মালয়েশিয়ায় চাকরির খরচ ৭৯ হাজার থেকে বেড়ে পাঁচ লাখ

মালয়েশিয়ায় চাকরির খরচ ৭৯ হাজার থেকে বেড়ে পাঁচ লাখ
মালয়েশিয়ায় চাকরির খরচ ৭৯ হাজার থেকে বেড়ে পাঁচ লাখ  © সংগৃহীত

সিন্ডিকেটের কারণে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমশক্তি রপ্তানির ব্যয় বেড়েছে কয়েক গুণ। তারপরও সেই সিন্ডিকেট ভাঙছে না। ফলে সিন্ডিকেটের হাতেই যাচ্ছে শ্রমিকদের হাজার হাজার কোটি টাকা। এর আগেও সিন্ডিকেটের এমন দৌরাত্ম্যে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল মালয়েশিয়া। 

নতুন করে আবার বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশের পর মালশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে ব্যয় কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে খরচ কমিয়ে আনতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশ থেকে মাত্র একশ এজেন্টের তালিকা পাঠানো হয়েছে মালয়েশিয়াকে।

জানা গেছে, মালয়েশিয়া সরকার চাচ্ছে বাংলাদেশের সব যোগ্য রিক্রুটিং এজেন্ট মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ পাক। কিন্তু ওই তালিকাতেই অটল রয়েছে বাংলাদেশ।

এর আগে ২০১৮ সালে সিন্ডিকেটের কারণেই বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল মালয়েশিয়া। ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর আবারো বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রমিক নেয়ার চুক্তি করে দেশটি।

এরপর দুই মাসের মধ্যে দুই লাখ কর্মী নেয়ার কথা থাকলেও দেড় বছরে নেয়া হয়েছে মাত্র ৬০ হাজার। একশটি রিক্রুটিং এজেন্সি সিন্ডিকেট করে ওই কর্মী পাঠায়। ফলে অভিবাসনের ব্যয়ও অনেক বেশি পড়ছে।

এই অবস্থায় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন বিন ইসমাইল শনিবার দুই দিনের সফরে ঢাকা আসেন। তিনি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ছাড়াও জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

দুই মন্ত্রী যা বললেন

বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদের সঙ্গে বৈঠকের পর মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে কর্মী  নেয়া সহজ করতে চায় মালয়েশিয়া। আমাদের আজকে (রবিবার) দুইটি ইস্যুতে ফলপ্রসূ আলাপ হয়েছে। প্রথমত রিক্যালিব্রেশন (অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করা) প্রোগ্রাম আরো করা। দ্বিতীয়ত, মালয়েশিয়া সরকার অভিবাসন ব্যয় কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।''

আরও পড়ুন: ইন্টার্নশিপ করতে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন সিভাসুর ৫১ শিক্ষার্থী

তিনি বলেন, ‘‘আমরা আগের করা সমঝোতা চুক্তি নিয়ে কথা বলেছি। আলোচনার একটা বড় অংশ জুড়েই ছিল এই চুক্তি। মালয়েশিয়া সরকার জনশক্তি রপ্তানি প্রক্রিয়াকে সহজতর করতে চায়, যাতে মূল লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। মূল লক্ষ্য হচ্ছে, চাহিদা পূরণ করা, ব্যয় কমানো ও বিদেশি কর্মীদের সম্মান রক্ষা করা। যদি বর্তমান প্রক্রিয়ায় সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো না যায়, আমরা পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত। সেজন্য আমরা আলোচনায় বসবো। আমি মন্ত্রী ইমরান আহমেদকে অনুরোধ জানিয়েছি সহযোগিতার জন্য, বাংলাদেশ যেন তাদের অংশটুকু পালন করে, যেন আমরা আমাদের কর্মীর চাহিদা পূরণ করতে পারি।’’

বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ সিন্ডিকেট ও এজেন্সি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে মালয়েশিয়ায় নতুন সরকার। তাই আমাদের আগের করা এমওইউতে পরিবর্তন আসবে। আমাদের জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হবে। সেখানে অভিবাসন ব্যয়সহ আরো অনেক বিষয় ঠিক করা হবে।’’

সিন্ডিকেট সক্রিয়

২০২১ সালে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের এমওইউ সই হওয়ার পর বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি ৬০ হাজারের মত কর্মী পাঠিয়েছে। কিন্তু মালয়েশিয়া পাঁচ লাখেরও বেশি কর্মী নিতে চায় বাংলাদেশ থেকে। মালয়েশিয়ার নতুন সরকার চায় এমওইউ রিভাইজ করতে। ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় শ্রমশক্তি পাঠানোর জন্য যে নির্ধারিত তা তারা মানতে চায় না। তারা চায় এটা সবার জন্য উন্মুক্ত করা হোক।

কারণ এই এজেন্সিগুলো জন প্রতি চার লাখ ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে নিয়েছে। এই টাকা খরচ করে যারা মালয়েশিয়া গিয়েছে তাদের পক্ষে এই টাকা কাজ করে তোলা কঠিন।

সিন্ডিকেটের এজেন্সিগুলো কর্মীদের মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে তাদের নির্ধারিত হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাচ্ছে। তাতে জনপ্রতি নেয়া হচ্ছে  ১৬ হাজার টাকা করে। তারা এরইমধ্যে কয়েক লাখ কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামেও বিপূল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ।

অভিযোগ আছে, সিন্ডিকেট প্রতি কর্মীর কাছ থেকে কমপক্ষে চার লাখ টাকা বেশি নিচ্ছে। এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষায় পাঁচশ টাকার পরিবর্তে ১৬ হাজার টাকা নিয়ে জন প্রতি ১৫ হাজার ৫০০ টাকা বেশি নিচ্ছে।

বায়রার যুগ্ম সম্পাদক মো. টিপু সুলতান বলেন, ‘‘এই সিন্ডিকেটের কারণে যারা মালয়েশিয়া যেতে চান তাদের যেমন খরচ বেড়ে গেছে, তেমনি এজন্সির খরচও বেড়ে গেছে। সিন্ডিকেটে ঢুকতে প্রতি এজেন্সিকে দিতে হয় আট কোটি টাকা। কর্মী প্রতি  সিন্ডিকেটকে দিতে হয় এক লাখ সাত হাজার টাকা। মন্ত্রী বললেন, একজনকে মালয়েশিয়া যেতে খরচ হবে ৭৯ হাজার টাকা। আর এখন খরচ হচ্ছে পাঁচ লাখ টাকা।’’

তার কথা, ‘‘এটা শুধু বাংলাদেশেই। মালয়েশিয়া আরো ১৪টি দেশ থেকে লোক নেয়। সেখানে সিন্ডিকেট নেই। নেপালে এক হাজার ৬০০ এজেন্সি। তারা সবাই লোক পাঠায়। আমাদের ২০০০ এজেন্সি। আমাদের সবাইকে সুযোগ দেয়া উচিত। তাহলে কম খরচেই কর্মীরা মালয়েশিয়া যেতে পারবেন।’’

সংগঠনটির সভাপতি আবুল বাসার বলেন, ‘‘এখনো মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাচ্ছেন। তবে তা ধীর গতিতে। একশ এজেন্সির বাইরে কেউ পাঠাতে পারছে না। খরচের নামে টাকা নেয়া হচ্ছে অনেক বেশি। আমরা মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিষয়গুলো বিস্তারিত জানিয়েছি। মাললেশিয়ার নতুন সরকারও চায় অভিবাসন ব্যয় কমাতে। তারা চায় যে সবাই যেন কর্মী পাঠাতে পারেন। মন্ত্রী মালয়েশিয়া গিয়ে তার সরকারের কাছে বিষয়গুলো তুলে ধরে নতুন একটি ব্যবস্থায় আসার আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের। তাদের নতুন সরকার এমওইউতে পরিবর্তন আনতে চায়।’’ [সূত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা]


সর্বশেষ সংবাদ