বাংলাদেশিদের জন্য ডিভি লটারির বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন ফেসবুক-ইউটিউবে
- টিডিসি ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২১, ১০:১৫ AM , আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২১, ০৭:১৭ PM
সম্প্রতি বাংলাদেশিদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) লটারির আবেদনের কথা বলে ফেসবুক ইউটিউবে বিজ্ঞাপনধর্মী পোস্ট দিতে দেখা গেছে। অথচ ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশিদের জন্য ডিভি লটারি বন্ধ রয়েছে। কোথাও কোথাও আবেদনের জন্য টাকাও চাওয়া হয়েছে।
এমন কিছু বিজ্ঞাপনধর্মী ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। এছাড়া ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট ইউটিউবেও এমন দাবি করে অনেক ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। গত ৭ মে এমন দাবিতে ‘সুখবর ‼ আবারো চালু হলো বাংলাদেশে ডিভি লটারি’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়।
ডিভি লটারি ২০২২ ফেসবুক পেজটির মাধ্যমে একটি লিঙ্ক শেয়ার করা হয়েছে। ফেসবুক পোস্টে লেখা হয়েছে, “বাংলাদেশী নাগরিক হয়েও যেভাবে অ্যামেরিকান ডিভি লটারিতে-২০২২ অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন দেখুন। বাংলাদেশীদের আবেদনের যোগ্যতা ও বিস্তারিত দেখুন: https://otee.net/usa-dv-lottery-2022-usa-dv-lottery...”
ওয়েবসাইট লিঙ্কে গিয়ে একটি বড় ধরনের ব্লগ পোস্ট দেখা যায়। সেখানে বেশকিছু বিভ্রান্তিকর বিষয় রয়েছে। প্রথমত ব্লগ পোস্টটির শিরোানাম ‘ইউএসএ ডিভি লটারি ২০২২ ইউএসএ গ্রিন কার্ড লটারি অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ফরম’ হলেও পুরো পোস্টে কোনো ফরম বা এ সংক্রান্ত কোনো সঠিক লিঙ্ক নেই। পোস্টের মাঝে মাঝে ‘ক্লিক হেয়ার টু রেজিস্ট্রার’, ‘ডিভি-২০২২ অনলাইন রেজিস্ট্রেশন’ এবং ‘রিক্রুটমেন্ট লিঙ্ক’ নামে তিনটি হাইপার লিঙ্ক রয়েছে। এগুলোতে ক্লিক করলেও ফের একই ধরনের নতুন ব্লগ পোস্টে যায়।
ব্লগ পোস্টটির ভেতরে অবশ্য বলা হয়, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ও ব্রাজিলসহ ১৮টি দেশ বর্তমান ডিভি লটারির আওতাভুক্ত নয়। তবে স্বামী বা স্ত্রী ডিভি আবেদনের বৈধ তালিকাভুক্ত দেশে জন্মগ্রহণকারী হলে সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আবেদনকারীর জন্ম তালিকাভুক্ত নয় এমন দেশে হয়ে থাকলে তার জন্মের সময় যদি তার বাবা-মা কেউ সেই দেশের নাগরিক না হয়ে থাকেন এবং একইসঙ্গে তারা বৈধ তালিকাভুক্ত দেশের হন তাহলে বাবা-মায়ের দেশের ঠিকানা ব্যবহার করে আবেদন করতে পারবেন। দেখুন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবসাইটে এমন সুযোগের কথা উল্লেখ রয়েছে। এখানে আপলোড করা ১৮ পাতার নির্দেশনার প্রথম পাতায়ই একথা বলা আছে।
তবে ফেসবুকে এসব ব্লগ পোস্ট ব্যবহার করে গড়ে বাংলাদেশিদের জন্য ডিভি চালুর যে দাবি করা হচ্ছে তা বিভ্রান্তিকর।
ডিভি লটারি ২০২২ পেজে ২৪ এপ্রিল করা পোস্টটিতে ৪৯ হাজারের বেশি রিয়্যাক্ট, দুই হাজারের বেশি মন্তব্য এবং পাঁচ হাজার ৪০০ বারেরও বেশি শেয়ার হয়েছে। তবে মন্তব্যের ঘরে বহু মানুষকে এই পোস্টটি ভুয়া বলে আখ্যায়িত করতে দেখা গেছে। পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানেও (২ জুলাই, শুক্রবার সন্ধ্যা) বিজ্ঞাপন চলমান রয়েছে।
অথচ ঢাকাস্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘ডাইভারসিটি ভিসা-ডাইভারসিটি অভিবাসী ভিসা জালিয়াতদের সম্পর্কে সচেতন হোন। ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ আর ডাইভারসিটি ভিসা কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার যোগ্য নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস জানায়, ২০০৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি এই ভিসার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছে বলে বাংলাদেশ এই যোগ্যতা হারিয়েছে। কারণ ডিভি কর্মসূচি সেই দেশগুলোর জন্য যেসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের হার তুলনামূলকভাবে কম।
ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নাগরিক ও অধিবাসীদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার আবেদনের জন্য ব্যক্তিগত মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার কথা আবার মনে করিয়ে দেয়। ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস নিয়মিতভাবে ভিসা যোগাড় করে দেওয়া বিষয়ক প্রতারণামূলক সহায়তার প্রস্তাব, ই-মেইল, চিঠি, ওয়েবসাইট, ফোন কল, এসএমএস এবং পত্রিকায় ছাপা বিজ্ঞাপনের বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে থাকে। এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সঙ্গে যুক্ত নয় এবং এমন কোন সেবা দেওয়ার জন্য দূতাবাস তাদের অনুমোদন, সনদ বা অনুমতি দেয়নি।
এছাড়া ২০১৬ সালের ১৫ জুন প্রথম আলোয় ‘প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান মার্কিন দূতাবাসের : ডিভি ভিসা লটারির জন্য বাংলাদেশিদের সুযোগ নেই’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এর আগে ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রথম আলোর ‘বাংলাদেশিদের জন্য আর ডিভি লটারি নয়’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) প্রোগ্রাম বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে কোনো দেশ থেকে যদি ৫০ হাজারের বেশি অভিবাসী বিগত পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে, তাহলে সে দেশ আর ডিভি প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারে না। বাংলাদেশ থেকে গত পাঁচ বছরে ৫০ হাজারেরও বেশি অভিবাসী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। সে কারণে বাংলাদেশ ডিভি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আর যোগ্য নয়।’
প্রতারণার এমন ঘটনা সে সময়ও ঘটতো। সেকারণে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানতে পেরেছে, বাংলাদেশের কিছু নাগরিকের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা লটারি জিতেছেন মর্মে ই-মেইল এসেছে। অনেকে এ ধরনের লটারিতে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ–নিমন্ত্রণ পাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার কখনোই ই-মেইল বা টেলিফোনে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে না অথবা ডিভি লটারিতে অংশ নেওয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দেয় না।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ভিত্তিক বাংলাদেশি কমিউনিটির পত্রিকা ঠিকানার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবরেও ডিভি আবেদন শুরুর খবর দেওয়া হয়। সেখানে বাংলাদেশিদের আবেদনের সুযোগ নেই বলে জানানো হয়।
এছাড়া হ্যালো ইউএসএ নামক ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেল থেকেও এ বিষয়ে প্রতারণা নিয়ে সতর্কতামূলক ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে।