উদ্ভাবন ও গবেষণায় বাজার উপযোগী দক্ষ জনবল তৈরিতে কাজ করছে ইউআইইউ’র আইবিইআর
- খাঁন মুহাম্মদ মামুন
- প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪০ PM , আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:০৬ PM

দেশে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং পরবর্তী সময় তরুণদের অনেকেই পিছিয়ে থাকেন দক্ষতার প্রশ্নে। নিয়োগ দাতাদের অভিযোগ, তারা দক্ষ গ্র্যাজুয়েট পাচ্ছেন না। বিপরীতে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির দাবি করলেও হাতে-কলমে শেখার সুযোগ সেখানে সামান্যই। আবার এসব প্রতিষ্ঠানের অন্যতম বড় লক্ষ্য জ্ঞান সৃষ্টি কিংবা গবেষণা হলেও সেটি সম্ভব হচ্ছে দেশের খুব কম উচ্চশিক্ষালয়ে, বেসরকারিতে তো সেটি আরও কম।
তবে ব্যতিক্রম এক্ষেত্রে দেশের প্রথম সারির কয়েকটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। মানসম্মত পাঠদান, শিক্ষার আধুনিক এবং সমৃদ্ধ পরিবেশ, হাতে-কলমে শেখার সুযোগের পাশাপাশি গবেষণায়ও এগিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার পাশাপাশি তাদের রয়েছে নানা সহশিক্ষার আয়োজনও। নিয়মিত অনুষদ ও প্রোগামের বাইরে রয়েছে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানও। যেখানে হাতে-কলমে শিখন-পাঠনের পাশাপাশি থাকে গবেষণার বিস্তৃত সুযোগও।
তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) ইনস্টিটিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স রিসার্চের (আইবিইআর); যেখানে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্র উপযোগী নানা প্রশিক্ষণ এবং গবেষণার সুযোগ দেওয়া হয়। মূলত পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিপ্লোমা প্রোগ্রামের আওতায় নানা ধরনের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে ইনস্টিটিটিউটটি।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) স্কুল অফ বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের নিয়মিত পঠন-শিখনের বাইরে এখানে শিক্ষার্থীদের সময়োপযোগী সব দক্ষতা উন্নয়নে জোর দিয়ে কাজ করা হয়। এর মধ্যে গুরুত্ব পায়, বর্তমান বাজার চাহিদা এবং প্রাযুক্তিক নানা চ্যালেঞ্জ।
ইনস্টিটিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স রিসার্চের (আইবিইআর) অধীনে রয়েছে— পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ডিজিটাল মার্কেটিং, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ডেটা সায়েন্স, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট। এছাড়াও এই ইনস্টিটিউটের অধীনে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ইসলামিক ফিন্যান্সও চালুর কথা রয়েছে।
এসব প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাজারে নিজেদের দক্ষ এবং যোগ্য হিসেবে প্রমাণের সুযোগ পাচ্ছেন। গতানুগতিক সিলেবাসের বাইরে গিয়ে আইবিইআর শিক্ষার্থীদের হাতে ধরে শেখানোর চেষ্টা করছে বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যগুলো। পাশাপাশি হালনাগাদ সব প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য প্রতিনিয়তই সময়োপযোগী করা হয় এখানকার সিলেবাস।
আইবিইআর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এখানকার কোর্সগুলো সাজানো হয়েছে। এতে করে তারা 'আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তথা এআই'য়ের মতো বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের শেখানোর চেষ্টা করছেন। এখানকার কোর্সগুলো শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতা এবং বাজার চাহিদার সম্পূরক হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি এখানকার গবেষণার সুযোগ আরও বেশি সমৃদ্ধ করবে বিদ্যার্থীদের।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, মূলত শিখন-পঠন ও গবেষণাসহ একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের (এসওবিই) অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয় ইনস্টিটিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক রিসার্চ (আইবিইআর)। বিগত ২০০১-০২ সালের দিকে এ ইনস্টিটিটিউটটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল; যার অধীনে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্য রয়েছে দেশে এবং দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণায় অভিজ্ঞ শিক্ষক এবং প্রশিক্ষকবৃন্দ। পাশাপাশি রয়েছেন দেশের ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টরা; যারা সংশ্লিষ্ট খাতে নিজেদের দক্ষতা এবং যোগ্যতায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন দীর্ঘদিন ধরে। একই সঙ্গে রয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীদের তালিকায় থাকা শিক্ষকরাও।
‘‘বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমান প্রায় ১০,০০০ ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে। এখানে শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলা হয়। এজন্য ইউআইইউতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত বিশ্ব স্বীকৃত আনুপাতিক হার মেনে চলা হয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতেই কাজ করেন এখানকার প্রশাসন।’’
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) সুবিন্যস্ত দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাসে মানসম্মত পাঠ গ্রহণের পাশাপাশি এখানে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভাগ থেকে সেরা শিখন অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাবেন।
ছুটির দিনে পরিচালিত হওয়ায় এখান থেকে পাঠগ্রহণের সুযোগ পাবেন চাকরিজীবী শিক্ষার্থীরাও। দুই সেমিস্টারে ১৮ ক্রেডিটে সম্পন্ন করা হবে কোর্সগুলো। চাহিদা এবং উপযোগিতার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে কোর্স ফি। অনলাইনে আবেদন করেই ভর্তি যোগ্যতা যাচাই করতে পারবেন আগ্রহী প্রার্থীরা। নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণের পাশাপাশি সুযোগ রয়েছে অনলাইনে পাঠ গ্রহণেরও।
কোর্স অনুযায়ী বছরের নির্দিষ্ট সময়গুলোতে ভর্তির সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। তবে তার জন্য আসন ফাঁকা থাকা আবশ্যক, বিপরীতে শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হয় পরবর্তী ভর্তির জন্যও। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ওয়েভার বা বৃত্তির সুবিধাও।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি একই প্রতিষ্ঠান কিংবা বাংলাদেশের বিভিন্ন অ্যাক্রিডেটেড প্রতিষ্ঠানের প্রার্থীদের শর্ত সাপেক্ষে এসব ওয়েভার দেওয়া হয়। এছাড়াও ওয়েভার সুবিধা রয়েছে এককালীন কোর্স ফি পরিশোধ করা প্রার্থীদের জন্যও।
সামগ্রিক বিষয়ে ইনস্টিটিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স রিসার্চের (আইবিইআর) পরিচালক হিসেবে ড. মো. কামরুজ্জামান মনে করেন, বর্তমানে রিসার্চে ফান্ডিংয়ের চেয়েও বড় সংকট চিন্তা এবং আগ্রহে। তার মতে, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গবেষণা সংস্কৃতি বাড়ানো গেলে এ সংকট কাটানোর পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রির নিজেরও আত্মনির্ভরশীলতা বাড়বে।
‘‘ইউআইইউয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউকে, জাপান, পর্তুগাল, মালয়েশিয়া থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একাডেমিক কোলাবরেশন আছে। এগুলোর মধ্যে টেক্সাস এএন্ডএম বিশ্ববিদ্যালয় কিংসভিল- ইউএসএ, মিনেসোটা ক্রুকস্টন বিশ্ববিদ্যালয়- ইউএসএ, ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়- ইউকে, নিউ ব্রান্সউইচ বিশ্ববিদ্যালয়- কানাডা, ওয়াকানাই হোসুসি গাকুয়েন বিশ্ববিদ্যালয়- জাপান, পোর্তো বিশ্ববিদ্যালয়- পর্তুগাল, ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া পাহাং - মালয়েশিয়া, চৌধুরী বানসী লাল বিশ্ববিদ্যালয়- ভারত অন্যতম। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে স্টুডেন্ট এক্সচেইনজ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হয়।’’
আমরা আইবিইআরের অধীনে ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা অনুযায়ী গবেষণা করতে চাই। সেজন্য ইন্ডাস্ট্রির সব চাহিদা যেন পূরণ করা সম্ভব হয়, আমরা তার যোগানে কাজ করছি। ইন্ডাস্ট্রির দিক থেকে তারা তাদের চাহিদা জানালে তা আমাদের জন্য আরও সহজ হবে। আমাদের সব আয়োজন রয়েছে এবং এটি প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হচ্ছে।''
বাজার উপযোগী এবং প্রাযুক্তিক চ্যালেঞ্জের প্রশ্নে গুণী এই গবেষক বলছেন, আইবিইআর সময়োপযোগী গবেষণাগুলোই করছে। পাশাপাশি এখানে নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং তার সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির সংযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন। আগামীদিনে এটি আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি। তার স্বপ্ন দেশের গবেষণা সংস্কৃতি বদলানোর পাশাপাশি আইবিইআরও একদিন গবেষণায় নিজের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারবে।