহলে পড়াশোনার পাশাপাশি হতে পারেন একজন ভালো ট্রাভেলার। কাশ্মীর, শিমলা, মানালি, লাদাখ, গোয়া বিচ, আগ্রার তাজমহল, কেদারনাথ, দার্জিলিং, ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন ভারতে উচ্চশিক্ষায় যাওয়া একজন শিক্ষার্থী।

পড়াশোনার ভাষা
ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক মানের। যেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে আসেন। আর ক্লাস গুলো সম্পূর্ণ ইংলিশ মাধ্যমে পঠন-পাঠন হয়ে থাকে। তাছাড়া যেহেতু আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। তাই আমাদের ভাষাগত অনেকটা মিল রয়েছে। যা আমাদের সহজেই হিন্দি বুঝতে, যোগাযোগ ও কথা বলতে সাহায্য করে।

আবেদন প্রক্রিয়া
ভারতে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী একজন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য ICCR স্কলারশিপ, SII স্কলারশিপ, University স্কলারশিপ এই তিনটি মাধ্যমে আসতে পারেন। ICCR স্কলারশিপটি Indian Council for Cultural Relations প্রদান করে থাকে। প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশগুলোর সাথে সাংস্কৃতিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে প্রবাসী শিক্ষার্থীদের প্রতি বছর এই Cultural Scholarship দিয়ে থাকে ভারত সরকার। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ২০০ জনকে এই স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে। এই স্কলারশিপে আবেদনকারীকে কয়েকটি ধাপ শেষ করে পরীক্ষার মাধ্যমে এটি পেতে হয়। অনেকেই এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করে এবং স্কলারশিপের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য ১০০টি সিট এবং বাকি ১০০টি বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার্থীদের জন্য।

বিভিন্ন আনুষঙ্গিক খরচ মেটাতে ১৮ হাজার রুপি দেওয়া হয়। স্কলারশিপটি বছরের মার্চ থেকে মে মাসে শুরু হয়ে থাকে। দ্বিতীয় স্কলারশিপটি হলো SII স্কলারশিপ Study in India। এই স্কলারশিপটি Ministry of Education and The Ministry of Commerce and Industry-এর সহায়তায় পরিচালিত একটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। এটি পেতে Ind-SAT এক্সাম দিতে হয়। একজন আবেদনকারী সরকারি বেসরকারি যেকোনো ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করতে পারবেন। প্রতিবছর এই SII Scholarship এর পরিমাণ ৩ হাজার ৫০০ ডলার। যেটা সরাসরি কলেজ বা ভার্সিটিতে চলে যাবে আপনার হাতে দিবে না। এখন এই ৩ হাজার ৫০০ ডলারে যতটুকু কভার হবে ভার্সিটি খরচের ততটুকু আপনাকে বহন করা লাগবে না। সর্বশেষ যেটি তাহলে ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ। এটি মূলত বেসরকারি ইউনিভার্সিটি আপনার রেজাল্টের উপর স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। ইউনিভার্সিটির মান, র‌্যাঙ্কিং সব কিছুর উপর নির্ভর করে কোর্স ফি হয়ে থাকে।

নতুনদের জন্য পরামর্শ
ভারতের উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী একজন শিক্ষার্থী আবেদন করার আগেই সাবজেক্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় সব ঠিক করে রাখবেন। একজন শিক্ষার্থী পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন। যারা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চান তারা NIT, IIT, Engineering University পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন। তাছাড়া আবেদনের সময় এসএ লিখা নিয়ে, ৫টি টপিক থাকবে যেখান থেকে আপনি একটি বিষয় নিয়ে লেখবেন। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ যত ইউনিকভাবে আর গুছিয়ে লেখতে পারবেন আপনার সিরিয়াল ততো এগিয়ে থাকবে। এ ধাপগুলো শেষে আপনার ভারত হাইকমিশন থেকে ই-মেইল আসবে EPT এক্সাম দেওয়ার জন্য। তারপর এটায় উত্তীর্ণ হলে ভাইবার জন্য ডাকবে। এভাবেই স্কলারশিপে মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন।


সর্বশেষ সংবাদ