কুবি শিক্ষকরা এক কলম লিখতে পারে না— দাবি উপাচার্যের

ক্ষমা চাওয়ার আহবান শিক্ষক সমিতির

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ‘শিক্ষকরা এক কলম লিখতে পারে না, শিক্ষকরা ক্লাস পরীক্ষা নেয় না, শিক্ষকরা গবেষণা করে না, তারা টাকা দিয়ে পাবলিকেশন করে’ এমন কথা বলার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এমন মন্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে দাবি করে বক্তব্য প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

শনিবার (৯ মার্চ) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানান তারা। 

প্রতিবাদ লিপিতে শিক্ষক নেতারা বলেন, গত ৬ মার্চ দুপুর আড়াই টায় উপাচার্য শিক্ষকদের সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে উচ্চস্বরে চিৎকার করে এসব কথা বলেন। যার ভিডিও রেকর্ড শিক্ষকদের কাছে সংরক্ষিত আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৯২ জন শিক্ষক দেশে-বিদেশে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণা কাজ পরিচালনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল শিক্ষক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ইউজিসির অর্থায়নে গবেষণা প্রকল্প পরিচালনার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং প্রতিষ্ঠান এর অর্থায়নে গবেষণা প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে গবেষণাকর্ম সম্পাদন করছেন। স্বীকৃত এবং আন্তর্জাতিক মানের মানসম্পন্ন জার্নালে গবেষণা প্রকাশনা করছেন। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা পরিচালনা, মাঠকর্ম তত্ত্বাবধান, রিসার্চ মনোগ্রাফ সুপারভিশন এবং থিসিস সুপারভাইজার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। শিক্ষকরা যদি ক্লাস-পরীক্ষা না নেন, গবেষণা না করেন, গবেষণা আর্টিকেল প্রকাশ না করেন, তাহলে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন জট দূর হয়েছে, কীভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্মরত শিক্ষকরা আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে স্কলারশিপসহ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন, কীভাবে আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশবিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ, শিক্ষকতা এবং অন্যান্য পেশাগত ক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছে, কীভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিং বৃদ্ধি পাচ্ছে? 

প্রতিবাদ লিপিতে তারা আরও বলেন, বিশেষভাবে উল্লেখ্য, আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, গবেষণা, বিসিএস শিক্ষা, প্রশাসন, পুলিশ, করসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, মাল্টিন্যাশনাল ও কর্পোরেট সেক্টরসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পেশাদারিত্বের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক পরিসরেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতা, গবেষণার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহে চাকরি করছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অর্জন গত দুবছরের নয়, এ অর্জন ২০০৬ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পঠন-পাঠন এবং গবেষণায় নিরলসভাবে শিক্ষকদের প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণের ফসল। 

‘উপাচার্য তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মান-সম্মান ক্ষুণ্ন করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাহানী করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি জাতির সামনে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। তার এ বক্তব্যে দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ, চাকুরিদাতা প্রতিষ্ঠানসমূহ অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কর্মপরিবেশে দ্বিধা বিভক্তি এবং কম যোগ্যতাসম্পন্নদের অতিরিক্ত সুযোগ- সুবিধা প্রদান এবং অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্নদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আসছেন। তার এ ধরনের বক্তব্য এবং কর্মকাণ্ডে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে কিংবা যথাযথভাবে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।’ তারা যুক্ত করেন। 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি উপাচার্যের এ বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায়।


সর্বশেষ সংবাদ