হকারদের দখলে ঢাকা কলেজের দেয়াল, নির্বিকার প্রশাসন

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রূপ হারিয়ে পরিণত হয়েছে এক ব্যবসাকেন্দ্রে
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রূপ হারিয়ে পরিণত হয়েছে এক ব্যবসাকেন্দ্রে  © সংগৃহীত

দেশের ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজের সীমানাপ্রচীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রূপ হারিয়ে পরিণত হয়েছে এক ব্যবসাকেন্দ্রে। ভ্রাম্যমান দোকানের মাধ্যমে কলেজের দেয়াল পুরোটা দখল করে নিয়েছে হকাররা। কলেজ সংলগ্ন রাস্তার ফুটপাত, মূল ফটক ও নায়েমের গলি এখন পুরোপুরি হকারদের এবং ভ্রাম্যমান দোকানের দখলে। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ, কলেজ সংলগ্ন সড়কে দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট ও কোলাহল। ফুটপাত ও রাস্তায় হকারদের ব্যস্ততা ঠেলে গন্তব্য পৌঁছাতে জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি হচ্ছেন চরম হয়রানি আর ভোগান্তির।

সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর রোড সংলগ্ন ঢাকা কলেজের দেয়ালের পুরোটা অংশ জুড়ে ঝুলন্ত আংটা বসিয়ে শার্ট, প্যান্ট, বেল্ট, গেঞ্জি, কসমেটিক সামগ্রী সহ নানা পণ্য সামগ্রীর দোকান নিয়ে বসেছেন হকার ও ভ্রাম্যমান দোকানিরা। অপর পাশের ফুটপাত ও রাস্তায় সারি সারি করে বসানো হয়েছে অগণিত ভ্রাম্যমান দোকান। ফুটপাতের দুই পাশের দোকানের মধ্যে দিয়ে পথচারী নারী পুরুষ গা ঘেঁষাঘেঁষি করে খুব কষ্ট করে চলাচল করছেন। কলেজের এই ফুটপাতে পাশাপাশি দুইজন হাটার জায়গা পর্যন্ত না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, গাউসিয়া মার্কেট থেকে শুরু করে ঢাকা কলেজ সংলগ্ন নায়েমের গলি পর্যন্ত অবৈধভাবে মোট ২৭৫ টি ভ্রাম্যমান দোকান বসানো হয়েছে। যা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় ভ্রাম্যমান দোকানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুনের বেশি। তবে নায়েমের গলি ও টিচার্স ট্রেনিংয় কলেজের সামনে ভ্রাম্যমান দোকান পূর্বে কখনও দেখা যায়নি যা এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্যবসায়ী ও কলেজ শিক্ষার্থীদের তথ্যমতে, একটি ছাত্রসংগঠনের কতিপয় ছাত্র নেতাদের ছত্রছায়ায় কলেজ সংলগ্ন এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ক্ষুদ্র ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা করছেন রমরমা ব্যবসা। রাজধানীর ব্যস্ততম এই এলাকা অবৈধভাবে দখল করে প্রতিনিয়ত চলছে দোকান বসানোর প্রতিযোগিতা। পথচারীরা অভিযোগ করছেন ফুটপাত ব্যবহারে পূর্বের মতো হকারদের কাছে জিম্মি রয়েছেন তারা।

ঢাকা কলেজের দেয়ালে কাপড়ের দোকান বসিয়েছে মধ্যবয়সী এক হকার। দোকান বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুটপাতের এই হকার বলেন, আমরা মূলত পেটের দায়ে এখানে এসেছি। আমি এটা জানি যে ফুটপাতে দোকান দিলে জনগণের চলাচলে দুর্ভোগের তৈরি হয়। তবে আমি যদি এখান থেকে দোকান উঠিয়ে চলে যাই। তাহলে এই জায়গা তো কেউ না কেউ দখল করবে। ফুটপাত থেকে সবাই উঠে গেলে আমিও ঢাকা কলেজের সামনের ফুটপাত থেকো উঠে যেতে প্রস্তুত। আমিও চাই না আপনাদের চলাচলে দুর্ভোগ হোক তবে পেটের দায়ে এখানে এসেছি। 

ঢাকা কলেজের অনেক শিক্ষার্থী ফুটপাতে দোকান বসিয়েছে এমন অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ঢাকা কলেজের সামনে শুধু সাধারণ মানুষ নয় বরং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরাও এখানে দোকান চালায়।

ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে দোকান বসিয়েছে ঢাকা কলেজের ২৩ -২৪ সেশনের শিক্ষার্থী আরেফিন। ফুটপাত কলেজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, পথচারীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন স্বীকার করে কলেজের সামনে দোকান কেন বসানো হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন যদি ঢাকা কলেজের সামনে থেকে সকল ফুটপাতের দোকান উঠিয়ে দিতে পারে তাহলে আমিও এখানে আর দোকান দিবো না।

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, ছাত্রদের নিয়ে নামলে এই জায়গাটা খালি করতে এক ঘন্টার বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু এটা করলে হাঙ্গামা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেটা কারোর জন্য সুখকর হবে না। আমরা রমজানটা সময় দিচ্ছি। ঈদের পরে কলেজের দেয়ালে কিছুই রাখতে দেওয়া হবে না। ছাত্রদের দাবি ছিল কলেজের মূল ফটকটা পরিষ্কার রাখতে হবে। তাদের দাবি কথা বিবেচনা করে পরিক্ষামূলকভাবে মূল ফটকের সামনে চেইন দেওয়া হয়েছে। এখন আর কোন যানবাহন মূল ফটক রাখতে পারবে না। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের কিছু পরিকল্পনা আছে যেটা শিক্ষা প্রকৌশলের মাধ্যমে প্রস্তাবনা পাশ করা হয়েছে। সেটা হল কলেজের সামনের বসার জায়গায় স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হবে। এটা হলে সাইড থেকে বসতে পারবে কিন্তু কেউ ভেতরে ঢুকতে পারবে না। দেয়ালটা উনুক্ত এজন্য এখানে যেকেউ যততত্র ব্যবহার করছে।কলেজের উত্তর পাশের দেয়ালটা ভেঙ্গে নতুন দেয়াল করা হবে। দেয়াল থেকে মূল ফটক পর্যন্ত স্টেইনলেস স্টিলের গ্রিল দেওয়া হবে। এর ফলে এখানে কেউ যেন বসতে না পারে, ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।

এ প্রসঙ্গে নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) তাওহা ইয়াসীন হোসাইন বলেন, ফুটপাতে চলাচলে বাধা সৃষ্টিকারী দোকান উচ্ছেদে আমরা এখন প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি। আমাদের ক্রাইম ডিভিশন, সিনিয়র স্পেশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। আসলে বিষয়টা এরকম যে আমরা অভিযান চালায় একটা সময় পর আবার দোকান বসায়। তবে এই অভিযানটি কন্টিনিউয়াস প্রসেস এ বিষয়ে আমাদের সম্পূর্ণ আন্তরিকতা আছে। এ পর্যন্ত আমরা যে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে যে অভিযানগুলো করছি তাতে মনে হয় আগের থেকে উন্নতি হয়েছে এর ফল আগামীতেও পাওয়া যাবে। 

তিনি আরও বলেন, ফুটপাত দোকানগুলো চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে এরপরেও জনসাধারণ কিন্তু ফুটপাত থেকে জিনিসপত্র ক্রয় করছে। এক্ষেত্রে জনসাধারণের সচেতন হতে হবে। আমার মনে হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সোশ্যাল সোসাইটি যদি প্রতিবাদ করত তাহলে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার কাজটা অনেক সহজ হতো। শুধুমাত্র পুলিশ নয় সমন্বিত সব পক্ষের প্রচেষ্টার মাধ্যমে অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence