১৫ শতাংশ কর: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সংশোধন চান ট্রাস্টিরা

বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) লোগো
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) লোগো  © ফাইল ছবি

১৫ শতাংশ কর ইস্যুতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এ সংশোধনী চেয়েছেন দেশীয় বেসরকারি উচ্চশিক্ষালয়গুলোর প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি (এপিইউবি)। চলতি সপ্তাহে সংগঠনটির পক্ষ থেকে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আচার্য এবং রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবউদ্দিন বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এ আবেদন জানানো হয়েছে। এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে বলে রায় দেন আপিল বিভাগ। কিন্তু প্রচলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বর্তমানে দেশের বেসরকারি এসব শিক্ষালয় বিবেচিত হচ্ছে ‘অলাভজনক’ হিসেবে। ফলে বিষয়টি একক সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষই।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠি গত ৩ মার্চ পাঠানো হয় রাষ্ট্রপতি বরাবর। চিঠিতে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি অলাভজনক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর দেওয়া সংক্রান্ত ২০২১ সালে দায়ের করা রিট আপিলের নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে ট্রাস্ট পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের ওপর করারোপের সিদ্ধান্তটি আইনগতভাবে সাংঘর্ষিক। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ মোতাবেক ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে অলাভজনক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ৪৪(৭) ধারায় ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলের অর্থ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় ব্যয় ব্যতীত অন্য কোনও উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাইবে না’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আয়কর দেওয়ার নির্দেশনা বিশ্ববিদ্যালয়কে উভয় সংকটে ফেলবে। কেননা, প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলের কোনও অর্থ যেমন উদ্যোক্তা-প্রতিষ্ঠাতারা নিতে পারেন না, তেমনি আয়কর হিসেবে দেওয়া বা অন্যভাবে ব্যয় করার বিষয়টিও সরাসরি আইনের লঙ্ঘন হিসেবেই প্রতীয়মান।

আরও পড়ুন: ১৫ শতাংশ কর: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সংশোধন চান মালিকরা

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ এর আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে সকল প্রকার বিধিবিধান মেনে পরিচালিত জানিয়ে চিঠিতে সংগঠনটি বলেছে, এক্ষেত্রে ট্রাস্ট আইনে পরিচালিত সকল প্রতিষ্ঠানই করের আওতামুক্ত। ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের উপর করারোপ আইনতগতভাবে সাংঘর্ষিক হয় বলেও মত তাদের। 

উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে করারোপের ক্ষেত্রে ভিন্ন আইনে বিশ্ববিদ্যালয় গঠন ও পরিচালনার নজির রয়েছে জানিয়ে চিঠিতে আরও জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ, ব্রিটেনের কনভেনট্রি ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়ার টোরেন্স ইউনিভার্সিটি লাভজনক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচালিত হয়। যার মাধ্যমে সরকার রাজস্ব আদায় করে অন্য খাতে বিনিয়োগ করে। ফিলিপাইন ও চীনে লাভজনক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে জনপ্রিয়। ভারতেও এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন এনে লাভজনক ও অলাভজনক উভয় পদ্ধতির বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার অনুমোদন বিবেচনা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বর্তমানে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও আইনি জটিলতা পরিহার করা সম্ভব বলে অভিমত সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০০৭ ও ২০১০ সালে পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর ১৫ শতাংশ আয়কর আরোপ করে। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীদের করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট অলাভজনক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আয়কর আদায়ের দুটি প্রজ্ঞাপন অবৈধ বলে রায় দেন। ট্রাস্টের অধীনে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ট্যাক্স-ভ্যাটের আওতামুক্ত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে তা রহিত করা হয় বিগত ২০১৫ সালে।

আরও পড়ুন: ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতেই হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে

বিগত ২০২৩ সালের জুন মাসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকারের ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায় সংক্রান্ত আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আয়কর আদায় থেকে বিরত থাকতে আপিল বিভাগের আদেশ বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। একইসঙ্গে আয়কর আদায় নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দায়ের করা ৪৬টি রিট হাইকোর্টে চূড়ান্ত শুনানির আদেশ বহাল রাখা হয়।

২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকারের ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায়ের দুই প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি (লিভ টু আপিল) দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এ আপিল নিষ্পত্তি না পর্যন্ত এ আয়কর আদায় থেকে বিরত থাকতে এনবিআরকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে দেশের বেসরকারি উচ্চশিক্ষালয়গুলোর রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত বিগত ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কর ধার্য করাকে অবৈধ ঘোষণা করেন। এর বিরুদ্ধে সরকারের আপিলের পর আপিল বিভাগ ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এক আদেশের মাধ্যমে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কর আরোপ না করার আদেশ দিয়েছিলেন।

পরবর্তীতে গত ২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে আয়কর দিতে হবে না বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত রিট আবেদনগুলোর হাইকোর্টে চূড়ান্ত শুনানির আদেশও বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।


সর্বশেষ সংবাদ