শিক্ষক-সংকটে ধুঁকছে সরকারি বাঙলা কলেজ, শুধু আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা
- কাজী আল তাজরীমিন, বাঙলা কলেজ
- প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৯ PM

রাজধানীর অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি বাঙলা কলেজ যেন আজ নিজ গৌরব ভুলতে বসেছে। চরম শিক্ষক সংকটে পড়াশোনার মান তলানিতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় এ প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থীর একাডেমিক জীবন এখন অনিশ্চয়তার মুখে।
বিশেষ করে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এবং মার্কেটিং বিভাগের করুণ অবস্থা। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এসব বিভাগে নতুন কোনো শিক্ষক না আসায় পাঠদান কার্যক্রম প্রায় ভেঙে পড়েছে। স্বপ্ন নিয়ে উচ্চশিক্ষায় পা রাখা শিক্ষার্থীরা এখন দিশেহারা ও হতাশ হয়ে পড়েছে।
বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় এক বিভাগের শিক্ষক অন্য বিভাগের ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে সঠিক পাঠদান তো দূরে থাক, নিয়মিত ক্লাস, ল্যাব কার্যক্রম কিংবা সুষ্ঠু পরীক্ষা ব্যবস্থাপনাও বজায় রাখা যাচ্ছে না। শিক্ষার মূল চালিকাশক্তিই যখন অনুপস্থিত, তখন ভবিষ্যতের ভাবনা শিক্ষার্থীদের কাছে এক আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।
তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, এই সংকট কেবল ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদেই সীমাবদ্ধ নয়। দর্শন, ভূগোল ও পরিবেশ, আইসিটি এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোও রয়েছে চরম শিক্ষক ঘাটতির শিকার। প্রতিটি বিভাগে গড়ে ৪৫০ থেকে ৫৫০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, অথচ নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক। বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীরা এখন নির্ভর করছেন স্ব-অধ্যয়ন কিংবা কোচিং সেন্টারের ওপর। শিক্ষার মানে চরম অবনতি আর মানসিক চাপের ভারে হতাশ হয়ে পড়ছেন তরুণ শিক্ষার্থীরা।
ক্ষোভ আর হাহাকার প্রকাশ করে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী শাওন আহমেদ সৈকত বলেন, ‘শিক্ষকের অভাবে প্রতিটি ক্লাসই যেন একটা বর্জনের মতো। বই থেকে পড়লে শুধু থিওরি জানা যায়, কিন্তু ফিন্যান্সের মতো বিষয়ে বাস্তবতা না জানলে চাকরির বাজারের জন্য কোনো প্রস্তুতিই থাকে না। আমাদের স্বপ্নগুলো আর স্পষ্ট নয়। সবকিছুই ঝাঁপসা হয়ে গেছে।’
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদুল ইসলাম ফাহাদ বিস্ময় ও প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যেখানে শিক্ষকই নেই, সেখানে শিক্ষা কোথা থেকে আসবে? আমরা তো যেন দিকহীন এক জাহাজের যাত্রী। প্রতিটি দিন আমাদের ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।’
শিক্ষার্থীরা বলছেন, শুধু আশ্বাসে পেট চলে না, আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধৈর্যও ফুরিয়ে যাচ্ছে।
শুধু শিক্ষার্থী নন, এই সংকটের প্রভাব পড়েছে শিক্ষকদের ওপরও। ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘যেহেতু নির্দিষ্ট বিভাগে শিক্ষক নেই, তাই ব্যবস্থাপনা ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদেরই অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে শিক্ষকদের ওপর অতিরিক্ত মানসিক ও শারীরিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, যা পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলছে।’
তবে এখনো সংকট সমাধানে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি একদল সচেতন শিক্ষার্থী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে স্মারকলিপি দেন। কিন্তু প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও, কোনো আশার আলো দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল হাসান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন করেছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি দ্রুতই সমাধান হবে।’