আবু সাঈদ হত্যার তদন্ত ঝুলে আছে ছয় মাস, পলাতক আসামিরা
- মো: আনোয়ার হোসেন, বেরোবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৮:১৪ AM , আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৪:৪২ PM

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ছয় মাস পার হলেও এখনো কোনো মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। দুটি মামলা থাকলেও চার্জশিট দাখিল করা হয়নি, এমনকি প্রধান আসামিসহ সাত পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করতেও ব্যর্থ হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত ১৮ আগস্ট আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই রমজান আলী রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রোকনুজ্জামান জানান, পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। এমনকি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনও করা হয়নি।
তিনি বলেন, একই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে—একটি পুলিশের দায়ের করা, অন্যটি নিহতের ভাইয়ের। এতে আইনগত কোনো সমস্যা না থাকলেও এখনো কোনো মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। ছয় মাসেও চার্জশিট দাখিল করা হয়নি এবং প্রধান আসামিসহ সাত পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পুলিশ চাইলে তাদের দায়ের করা মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পারত এবং নিহতের ভাইয়ের মামলায় চার্জশিট দেওয়া যেত। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
আরও পড়ুন: পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র নিহত
হত্যার ঘটনা ও মামলার অগ্রগতি
গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হলেও শুরুতে ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, পুলিশের গুলির পরই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপরও তৎকালীন সরকারের প্রশাসন, শিক্ষক এবং চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহতের বড় ভাই রমজান আলীর দেওয়া মামলায় পুলিশের গুলিতে হত্যার অভিযোগ এনে কনস্টেবল সুজন চন্দ্র ও এএসআই আমীর আলীকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলামসহ মোট ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩০ থেকে ৩৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। আসামির তালিকায় বেরোবি পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা, দুই শিক্ষক এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাও রয়েছেন।
আরও পড়ুন: যেভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বেরোবির আবু সাইদ
গত ১ সেপ্টেম্বর আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় রংপুর পিবিআই পুলিশ সুপার জাকির হোসেনকে। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে কেবল দুই পুলিশ সদস্য কনস্টেবল সুজন চন্দ্র ও এএসআই আমীর আলী, বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগ নেতা আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত
গত ২০ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার ময়নুল করিমের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের তদন্ত দল রংপুরে আসে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই রংপুরের পুলিশ সুপার জাকির হোসেন বলেন, আমি মামলাটা ৩৩ দিন পর পেয়েছি। এর আগেই অনেক আসামি পালিয়েছে। আমরা অনেকের পাসপোর্ট জব্দ করার বন্দোবস্ত করেছি। এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালও (আইসিটি) এই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং আমরা একসঙ্গে কাজ করছি।
একই ঘটনার দুটি মামলা থাকায় কোনো জটিলতা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে, হাই কোর্ট একটা স্ট্যাটাস থাকে এবং লোয়ার কোর্ট একটা স্ট্যাটাস থাকে। আইসিটি যেহেতু এটাতে যুক্ত হয়েছেন তাই আইনগত জটিলতা নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা গণমাধ্যমে শুনেছি, আগামী ৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চার আসামির বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। তারা প্রতিবেদন দেওয়ার আগে বা পরে যে কোনো পর্যায়ে আমাদের আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে যা করতে বলবে, সেটাই করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় আটক চার আসামিকে আগামী ৯ এপ্রিল হাজির করার এবং একই সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।