কুবিতে মাদকের ছোবল, প্রশাসনের নীরবতায় বাড়ছে অপরাধ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ক্যাম্পাসে মাদকের আগ্রাসন ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। সুনীতি-শান্তি হল থেকে শুরু করে বিভিন্ন আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসের খোলা স্থানগুলোয় মাদকের অবাধ ব্যবহার উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে অথচ প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে, এমন অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. নাহিদা বেগম ও সুনীতি-শান্তি হলের প্রাধ্যক্ষ ড. শাহিনুর বেগমের কাছে ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাবিনা ঐশী ও লাবিবা ইসলাম, ফার্মেসি বিভাগের আতেফা লিয়া এবং আইন বিভাগের মাইশা রহমান রোদিতার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ২১৪ নম্বর কক্ষে মাদক সেবনের লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়।

শুধু মাদক সেবনই নয়, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা হলের পরিবেশকে অশান্ত করে তুলছেন, যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

কাজী নজরুল হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাতে রাফসান সামি নামে এক শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত অবস্থায় ১০৬ নম্বর রুমের দরজায় লাথি মারেন, গালিগালাজ করেন এবং এরপর নিচতলায় রাখা সাইকেল ফেলে দেন। এ সময় অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার ছুড়ে মারার পাশাপাশি স্প্রে করে পুরো হল চত্বরে ধোঁয়া ছড়িয়ে দেন। এতে ১০৬ নম্বর রুমের জুনিয়র শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বলে জানা গেছে।

তদন্তে উঠে আসে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগে ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি শহীদ মিনার এলাকা থেকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আনাসকে গাঁজাসহ আটক করে প্রক্টরিয়াল বডি। তখন তাকে মাত্র একটি মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে আনাসের বিরুদ্ধে নজরুল হলের কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে মাদক সেবনের ধারাবাহিক অভিযোগ পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, এমন নজিরবিহীন শিথিলতার কারণে অভিযুক্তরা বারবার একই অপরাধ করতে সাহস পাচ্ছে। 'ক্যাম্পাসে মাদক সেবনের অভিযোগ অহরহ পাওয়া যাচ্ছে। এটি এখন ওপেন সিক্রেট। যখনি প্রশাসনকে এ ব্যাপারে জানানো হয়, তখন তারা লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দায় এড়ানোর হীন চেষ্টা করে। অথচ ক্যাম্পাস ও হলে মাদক সেবন যেন না হয়, সে জন্য প্রশাসনের উচিত স্বপ্রণোদিত হয়ে সেগুলোর নজরদারি করা এবং অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করা। সেটি না করে তারা ব্যুরোক্র‍্যাটিক সিস্টেমে শিক্ষার্থীদের থেকে লিখিত অভিযোগ চেয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। ফলে প্রশাসনের এই অকার্যকর ভূমিকায় মাদকসেবীরা আরও বেশি সাহস পায় এবং ক্যাম্পাসে বা হলে মাদক গ্রহণ করে অস্বাভাবিক আচরণ করে। হলের নতুন শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত এবং ভীতসন্ত্রস্ত থাকে।

সোচ্চার স্টুডেন্ট’স নেটওয়ার্কের সভাপতি নাইমুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার মনে হয় প্রশাসনের এ নির্লিপ্ততা ভবিষ্যতে ক্যাম্পাসকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী হাছিন ইশরাক বলেন, মাদকাসক্তি কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। শিক্ষার্থীরা জাতির ভবিষ্যৎ। অথচ এই তারুণ্য যদি মাদকের ছোবলে ক্ষতবিক্ষত হয়, তাহলে আমাদের জাতির ভবিষ্যৎও অন্ধকার হয়ে পড়বে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মাদক সেবনের খবর আজকাল প্রায়শই শোনা যাচ্ছে, যা আসলেই আশঙ্কাজনক ব্যাপার। প্রত্যেক শিক্ষার্থীই মাদকের খারাপ দিক সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে, তা সত্ত্বেও তারা কেনো এই বিষ সেবন করছে, তা খতিয়ে দেখা উচিত।

পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থা, মাঝেমধ্যে সভা সেমিনারের ব্যবস্থা, ক্যাম্পাসের আশপাশে মাদকের সহজলভ্য দূর করা, শিক্ষার্থীদের যথাযথ চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা ও সেই সঙ্গে মানসিক চাপ মোকাবিলায় কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা রাখলে আমার মতে এই প্রবণতা কমতে পারে। পরিশেষে একটি কথাই বলতে চাই, এটি একটি ভয়ংকর ব্যাধি, হয়তোবা পুরোপুরি নির্মূল সম্ভব না। তবে এর ছড়িয়ে পড়া অবশ্যই দ্রুততম সময়ে বন্ধ করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তর এবং প্রক্টরিয়াল বডির ভূমিকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ বিরাজ করছে। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রতি ঘটনার পর তদন্তের আশ্বাস দিলেও দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থা দৃশ্যমান হয়নি। বরং অপরাধীরা দিনকে দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভাকাঙ্ক্ষীরা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকের বিস্তার রোধে শুধু অভিযোগ গ্রহণ নয়, বরং দ্রুত তদন্ত, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং নিয়মিত অভিযান চালানোর মাধ্যমেই কুবিকে রক্ষা করা সম্ভব। নতুবা শিক্ষার পরিবেশ ক্রমেই ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে ক্যাম্পাসে বিশেষ অভিযান, মনিটরিং সেল গঠন ও কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হাকিম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, 'আমরা আজকে সব আবাসিক হলের প্রভোস্টসহ মিটিং করেছিলাম। সেখানে মাদকের ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হলের প্রভোস্টরা গা-ছাড়া ভাব নিয়ে আছেন। তারা যদি ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দিক।

তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত আমরা অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। বহু মাদকাসক্তকে হাতেনাতে ধরে শাস্তি দিয়েছি তবু মাদকের আগ্রাসন থামছে না। নতুন প্রশাসন হিসেবে আমরা এ জন্য ব্যর্থ। মাদক নির্মূলে আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence