রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চায় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা

তিতুমীর কলেজ
তিতুমীর কলেজ  © ফাইল ছবি

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাসের দাবি করেছেন তারা। সারা দেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও হলগুলোকে রাজনীতি মুক্ত ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। 

কলেজটিতে আওয়ামী লীগ সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত হলগুলো ছাত্রলীগের দখলে ছিল। হলে থেকে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আধিপত্য বিস্তার করেছে। বিভিন্ন সময় চাপ প্রয়োগ করেছে শিক্ষার্থীদের উপর। করেছে নির্যাতন, শোষণ উৎপাত।

স্বৈরাচার সরকার পতন হওয়ার সাথে সাথে তিতুমীর কলেজ থেকে পালিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগ মুক্ত হয় তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাস ও হলগুলো। বুধবার (৭ আগস্ট) কলেজটির আবাসিক হলগুলোতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

তিতুমীর কলেজের তানজিলা আক্তার বলেন, যে রাজনীতির কারণে আমাদের ভাইদের জীবন চলে যায়, সেই রাজনীতি আমরা চাই না। আমরা সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিভাগ ও ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম। আমরা কোনো ছাত্র ভাই-বোন কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হবো না। 

শিক্ষার্থীরা জানান, এখন থেকে হলগুলোতে কোনো রাজনৈতিক নয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরা থাকবে। আজকে আমরা যে বিজয় নিয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি সে বিজয় আমাদের ধরে রাখতে হবে। এই স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতে হবে। 

এই হুমকি যাতে আমাদের না দিতে পারে, ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে সেটা যেন জনগণের সরকার হয় সেটা সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। আমাদের সব সময় সচেতন থাকতে হবে ক্যাম্পাসের হল গুলো যেন আমাদের ছাত্রদের অধিকারে থাকে। ক্যাম্পাসে অতিশীঘ্রই যেন চাকসু চালু করা হয়। ক্যাম্পাসে কোনো দলীয় রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে। কোনো ধরনের রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন কে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইলে তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা কেমন ক্যাম্পাস প্রত্যাশা করেছেন তা নিয়ে পনেরো দফা দাবি উত্থাপন করেন। 

তাদের সেই দাবি গুলো হলো- সরকারি তিতুমীর কলেজকে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করা হলো। আগামী ৬০ কর্ম দিবসের মধ্যে তিতুমীর কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। সরকারি তিতুমীর কলেজের সকল প্রশাসনিক আয়োজন এবং নিম্নে স্বাক্ষরিত সংগঠনগুলোর আয়োজনে রাজনৈতিক ব্যানারে কাউকে কোন প্রকার অতিথি করা যাবে না। শেখ কামাল ছাত্রাবাসের নামকরণ 'শহীদ মামুন ছাত্রাবাস' করতে হবে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর এবং নিম্নে স্বাক্ষরিত সংগঠনগুলোর উপর কোন আক্রমণ হলে সকল সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং তাদের বিরুদ্ধে কলেজ প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন রকম অতিরিক্ত ফি ফরম ফিলাপের সময় নিতে পারবে না।
নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে কলেজ ক্যান্টিন চালু করতে হবে। জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির নামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন চাঁদা আদায় করা যাবে না এবং ক্লাস প্রতিনিধি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত করতে হবে।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা এবং সংগঠনের সদস্যরা কোন ধরনের হয়রানি শিকার হলে প্রশাসনকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে র‍্যাগিংকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরি সুবিধা আন্তর্জাতিক মানের করতে হবে এবং খেলাধুলার পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্রাবাসের সিট বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে ১ম বর্ষের জন্য ৪০ শতাংশ, ২য় বর্ষের জন্য ২০ শতাংশ, ৩য় বর্ষের জন্য ১০ শতাংশ, ৪র্থ বর্ষের জন্য ১০ শতাংশ, মাস্টার্স এর জন্য ১০ শতাংশ এবং সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সহশিক্ষা মূলক সংগঠনগুলোর জন্য ১০ শতাংশ হারে বরাদ্দ দিতে হবে। ছাত্র সম্মুখে লটারির মাধ্যমে বরাদ্দের ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে।

সকল সংগঠনের নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে রুম বরাদ্দ দিতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য অডিটোরিয়ামে সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। একাডেমিক ভবনের নামকরণ রাজনীতি করণ করা যাবে না। ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে কোনো রাজনৈতিক ব্যানার পোস্টার থাকবে না। সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সহশিক্ষা মূলক সংগঠনগুলোর জন্য বাৎসরিক বরাদ্দ প্রদান করতে হবে এবং স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনায় অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। নতুন সংগঠন অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে সংগঠনগুলোর সাথে আলোচনা করতে হবে। নিম্নে উল্লিখিত সংগঠনগুলোর আয়োজন সফল করতে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা ঐক্য বদ্ধ হয়ে কাজ করবে।

এছাড়া প্রশাসনিক আয়োজনে কোন সংগঠন যুক্ত হলে তাদের পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান তারা।


সর্বশেষ সংবাদ