আট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ, বেকায়দায় শিক্ষক-কর্মচারীরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৯ AM , আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৩ AM
বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর দেওয়ার চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবারের বেতন, বোনাস এবং অন্যান্য প্রদেয় বিল পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। এতে বেকায়দায় পড়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
১৫ শতাংশ আয়কর না দেওয়ার অভিযোগ তুলে নর্থ সাউথসহ দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করে দিয়েছে কর উপকমিশনারের কার্যালয় (সার্কেল-৩)। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি জানিয়েছে, দ্রুত তা খুলে না দিলে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়া সম্ভব হবে না। এর মধ্যে আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে।
গত ৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রেজিস্ট্রারকে পাঠানো চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে জানানো হয়, ‘আয়কর আইন-২০২৩-এর ২১৪ ধারা মোতাবেক বকেয়া পরিশোধের নোটিশ পাঠানো হলো। চলতি ১৫ মার্চের মধ্যে কর পরিশোধ করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। এই কর প্রদানে ব্যর্থতায় আয়কর আইন-২০২৩-এর ২৭৫ ধারা অনুযায়ী জরিমানা আরোপসহ অন্যান্য আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।’
কর উপ-কমিশনার মো. জহিরুল ইসলাম ভূইয়ার সই করা চিঠিতে আরও জানানো হয়, ‘যদি ইতোমধ্যে কর পরিশোধ করে থাকেন, তবে পরিশোধিত চালানের কপি বা প্রমাণাদি অথবা কোনও আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকে, তার প্রমাণাদি নিম্নস্বাক্ষরকারীর দফতরে উল্লিখিত তারিখের মধ্যে (১৫ মার্চ) দাখিল করার অনুরোধ করা হলো। অন্যথায়, বকেয়া দাবির ব্যাপারে আপনার পক্ষ থেকে কোনও আপত্তি নেই বলে বিবেচিত হবে।’
একটি সূত্রে জানা গেছে, মোট ৩১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে কর পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছে এনবিআর। এর মধ্যে আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
সেগুলো হলো নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি। এছাড়া কর পরিশোধের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, নটর ডেম ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, এক্সিম ব্যাংক ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে।
এদিকে আইনগত জটিলতা নিরসনের আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর আদায় না করা এবং ঈদের আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাংক হিসাব জব্দ করার মতো চূড়ান্ত পদক্ষেপ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। একই সঙ্গে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে, সেগুলো পুনরায় চালুর নির্দেশনা দেয়ারও অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি। রোববার (৩১ মার্চ) সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ আহবান জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর প্রদান সংক্রান্ত রিট আপিলের নিষ্পত্তি করার ব্যাপারে আদালত কর্তৃক রায় দেওয়া হয়েছে। আদালতের ‘আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণের বিশদ বিবরণ আদেশের পূর্ণাঙ্গ পাঠ’ এখনো প্রকাশিত হয়নি। দুঃখজনকভাবে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছে।
আদালত কর্তৃক পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ এবং তদানুযায়ী আয়কর প্রদান সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কোনোরূপ সুযোগ না দিয়ে রোজা চলাকালীন মুসলমানদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরের পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা একটি অমানবিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রতীয়মান। কেননা, এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়া সম্ভব হবে না।
আরো পড়ুন: তিন সপ্তাহে আত্মহত্যা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ৭ শিক্ষার্থী
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ কোনোরূপ সরকারি অনুদান ব্যতিরেকে কেবলমাত্র শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিসের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, শিক্ষা সামগ্রী ও বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রপাতি ক্রয়, জমি ক্রয় এবং ক্যাম্পাস নির্মাণ সামগ্রীর ওপর বড় অংকের সরকারি ভ্যাট ও কর প্রদান করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সমস্ত ব্যয় মেটানোর পর উদ্বৃত্ত অর্থ (যদি থাকে) সঞ্চয়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ শিক্ষার মানোন্নয়ন, গবেষণা কার্যক্রম, নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণ, বর্ধিত করণ, হোস্টেল নির্মাণ, পরিবহণ ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি কাজ সম্পাদনের উদ্যোগ নেয়।
এমনিতেই করোনা পরবর্তী সময়ে বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা ব্যয় মেটানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে এবং নতুন প্রজন্মের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখন অবধি ট্রাস্টি সদস্যদের ভর্তুকি প্রদান সাপেক্ষে পরিচালিত হয়। তার ওপর করারোপের ফলে পক্ষান্তরে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।