ছাত্রাবাসে ৩০ শিক্ষার্থীসহ সাংবাদিক নির্যাতন, চার ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার
- রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৪৫ PM , আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩৩ AM
রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসে সাংবাদিকসহ ৩০ সাধারণ শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ৪ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে আগামী ৬ মাসের জন্য সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়েছে রাজশাহী মহানগর শাখা ছাত্রলীগ।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম ও সাধারণ সম্পাদক ডা. সিরাজুম মুবিন সবুজ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হলেন- নগর ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক শাহরুখ আলম, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক কাওসার আজম রাফি, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য রাজু আহম্মেদ ও রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের কর্মী ওয়ালিউর রহমান রিফাত। তারা সবাই রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্তের অনুসারী।
এ বিষয়ে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, আমরা যারা ছাত্রলীগ করি সাধারণ ছাত্রদের ভালোর জন্যই করি। তাদের পড়াশোনা এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করাই আমাদের কাজ। ছাত্রলীগের প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও এমন দিক নির্দেশনাই ছিল।
এছাড়া, আমাদের নেতা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন ভাই বা অর্ণা জামা তাদেরও দিক নির্দেশনা এমন। যারা ছাত্রলীগ করে সাধারণ ছাত্রদের আঘাত করবে বা ক্ষতিগ্রস্ত করবে তারা অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থার মধ্যে পড়বে বলেও উল্লেখ করেন ছাত্রলীগ সভাপতি।
তিনি আরও বলেন, তারা (বহিষ্কৃতরা) ইতোপূর্বে এরকম কাজ মনে হয় করেনি। আমরা তাদেরকে কাউন্সিলিং করব, তারা যদি তাদের আচরণ শোধরায় তবে অবশ্যই আমরা অব্যাহতি তুলে নেব।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি জোর করে দলীয় প্রোগ্রামে নিতে রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির (আরসিআরইউ) দুই শিক্ষানবীশ রিপোর্টার শরিফুল ইসলাম ও সাকিবসহ অন্তত ৩০ সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। হামলাকারী শাহরুখ, রাফি, ইমন, তরিকুল, রাজু, হাসান, আহসানসহ সবাই রাশিক দত্তের অনুসারী বলে জানা যায়।
পরে বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে) ও রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আরটিজেএ) নেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্তকে। এই সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণে লিখিত সুপারিশ করতে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি রাশিক।
অভিযোগ ওঠে, কলেজ ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক মিছিল-মিটিংসহ দলীয় কর্মসূচিতে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ। যেতে না চাইলে মারধরসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। নির্যাতন করা হয় টর্চার সেলে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা অসুস্থ থাকলেও ছাড় পান না শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও রয়েছে সিট বাণিজ্যের অভিযোগ। সাধারণ শিক্ষার্থীরা মা-বাবা তুলে গালিগালাজসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হন প্রতিনিয়তই।
এ ঘটনায় সাংবাদিকদের নিয়ে ছাত্রাবাস পরিদর্শনে গিয়ে ছাত্রলীগের তোপের মুখে পড়েন কলেজ অধ্যক্ষ। এক পর্যায়ে কলেজ অধ্যক্ষ, ছাত্রাবাসের সুপারসহ সাংবাদিকদেরও প্রকাশ্যে হুমকি দেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
তবে, সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের সামনে কলেজ অধ্যক্ষকে হুমকি দেওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক এবং ছাত্রাবাস সুপার ও ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মানিক। পরে কলেজ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের ডাকলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা রুমে ফিরে যায়।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে হামলা চালায় রাশিক দত্তের অনুসারী ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীরা। পরে দেড় বছর নেতৃত্বহীন থাকার পর ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসেন রাশিক দত্ত ও আশরাফুল ইসলাম জাফর। ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই নানা অপকর্মে সমালোচিত হন রাশিক।
সম্প্রতি কলেজ হোস্টেলের কক্ষে মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল হলে আলোচনায় আসেন রাশিক দত্ত। যা জাতীয় সংবাদমাধ্যমেও প্রচারিত হয়েছে। এ ছাড়াও সালাম না দেওয়া, দেখে না দাঁড়ানো, মিছিলে না আসা, প্রোগ্রামে না যাওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনায় ক্যাম্পাসে ও হোস্টেলে একাধিক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন বলে রাশিক ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।