জবিতে এক নারী শিক্ষার্থীসহ দু’জনকে মারধর, নেতৃত্বে ছাত্রদল কর্মী
- জবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১২ PM , আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৯ PM
![](https://cdn.thedailycampus.com/resources/img/article/202501/168624_157.jpg)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুতা পায়ে উঠাকে কেন্দ্র করে রসায়ন বিভাগের দুই শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে মার্কেটিং বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী। আজ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তামান্না তাবাসসুম ও আকাশ আলী আহত হয়েছেন। পরে তাদেরকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আকাশকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, এ হামলায় নেতৃত্ব দেয় শাখা ছাত্রদল কর্মী ও মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনিক কুমার দাশ। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেতের অনুসারী বলে জানা গেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সন্ধ্যায় জুতা পায়ে এক মেয়ে ও ছেলে শহীদ মিনারে উঠলে তার প্রতিবাদ করেন ভুক্তভোগী আকাশ। এরপর তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে জুতা পায়ে শহীদ মিনারে ওঠা মেয়েটির সঙ্গে থাকা বন্ধু মাহী আকাশকে ধাক্কা দিতে গেলে আকাশ তার হাত সরিয়ে দেয়। এসময় মাহী তার বিভাগের বন্ধু অনিককে ফোন দেয়। ফোন দেওয়ার দুই মিনিটের মাথায় অনিকের সঙ্গে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী এসে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে আকাশের ওপর। এ মারধরের সময় আকাশের সাথে থাকা এক মেয়ে শিক্ষার্থীর ওপরও আঘাত করে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আকাশ বলেন, আমরা বিভাগের প্রোগ্রামের জন্য স্টেজের কাজ করছিলাম। বিদ্যুৎ চলে গেলে চা খাওয়ার জন্য নিচে আসি। তখন একজন নারী শিক্ষার্থী ও তার সঙ্গে থাকা একজন ছেলে জুতা পায়ে শহীদ মিনারে উঠে। তাদেরকে এ বিষয়ে বললে মেয়েটি বলেন, ‘আমার ইচ্ছা তাই জুতা পায়ে উঠেছি’। একপর্যায়ে ছেলেটি আমার উপর চড়াও হন। এরপর আমি তাকে আঘাত করেছি এটা বলে তার বন্ধু অনিককে ফোন দেয়।
তিনি আরও বলেন, তখন অনিক এসে আমার ওপর অতর্কিত হামলা করে। এরপর তার সঙ্গে থাকা প্রায় ১৫ জনের বেশি ছেলে এসে আমার ওপর হামলা করে। অনিকই আমার ওপর প্রথম হামলা শুরু করে। তারা কয়েক দফায় শহীদ মিনারের সামনে এবং গণিত বিভাগের সামনে হামলা করে। আমার বুকে কিল-ঘুষি ও পেটে লাথি মারে। শহীদ মিনারে থাকা একটি বাঁশ দিয়েও আমাকে আঘাত করে অনিক। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার বান্ধবী তামান্না ও বাসারও আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী অনিক বলেন, আমার বন্ধু মাহী আমাকে ফোন দিলে শহীদ মিনারে যাই। গিয়ে দেখি তার (মাহী) সঙ্গে একজনের (আকাশ) কথা কাটাকাটি চলছে। এ সময় আমি অসুস্থ থাকায় পেছনে ছিলাম বাকিরা গিয়ে আকাশকে মেরেছে।
এ বিষয়ে রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, আমার বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে এভাবে আমার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকের সামনে মারছে এটা দুঃখজনক। প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীই আমার সন্তান। সন্তানের শরীরে এমন আঘাত দেখলে যেকোনো পিতারই কষ্ট হবে। অবশ্যই এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিচার চাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতি দ্রুতই ব্যবস্থা নিবে আমাকে বলেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, সন্ধ্যার দিকে শহীদ মিনার চত্বরে একটা মারামারির ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। সহকারী প্রক্টর ফেরদৌস স্যার তাৎক্ষণিক উপস্থিত হয়েছেন। রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান আমাকে বিষয়টি অবগত করেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, এটা বিভাগের শিক্ষার্থীদের একটা বিষয় বলে জেনেছি। ছাত্রদলের কেউ জড়িত কী না খতিয়ে দেখব।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জিয়াউদ্দিন বাসেত বলেন, ঘটনা শোনার পর অনিক ঘটনাস্থলে ছুটে গেছে। এখানে অনিকের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি তার।