ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব ও করণীয়: কুরআন ও হাদীসের আলোকে

ঈদুল ফিতর মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ আনন্দ ও শুকরিয়ার দিন
ঈদুল ফিতর মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ আনন্দ ও শুকরিয়ার দিন  © প্রতীকী ছবি

ঈদুল ফিতর মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ আনন্দ ও শুকরিয়ার দিন। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর এই দিনে মুসলিম উম্মাহ উপবাস ভঙ্গ করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ইসলামী শরীয়তে ঈদুল ফিতরের কিছু নির্দিষ্ট আদব ও সুন্নত রয়েছে, যা পালন করা মুস্তাহাব।

ঈদুল ফিতরের শারঈ গুরুত্ব: আল্লাহ তাআলা বলেন- يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

‘‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজতা চান এবং তোমাদের জন্য কঠোরতা চান না; এবং যাতে তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করো এবং যাতে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো, যিনি তোমাদের পথ দেখিয়েছেন এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’’ (সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)

হাদীস থেকে দলিল: ১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—كَانَ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ لَهُمْ يَوْمَانِ فِي كُلِّ سَنَةٍ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا، فَلَمَّا قَدِمَ النَّبِيُّ ﷺ الْمَدِينَةَ، قَالَ: كَانَ لَكُمْ يَوْمَانِ تَلْعَبُونَ فِيهِمَا، فَقَدْ أَبْدَلَكُمُ اللَّهُ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا، يَوْمَ الْفِطْرِ وَيَوْمَ الْأَضْحَى

‘‘জাহেলিয়াতের যুগে মানুষের দুইটি খেলার দিন ছিল। রাসুল (ﷺ) মদীনায় আগমনের পর বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য ওই দুই দিনের পরিবর্তে আরো উত্তম দুই দিন দান করেছেন— ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা।’’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ১১৩৪)

ঈদুল ফিতরের সুন্নত ও করণীয় কাজ: ১. সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। রাসুল (ﷺ) ফজরের নামাজের পর সকাল সকাল প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। ২. মিসওয়াক করা ও গোসল করা। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَغْتَسِلُ يَوْمَ الْفِطْرِ وَيَوْمَ الْأَضْحَى ‘‘রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে গোসল করতেন।’’ (ইবনে মাজাহ: ১৩১৫)। ৩. উত্তম পোশাক পরিধান করা। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন— كَانَ لِلنَّبِيِّ ﷺ جُبَّةٌ يَلْبَسُهَا لِلْعِيدَيْنِ وَالْجُمُعَةِ ‘‘নবী (ﷺ)-এর একটি বিশেষ চাদর ছিল, যা তিনি ঈদ ও জুমার দিনে পরিধান করতেন।’’ (সুনানে ইবনে খুযাইমা: ১৭৬৫)। ৪. সুগন্ধি ব্যবহার করা। ইমাম মালিক (রহ.) বলেন—‘‘ঈদের দিন সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব।’’ (আল-মুয়াত্তা, হাদীস: ৪৩৫)। ৫. ঈদগাহে যাওয়ার আগে মিষ্টি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ لَا يَغْدُو يَوْمَ الْفِطْرِ حَتَّى يَأْكُلَ تَمَرَاتٍ وَيَأْكُلُهُنَّ وِتْرًا. ‘‘রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে বিজোড় সংখ্যায় খেজুর খেতেন।’’ (বুখারি: ৯৫৩)। ৬. ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করা। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ. ‘‘রাসুল (ﷺ) রোজাদারদের গুনাহ থেকে পবিত্র করার জন্য ও অভাবীদের খাওয়ানোর জন্য সদকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন।’’ (আবু দাউদ: ১৬০৯)। ৭. হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া এবং ভিন্ন রাস্তা দিয়ে ফেরা। জাবির (রাঃ) বলেন—كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا كَانَ يَوْمُ عِيدٍ خَالَفَ الطَّرِيقَ. ‘‘নবী (ﷺ) ঈদের দিনে এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরতেন।’’ (বুখারি: ৯৮৬)। ৮. ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবীর বলা। আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ। ৯. ঈদের নামাজ আদায় করা। রাসুল (ﷺ) বলেন— "صَلَاةُ الْعِيدَيْنِ وَاجِبَةٌ". ‘ঈদের নামাজ ওয়াজিব।’’ (সুনানে আবু দাউদ: ১১৩৫)। ১০. ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা। সাহাবায়ে কিরাম একে অপরকে বলতেন—تَقَبَّلَ اللَّهُ مِنَّا وَمِنْكُمْ. ‘আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের (আমল) কবুল করুন।’’ (আল-মুহাল্লা, ইবনে হাজার: ৩/৩৪২)।

ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ দান। এইদিন একে অপরের সাথে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার শ্রেষ্ঠ সুযোগ। তাই আমাদের উচিত, ঈদুল ফিতরের দিন সুন্নত ও আদবসমূহ মেনে চলা এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।

اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ عِيدًا سَعِيدًا لِلْمُسْلِمِينَ فِي كُلِّ مَكَانٍ، وَتَقَبَّلْ مِنَّا صِيَامَنَا وَقِيَامَنَا، آمِين।

লেখক: শিক্ষার্থী, তা'মীরু মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা


সর্বশেষ সংবাদ