ঢাকা কলেজ
১০ মাস ধরে হলের সামনেই আবর্জনার স্তুপ
- রাকিবুল হাসান তামিম
- প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২২, ০৭:৩০ PM , আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২২, ০৯:২৮ PM
জমানো ময়লা কে সরাবে। ঠিকাদার নাকি কলেজ প্রশাসন। এমন টানাপোড়নে দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের সামনেই পড়ে আছে ময়লা আবর্জনা স্তুপ। এমন চিত্র রাজধানীর ঢাকা কলেজের। প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় দীর্ঘ দশমাসেরও বেশি সময় ধরে তিনটি ছাত্রাবাসের সামনেই স্তুপ করে রাখা হয়েছে ইট, টাইলস, ভাঙ্গা সিরামিক সহ অন্যন্য আবর্জনা। ফলে একদিকে যেমন ঘটছে সৌন্দর্যের হানি অপরদিকে অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার খেসারত দিচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি তো রয়েছেই।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মূল একাডেমিক এলাকার পেছনের আবাসিক ছাত্রাবাস ও কর্মচারী কোয়ার্টার এলাকার অবস্থা করুণ। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ছাত্রাবাস, পশ্চিম ছাত্রাবাসের সামনে ও শহীদ মোঃ ফরহাদ হোসেন ছাত্রাবাসের দক্ষিন পাশে কংক্রিট, ময়লা আবর্জনার স্তুপ। তাছাড়া ছাত্রাবাসের পেছনে কর্মচারী কোয়ার্টারের আশপাশের পরিবেশও ময়লা আবর্জনায় সয়লাব।
জমানো ময়লার ব্যাপারে কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, করোনাকালীন বন্ধের সময় আবাসিক হলে উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের সাথে যে সকল প্রতিষ্ঠান জড়িত ছিল তাদের দায়িত্ব হচ্ছে এসব উচ্ছিষ্ট সরিয়ে নেওয়ার। আবর্জনা সরানোর দায়িত্ব কলেজ প্রশাসনের নয়। এসব ঠিকাদারদের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তারা আমাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি ছাত্র হত্যার সময় উপস্থিত প্রেমিকার রহস্যজনক আচরণ
এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থী আহসানুল্লাহ খান ফেরদৌস বলেন, ছাত্রাবাসের সামনে ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকাটা দুঃখজনক। দীর্ঘদিন ধরেই এসব ময়লা আবর্জনা পড়ে আছে। গত বছরের অক্টোবর মাসে ছাত্রাবাসে ফেরার সময় থেকেই আমরা দেখছি ময়লা আবর্জনার স্তুপ পড়ে আছে। শিক্ষার্থী হিসেবেও আমাদের কাছে এক ধরনের খারাপ লাগা কাজ করে। দীর্ঘদিনেও কেন ময়লা আবর্জনা ছড়ানো সম্ভব হলো না এ বিষয়ে প্রশাসন ভালো বলতে পারবে। তবে আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকলে প্রশাসনের উদ্যোগে আরো আগেই ময়লা আবর্জনা সরে যেত।
সাকিব হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রাবাস থেকে বেরোলেই আমাদের চোখের সামনে এই আবর্জনা স্তুপ। আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে যেন এটি অপসারণ করা হয়। একটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের আবাসিক শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গায় এ ধরনের আবর্জনা পড়ে থাকবে সেটি কখনো কাম্য নয়।
এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে রাজি হননি পশ্চিম ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক কলেজের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুকুল চন্দ্র পাল। তাঁর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না জানিয়ে কলেজের উন্নয়ন কমিটির আহবায়ক গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র বিশ্বাসের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন কলেজের উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অখিল চন্দ্র বিশ্বাসও। তিনি বলেন ঠিকাদারদের সাথে বারবার যোগাযোগ করার পরও তারা কেন কাজ সমাপ্ত করছে না সেটি আমার জানা নেই।
দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাহবুব এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মাহবুবুর রহমানের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠা মেসার্স মনোয়ার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মনোয়ার হোসেন খোকন জানান কাজ বাকি থাকায় আবর্জনা সরানো হয়নি। তিনি বলেন, কিছু কাজ বাকি থাকায় আমরা আবর্জনা সরাতে পারিনি। দ্রুতই আবার কাজ ধরা হবে।
আবর্জনা সরানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ও ছাত্রাবাস আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ. টি. এম. মইনুল হোসেন। তিনি বলেন, কাজ শেষ হওয়ার পরও ময়লা ফেলে রাখার বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা ঠিকাদারদের সাথে বারবার যোগাযোগ করেছি এবং ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তাছাড়া আবর্জনা ফেলে দেওয়ার দায়িত্ব হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। কলেজ প্রশাসন এই আবর্জনা দায়ভার নিতে পারেনা। আমরা চেষ্টা করবো দ্রুতই যেন তাদের মাধ্যমে আবর্জনা পরিষ্কার করা যায়।