ঈদে ‘বাড়ি যাচ্ছি’ স্ট্যাটাস দেওয়ার পর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ঢাবি শিবিরের সাবেক নেতা আবিদ

আলাউদ্দিন আবিদ
আলাউদ্দিন আবিদ  © টিডিসি সম্পাদিত

ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানেই নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা। প্রতিবার পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফিরেন রাজধানীবাসী। তবে গত ১৬ বছর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে অনেকেই পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারেননি।

তেমন একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সাবেক অর্থ সম্পাদক আলাউদ্দিন আবিদ। ২০১৭ সালের ২৭ রমজান ঈদে ‘বাড়ি যাচ্ছি’ বলে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করেছিলেন পুলিশ। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ১৬ বছরে এই প্রথমবার ঈদে নির্ভয়ে বাড়ি ফিরছেন তিনি। এ নিয়ে ঢাবি শিবিরের সাবেক এই নেতার কমতি নেই উচ্ছ্বাসের। সঙ্গে জানিয়েছেন বিগত দিনের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতার কথাও। 

জানা যায়, আলাউদ্দিন আবিদ ঢাবির ২০১৫-১৬ সেশনের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে। ৪টি মামলা মাথায় নিয়েও এ শিক্ষার্থী অনার্সে সিজিপিএ ৩.৬৮ এবং মাস্টার্সে ৩.৭৬ অর্জন করেছেন।

আজ মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ২০১৩ সালের পর এই প্রথমবার নির্ভয়ে বাড়ি ফিরছি ঈদ করতে। দীর্ঘ এক যুগ পর আবার বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ পেলাম। অথচ একসময় ভাবতেও পারিনি, কবে শান্তিতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করতে পারব।

তিনি আরও লেখেন, ২০১২ সালের সেই অস্থির সময়ের কথা মনে পড়ছে। মিছিল থেকে  ফেরার পথে গ্রেফতার হয়েছিলাম। তারপর শুরু হলো এক দীর্ঘ অন্ধকার অধ্যায়—কারাগারে তিনটি ঈদ কেটেছে, মোট চারবার গ্রেফতার হতে হয়েছে, আর মিথ্যা অভিযোগে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যার মধ্যে দুইটি এখনো চলমান। সময় বদলেছে, ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে, কিন্তু আমার মতো অনেক বিরোধী নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলাগুলো আজও বহাল রয়েছে।

ঈদে ‘বাড়ি যাচ্ছি’ স্ট্যাটাস দেওয়ার পর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন জানিয়ে তিনি লেখেন, ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে ছোট্ট একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছিলাম—‘বাড়ি যাচ্ছি’। কে জানত, এই সামান্য বাক্যই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে! ২৭ রমজান, তারাবির নামাজ শেষে মসজিদের বাইরে থেকেই আমাকে গ্রেফতার করা হলো। পুলিশ জানাল, তারা কয়েকদিন ধরে আমাকে ট্র্যাক করছিল কিন্তু ধরতে পারেনি।

জানা যায়, আবিদ দাখিল ও আলিম শেষ করেছিলেন এলাকার একটি মাদ্রাসা থেকে। তখন থেকে তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় জেলে যেতে হয়েছিল ৪ বার আর জেলে ছিলেন প্রায় ১৯ মাস। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসেও একটি মামলায় ওয়ারেন্ট জারি হওয়াতে যেতে হয়েছিল জেলে। এজন্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক লাইফ থেকে এক বছর ইয়ার ড্রপও দিতে হয়েছিল।

তার এই অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে লেখেন, শৈশব-কৈশোরেও আমি স্বাভাবিক জীবন পাইনি। দাখিল পরীক্ষার সময় বাড়িতে থাকা ছিল অসম্ভব—প্রতিদিন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আত্মীয়দের বাড়ি বদলাতে হতো। আলিম পরীক্ষাও নিজ এলাকায় দেওয়া সম্ভব হয়নি; ফেনী থেকে মিরসরাই গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। কত ঈদ কেটেছে ঢাকায়, কত ঈদ কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে! যখনই ঈদের জন্য বাড়ি গিয়েছি, ভয় লেগেছে—পুলিশ এসে নিয়ে যাবে না তো?

তিনি আরও লেখেন, আমার মতো আরও অনেকেই বছরের পর বছর পরিবারের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত থেকেছে। কিন্তু সময় বদলায়, ইতিহাসের চাকা ঘুরে যায়। যারা আমাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল, আজ তারা নিজেরাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, কেউ কারাগারে বন্দি। কারণ জালিমদের ওপর আল্লাহর লানত নেমে আসে, আর মজলুমদের ধৈর্যের ফল একদিন মিলবেই।

‘‘এবার আমি সত্যিকার অর্থেই মুক্ত একজন মানুষ। পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে নির্ভয়ে সময় কাটাতে পারব, প্রাণ খুলে কথা বলতে পারব। এত বছরের যন্ত্রণা শেষে, এটাই হবে আমার জন্য প্রকৃত ঈদের আনন্দ।’’


সর্বশেষ সংবাদ