বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘আপাতত’ আয়কর দিতে হবে না

হাইকোর্ট
হাইকোর্ট  © ফাইল ছবি

আপাতত কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে আয়কর দিতে হবেনা বলে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আজ বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৮ সদস্যের আপিল বেঞ্চ হাইকোর্টের রায়ের বিপরীতে করা রিভিউ খারিজ করে এ রায় দেন। 

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আরোপ করা হয়। যা স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা। সে সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়কর নেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেন হাইকোর্ট। সে রায়ের পাল্টা আপিল করে সরকার। আজ দেশের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের আদেশটা বহাল রাখেন। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বিধায় এর আগে ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে তা বন্ধ করা হয়।

২০০৭ সালের ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, যারা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তাদের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পুনঃনির্ধারণ করার কথা জানানো হয়।

তবে, ‘মেডিকেল, ডেন্টাল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও তথ্য শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আয় করমুক্ত হইবে। কিন্তু ওই সকল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিবছর যথারীতি নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীসহ আয়কর বিবরণী দাখিল করতে হবে। ১ জুলাই থেকে এটা কার্যকর হবে’, বলা হয় প্রজ্ঞাপনে।

২০১০ সালের ১ জুলাই এনবিআরের আরেক প্রজ্ঞাপনে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং কেবলমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের আয়ের ওপর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।

এই প্রজ্ঞাপন দুটি চ্যালেঞ্জ করে ৪৬টি রিট আবেদন করা হয়। এসব রিট আবেদনে প্রথমে রুল জারি করা হয়। এ রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আয়কর আদায় অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট।

আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলে, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে জীবনের অধিকারের কথা বলেছে, যার মধ্যে শিক্ষার অধিকারও পড়ে।

“গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তার উঠতি নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ অনুসারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে। এখন সরকার যদি এই সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ট্যাক্স আরোপ করে, তাহলে তা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাড়িয়ে দেবে।”

“এটা সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রের এই বৈষম্যমূলক পদক্ষেপের চূড়ান্ত ভুক্তভোগী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এটা অসাংবিধানিক এবং অবৈধ।”


সর্বশেষ সংবাদ