২৫ বসন্ত পেরিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়

গণ বিশ্ববিদ্যালয়
গণ বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

আজ ১৪ই জুলাই। গণ মানুষের বিদ্যাপীঠ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আজ থেকে ঠিক ২৫ বছর আগে ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সমাজের প্রতিটি মানুষকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতেই এই প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি, যার স্বপ্নদ্রষ্টা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যিনি আম মানুষের ‘বড় ভাই’ নামেই পরিচিত।

প্রতিবছর এই দিনটি উদযাপিত হয় ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে।  বংশী নদীর তীরে ঘাটি গেড়ে স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে বুকে লালন করে এগিয়ে যাচ্ছে ৩২ একরের এই সৃষ্টিশীল বিদ্যানিকেতন। গ্রাম ও শহরের মিশেলে তৈরি বিশাল এক ক্যাম্পাস; সবুজে ঘেরা নান্দনিক পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হবে যে কেউ।

নীতিবাক্য তো যে কেউ-ই আওড়াতে পারেন, তবে বাস্তবে যদি প্রমাণ রাখার কথা বলা হয় তবে এই প্রতিষ্ঠান অন্যতম। সূচনা থেকেই ‘ইউনিভার্সিটি উইথ এ ডিফারেন্স’ এই নীতিবাক্য লালন করে আজ অব্দি কাজ করে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান।

বৈষম্যমুক্ত এই বিদ্যাপীঠে নারী-পুরুষের পাশাপাশি চাকরি করেন ৩য় লিঙ্গের মানুষেরা।যেন প্রতি পদে পদে চ্যালেঞ্জ নিতেই ভালোবাসে এই পরিবার। যেখানে সমাজ চাপিয়ে দিচ্ছে বৈষম্য, কেড়ে নিচ্ছে বাক-স্বাধীনতা সেখানে সমাজের তথাকথিত বোদ্ধাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে, বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গণ বিশ্ববিদ্যালয়েই শুরু হয় ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার চর্চা। এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একমাত্র এখানেই রয়েছে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। নিয়মিত নির্বাচনের মাধ্যমে যেখানে তৈরি হয় মেধাবী নেতৃত্ব।

অলাভজনক ও ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠানের তকমা পাওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা বললে প্রথমেই ভর্তির বিষয়ে বলা যায়। একমাত্র এই প্রতিষ্ঠানেই ভর্তি হওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মেডিকেলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয়, ধূমপায়ী, নেশাগ্রস্থদের ভর্তির কোন সুযোগ নেই।

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একমাত্র এখানেই ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্স নামে প্রাণী চিকিৎসা এবং খাদ্য নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের বিষয়ে পড়াশোনার করার সুযোগ করে দিয়েছে। এমনকি মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিজিওথেরাপির মতো ব্যতিক্রমী বিষয়ে পড়ার সুযোগও রয়েছে।

গণ বিশ্ববিদ্যালয় এমন এক প্রতিষ্ঠান যেখানে দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী, গবেষক, রাজনৈতিক, চিন্তাবিদ, বিজ্ঞানীরা পাঠদান করিয়ে থাকেন। ফলত গতানুগতিক ধারার জাল ছাড়িয়ে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।এসকল মহান ব্যক্তিত্বের সরাসরি সাহচার্যপ্রাপ্ত হয়ে শিক্ষার্থীরাও নিজেদেরকে আগামীর জন্য তৈরি করে নিচ্ছেন।

এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকের কৃতিত্ব দেশ ছাড়িয়ে আজ আন্তর্জাতিক মহলেও চর্চিত। বিভিন্ন গবেষণা ও উদ্ভাবনে এগিয়ে এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। যার উদাহরণ রোবট মিরা ও ব্লাইন্ড স্টিকের মতো উদ্ভাবন।

সারাবছরই যেন কোনো না কোনো খেলার ইভেন্টে মেতে থাকে পুরো ক্যাম্পাস। প্রতিনিয়ত রেখে চলেছে প্রতিভার স্বাক্ষর। বাংলাদেশ জাতীয় হ্যান্ডবল দলের খেলোয়াড় ছন্দা রানী সরকার ও জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন এখানকার সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্রী। জাতীয় প্রমীলা হ্যান্ডবল দলের খেলোয়াড় ছন্দা রাণী সরকারও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সাফজয়ী শিউলি, মারিয়া, মার্জিয়াও এ প্রতিষ্ঠানেই ছাত্রী।

২৫ বসন্ত পেরিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্তির তালিকাও দীর্ঘ। চলতি বছরেই এই প্রতিষ্ঠানের অর্জনের খাতায় যোগ হয়েছে আরও দুটি বিষয়; বৈধ ভিসি প্রাপ্তি এবং কৃষি অনুষদের আনুষ্ঠানিক যাত্রা।

বিগত ৭ বছরের অনেক টানাপোড়েন এবং ছাত্র-শিক্ষকের নাখোশের কারণ ছিল বৈধ ভিসি না থাকা। রীতিমতো যেন এক বিষণ্ণতার কারণ ছিল এই ভিসি প্রসঙ্গ। এ প্রতিষ্ঠানে প্রাণপুরুষ জাফরুল্লাহ চৌধুরী জীবিত থাকা অবস্থায় একদিন ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে ভরসা দিয়ে বলেন মৃত্যুর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি দিয়ে যাবে। কাকতালীয়ভাবে যেদিন গণ বিশ্ববিদ্যালয় বৈধ ভিসি পায়, একই দিনেই দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে বিদায় নেন মহারথী সর্বজনের বড় ভাই,গরিবের ডাক্তার জাফরুল্লাহ। যিনি কথা রেখেছেন।

ইতিবাচক নেতিবাচক মিলিয়েই সভ্যতা। সব ইতিবাচক দিকগুলিকে সামনে আনলে সামান্য যা কিছুর ঘাটতি আছে তা অনুল্লেখযোগ্য। তারপরেও সেগুলিকে কাটিয়ে তোলার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখে চলেছে এই ভিন্নমাত্রার প্রতিষ্ঠানটি।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়কে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার কোন অভাব নেই বলা চলে। বরং স্বার্থকতাই বেশি। ছাত্র-শিক্ষকের মত গবেষণার রসদ আরও বিস্তৃত হলে একদিন পৃথিবীর প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর কাতারে এগিয়ে যাবে  এই বাতিঘর।

১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সত্যিকারের গণ মানুষের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ভূমিকা রেখেছে সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়। রজতজয়ন্তীতে এসে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য, অগ্রযাত্রা,আশা-প্রত্যাশার তালিকা বিশাল। এই বিশালতার মধ্যে না হারিয়ে বেঁচে থাকতে চায় প্রতিটি শিক্ষার্থী, পরিপূর্ণতা আনতে চায় আশা-আকাঙ্ক্ষার আঙিনায়।

এই দিনে এই প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর কামনা থাকবে, আগামী দিনে প্রতিষ্ঠানটি আরও উন্নতির দিকে ধাবিত হবে। সাফল্যের ঝুলি প্রসারিত হবে, এভাবেই গৌরবের সঙ্গে সৌরভ ছড়িয়ে যাবে প্রাণের গণ বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ