ছাত্রীরা প্রশাসনের কাছে না গিয়ে আদালতে যাওয়ায় নাখোশ জবি

জবির বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছাত্রী হল
জবির বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছাত্রী হল  © ফাইল ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছাত্রী হলের আসন বরাদ্দ পাওয়া বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এ নির্দেশনাকে ছাত্রীরা ‘বৈষম্যমূলক বিধান’ উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও হল প্রভোস্ট বরাবর ওই নির্দেশনা প্রত্যাহার চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, হল ছাড়ার নোটিশে ছাত্রীরা তাদের কাছে যেতে পারতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, রেজিস্ট্রার, ট্রেজারার কিংবা প্রক্টর আছেন; তারা তাদের কাছে যেতে পারতেন। কিন্তু তারা (ছাত্রী) সেটা না করে সরাসরি আদালতে চলে গেছেন। এখন আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই কার্যকর হবে।

ছাত্রীরা যেহেতু আমাদের কাছে না এসে আইনের কাছে গেছেন; সুতরাং এখন কোর্ট যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তাই মেনে নেবো। -হল প্রশাসন

এর আগে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর (সোমবার) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। পরে এ নির্দেশনার প্রতিক্রিয়ায় দুদিন পরেই অর্থাৎ ২৭ সেপ্টেম্বর (বুধবার) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. সোলায়মান তুষার ছাত্রীদের পক্ষে ওই আইনি নোটিশ ডাক ও ই-মেইল যোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পাঠিয়েছেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘‘ছাত্রীরা যেহেতু আমাদের কাছে না এসে আইনের কাছে গেছেন; সুতরাং এখন কোর্ট যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তাই মেনে নেবো।’’

ছাত্রীদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পাঠানো আইনি নোটিশে আইনজীবী বলেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি, বিবাহিত ও গর্ভবতী হওয়ার কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রীরা আবাসিক সিট পাবে না বলে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ জবি প্রশাসনের

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে আবাসিকতা লাভ ও বসবাসের শর্তাবলি এবং আচরণ ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা-২০২১ এর ১৭নং ধারা মোতাবেক বিবাহিত ও গর্ভবতী ছাত্রীরা আবাসিক সিট পাবেন না বিধায় তারা অতিদ্রুত হলের সিট ছেড়ে দেবে। অন্যথায়, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এই মর্মে গত ২৫ সেপ্টেম্বর হলে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছাত্রী হলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হলের আবাসিকতা লাভ ও বসবাসের শর্তাবলি এবং আচরণ ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা ২০২১ এর ১৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী বিবাহিত ও গর্ভবতী ছাত্রীরা হলে সিট পাবে না। তারা অতিদ্রুত হলের সিট ছেড়ে দেবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

হল প্রশাসনের এই বিধানের ফলে কার্যত বিবাহিত ও গর্ভবতী ছাত্রীরা হলের আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। -আইনজীবী 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যে সব মেয়ে শিক্ষার্থীর মাস্টার্সের রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে তারা অতিদ্রুত হল ত্যাগ করবে। পাশাপাশি কোনো মানোন্নয়ন (মাস্টার্স) পরীক্ষার্থী ও এম.ফিল ছাত্রী হলে থাকতে পারবে না বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সোলায়মান তুষার বলেন, এই বিধানের ফলে কার্যত বিবাহিত ও গর্ভবতী ছাত্রীরা হলের আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে ছাত্রীদের মধ্যে মারাত্মক অসন্তোষ এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বৈষম্যমূলক বিধান থাকার বিষয়টি প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ