চবি ‘শেষ অপশন’ ছিল ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় সাদিয়ার

চবি ‘শেষ অপশন’ ছিল ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় সাদিয়ার
চবি ‘শেষ অপশন’ ছিল ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় সাদিয়ার  © সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ব্যবসায় অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলে তৃতীয় হয়েছেন চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্রী সাদিয়া ইসলাম। তিনি ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় (জিপিএ মার্কসসহ) ৯৩.৪৭ পেয়ে এই ইউনিটে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন। চবি ছাড়া সাদিয়া আর কোথাও আবেদন করেননি। এটিই তার একমাত্র এবং শেষ সুযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।

সাদিয়া ইসলাম চট্টগ্রামের মেয়ে। থাকেন চট্টগ্রামের পটিয়াতে। এক ভাইয়ের একমাত্র আদরের বোন সাদিয়া। অনেক ছোট বয়সে মাত্র চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি তার বাবাকে হারান। তার মনের ইচ্ছে তিনি ফিন্যান্সে পড়বেন। কিন্তু বাবাকে হারানো সাদিয়া কখনো প্রতিবেশি এবং আত্মীয়স্বজনদের থেকে মানসিক সাপোর্ট পাননি। তবে তার মা তার সফলতার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।

সাদিয়া বলেন, আমি শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী হতে চাই না, শিক্ষার্থী হতে চাই’। পরীক্ষার হলে বসে আমি আল্লাহর কাছে এই দোয়া করেছিলাম। পরীক্ষা দিয়ে মনে হলো চান্স নাও হতে পারে। ভয় কাজ করছিল খুব। মনে হয়েছে আর চবিতে আসা হবে না। তাই অনেকক্ষণ ঘুরে-ফিরে ক্যাম্পাসটা দেখে এসেছি।

তিনি আরও বলেন, তবে রেজাল্ট হওয়ার পরে আমার এক বড় আপু রোল নম্বর চাইলেন। তিনি প্রথমে আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বললেন আমার তো পরীক্ষা খারাপ হয়েছে তাই রেজাল্টও খারাপ। পরে যখন বললেন আমি তৃতীয় হয়েছি, তখন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি ৩০ নম্বর, হিসাববিজ্ঞান ৩৫ নম্বর এবং ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ ৩৫ নম্বরের এমসিকিউর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই ইউনিটে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের জিপিএর নম্বর ২০।

আরও পড়ুন: ১২০-এ ৯৪.৭৫ পেয়ে চবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম আরমান

নিজের সফলতা নিয়ে সাদিয়া বলেন, আমি অনেক কষ্ট করেছি। আমার এ একটিই অপশন ছিল। এটাই শুরু এটাই শেষ। আর কোথাও আবেদন করিনি। আমার প্রথম থেকেই টার্গেট ছিল টপ টেনের মধ্যে থাকবো। পরীক্ষা দিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগলাম, আল্লাহ টপ টেন লাগবে না, আমাকে একশোর মধ্যে দাও। আবার বলতে লাগলাম না একবার চান্স করে দাও চবিতে তাহলেই হবে।

এর আগে গতকাল শনিবার (২০ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যবসায় অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এই ইউনিটে পাস করেছেন ২ হাজার ২৬৪ জন শিক্ষার্থী। তবে ফেল করেছেন ৬ হাজার ৯৫৮ জন শিক্ষার্থী। সে হিসেবে ৭৫.৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই অকৃতকার্য হয়েছে। এবারে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৯ হাজার ২২২ ভর্তিচ্ছু।

বাবাকে হারিয়ে একমাত্র সম্বল মায়ের আদর ভাইয়ের স্নেহে বড় হয়েছেন সাদিয়া। তিনি বলেন, আমার মা আমাকে একগ্লাস পানি ঢেলে খেতে দেননি। আমাকে সবরকম সহায়তা করেছেন। তার অবদান আমি বলে শেষ করতে পারবো না। আমার সবরকম আশা-ভরসা এবং অনুপ্রেরণা আমার মা। এছাড়া আমার এক বড় আপু এবং একজন শিক্ষক আমাকে অনুপ্রাণিত করতেন। আমি কৃতজ্ঞ।


সর্বশেষ সংবাদ