নীরবে-নিভৃতে গেল ঢাকা কলেজের ১৮১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একেবারে কোন ধরনের কর্মসূচিই পালন করেননি কলেজ প্রশাসন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একেবারে কোন ধরনের কর্মসূচিই পালন করেননি কলেজ প্রশাসন  © টিডিসি ফটো

১৮২ বছরে পদার্পণ করেছে ইতিহাস ঐতিহ্যের বিদ্যাপিঠ ঢাকা কলেজ। ‘নিজেকে জানো’ মূলমন্ত্র ধারণ করে দীর্ঘ ১৮১ বছরের পথচলার সমাপ্তি ঘটলো। দীর্ঘ এই সময়ে শিক্ষার আলো বিতরণের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ তৈরির কারখানা হিসেবেই পরিচিত শতবর্ষী এই বিদ্যাপিঠ।

১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কলেজটি হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলা তথা শিক্ষা বিস্তারের মূল কেন্দ্রবিন্দু। শুধু ঢাকা নগরীই নয় এই উপমহাদেশের বিদ্যারণ্যে প্রবীণ এক বৃক্ষের নাম ‘ঢাকা কলেজ’।

তবে এই প্রাচীন এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিদ্যাপীঠের ১৮১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যেন  অনেকটা নীরবে-নিভৃতেই এবং অবহেলায়  পালিত হল। জন্মদিনে ছিল না কোনো আয়োজন। কলেজ দেখে বোঝার উপায় নেই যে আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

একেবারে কোন ধরনের কর্মসূচিই পালন করেননি কলেজটির প্রশাসন। অন্যান্য দিনগুলোর মতোই শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এমন অবস্থায় বেশ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কলেজের সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা। 

তারা বলছেন, গৌরব ঐতিহ্যের এতটা বছর পেরিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন না করা চরম হতাশার। কলেজ প্রশাসনের উচিত ক্যাম্পাসে জাঁকজমকপূর্ণ প্রতিষ্ঠাবার্ষীকি উদযাপন করা।

সাব্বির আহমদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা রীতিমত অবাক এবং বিস্মিত হয়েছি। এত প্রাচীন প্রতিষ্ঠানের জন্মবার্ষিকীতে কোন আয়োজন কলেজ প্রশাসন করতে পারেননি। নিঃসন্দেহে এটি হতাশার এবং বিস্ময়ের। দেশের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে অসংখ্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব যেই কলেজ দিয়েছে তার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কোন আয়োজন নেই এটি লজ্জারও।

আরও পড়ুন: ঢাকা কলেজের নকশা গ্যাসটিনের, ভিত্তিপ্রস্তর ড্যানিয়েলের

আক্ষেপ করেন সাবেক শিক্ষার্থীরাও। মোস্তফা কামাল নামের এক সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, ১৮১ বছরের পথচলা ঢাকা কলেজের শেষ হলো। অথচ কলেজের প্রতিষ্ঠার তারিখ নিয়ে ধুম্রজালের  সমাধান প্রশাসন করতে পারেননি। দেশের এত জ্ঞানী গুণী শিক্ষকরা এখানে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিতরন করেন অথচ এই বিষয়টি নিয়ে কেউ কোন কাজ করেন না। এটি একটি বড় প্রশ্ন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন এমন নিরুত্তাপ আয়োজন আমাদের হতাশা করেছে।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়  যায়, ১৮৬৬ সালে ঢাকায় কর্মরত ইংরেজ জয়েন্ট কালেক্টর আর্থার লয়েড ক্লে'র লেখা ‘Principal Heads of the History and statistics of the Dacca Division’ নামক এক প্রতিবেদনে ঢাকা কলেজের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে চমৎকার তথ্য পাওয়া যায়। তাঁর লেখা এই প্রতিবেদনটি পরবর্তী ১৮৬৮ সালে প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়- “The COLLEGE OF DACCA Founded by the British Government of India, for the instruction of the native youths of the Estern Districts of Bengal in European literature and Science.

The first stone of the edifice is laid by the Right Reverend Daniel,Lord Bishop of Calcutta, and Metropolitan of India. On the 20th day November, A.D. 1841, in the reign of Her most Majesty.”

অর্থাৎ এখানে ঢাকা কলেজ প্রতিষ্ঠার তারিখ হিসেবে ২০ নভেম্বরের কথাই উল্লেখ আছে। ১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর কলকাতার বিশপ রেভারেন্ড ড্যানিয়েল ঢাকা কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও ঐ ভবনের নকশা করেছিলেন কর্নেল গ্যাসটিন। খাঁটি ব্রিটিশ ঢঙ আর বিলাতি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির আদলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানটি পালন করা হয়।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, এই তারিখ নিয়ে একটু ঝামেলা আছে। আমাদের সম্পাদক (শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক) বলেছে নভেম্বরের ২০ তারিখে আবার শুনেছি ডিসেম্বরের ৫ তারিখ।এটা নিয়ে কাজ চলছে আশা করি আগামী এক মাসের মধ্যে সঠিক তারিখ পেয়ে যাবো । 

তবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর তারিখের বিষয়টি মীমাংসিত এবং ঢাকা কলেজ থেকে প্রকাশিত ‘উৎস’ গ্রন্থেও প্রতিষ্ঠার তারিখ হিসেবে ২০ নভেম্বরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে জানালে তিনি বলেন, আমাকে তো এসব কেউ বলেননি। এবার যেহেতু আয়োজন করা সম্ভব হয়নি আগামী বছর ঘোড়ার গাড়ি এনে ঢাকঢোল পিটিয়ে পালন করবো।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তনের  একটি ভেন্যু ঢাকা কলেজ হওয়াতে  আমরা এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে এই দিকে নজর দিতে পারিনি। আবার ১৮৪১ সালের এই তারিখের অকাট্য কোন প্রমাণও পাওয়াও একেবারে কঠিন। একজন গবেষক বিষয়টি নিয়ে গবেষনা কাজ করছেন।