গুচ্ছে মাইগ্রেশন বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের 

গুচ্ছে মাইগ্রেশন বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে খুলনায় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
গুচ্ছে মাইগ্রেশন বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে খুলনায় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন  © টিডিসি ফটো

গুচ্ছ অধিভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে মাইগ্রেশন বন্ধে কমিটির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন ও উপাচার্যদের বরাবর স্মারকলিপি করেছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও, এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (জাককানইবি) এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি)। এর আগে ২০ ডিসেম্বর শিক্ষার্থীরা মাইগ্রেশন চালু রাখতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।

বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সপ্তম মেধাতালিকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধের পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয় গুচ্ছ ভর্তি সংক্রান্ত মূল কমিটি। যদিও টেকনিক্যাল কমিটির অধিকাংশ সদস্য এই সিদ্ধান্ত বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছিলেন।

আজকের স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যদের কাছে দাবি জানিয়েছেন, গুচ্ছ ভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধ করার সিদ্ধান্তে তারা ভালো স্কোর নিয়ে ভালো সাবজেক্ট এ পড়ার সুযোগ পাবে না ও পছন্দমতো আবেদনের সুযোগ পেলেও একটি প্রতিষ্ঠানে (বিশ্ববিদ্যালয়ে) ভর্তি থাকায় তা পরিবর্তনের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। মাইগ্রেশন চালু করে ও সিট ফাঁকা রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ না করা দাবিও জানানো হয়েছে ওই স্মারকলিপিতে।
তারা বলছে, এ সিদ্ধান্তের ফলে ভালো স্কোর করেও তারা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে বা ভালো সাবজেক্টে ভর্তি হতে পারবেন না। যা তাদের সাথে অন্যায় করা হবে। একজন শিক্ষার্থী কম স্কোর নিয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে বা ভালো সাবজেক্টে ভর্তি হলে তারা অবিচারের শিকার হবেন। 

আরও পড়ুন: অপরিকল্পিত উচ্চশিক্ষা: মেধা আর অর্থ দুটোরই অপচয়

সভায় উপস্থিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সপ্তম মেধাতালিকা থেকে গুচ্ছের বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সেটিই বহাল রাখা হয়েছে। এটি পরিবর্তন হচ্ছে না। গুচ্ছভুক্ত অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাইগ্রেশন বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন।

যদিও তিনি দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধ না করলে ক্লাস শুরুর প্রক্রিয়া অনেক পিছিয়ে যাবে। এতে সেশনজট তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে মাইগ্রেশন বন্ধ রাখার পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ছাত্রী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, তিনি দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। বিগত পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে তার সর্বোচ্চ ফলাফল এবং ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি মাইগ্রেশনে আবেদন করলে তার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তির সুযোগ আসে। তিনি অপেক্ষায় ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও। কিন্তু এখন নতুন সিদ্ধান্তের ফলে তিনি আবার শাবিপ্রবিতেও ভর্তি হতে পারবেন না। আবার তিনি নোবিপ্রবিতেও ভালো বিষয় পাবেন না। ফলে, তিনি আশংকা করছেন তার উচ্চশিক্ষায় বড় ধরনের ক্ষতির। তিনিও দাবি জানান, নতুন নতুন সিদ্ধান্ত বাতিল করার এবং মেধার মূল্যায়ন করার। 

আরও পড়ুন: 'সবই যখন আলাদা, তাহলে গুচ্ছের আর কি দরকার?'

এর আগে গত সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) ভর্তি কমিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে সপ্তম মেধাতালিকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায় গুচ্ছ কমিটি। তারা বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সপ্তম মেধাতালিকা থেকে ভর্তিচ্ছুরা গুচ্ছভুক্ত এক বা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিবেচিত হলে তাকে অবশ্যই তার পছন্দমত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় গুচ্ছভুক্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না।

এই পর্যায় থেকে প্রাথমিক ভর্তিকৃত বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে না (বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ)। ভর্তিকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বিভাগ পছন্দক্রম ও মেধা স্কোরের ভিত্তিতে প্রযোজ্যক্ষেত্রে বিভাগ মাইগ্রেশন চলমান থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জুলাই দেশের ১৯ কেন্দ্রের ৫৭টি ভেন্যুতে একযোগে গুচ্ছের ‘ক’ ইউনিটের, ১৩ আগস্ট মানবিক অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের এবং ২০ আগস্ট বাণিজ্য অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গুচ্ছের এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ‘ক’ ইউনিটে ৮৫ হাজার ৫৮২ জন, ‘বি’ ইউনিটে ৪৮ হাজার ১০৬ জন এবং ‘সি’ ইউনিটে ২৩ হাজার ২২৮ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী পাস করেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ