লোকসংগীত আর গ্রামীণ ঐতিহ্যে ফিরে দেখা বৈশাখ

  © সংগৃহীত

নববর্ষ মানেই নতুন স্বপ্ন, নতুন আশার হাতছানি। কিন্তু এই আশার ভিতরেও জড়িয়ে থাকে শেকড়ের টান। লোকজ সংস্কৃতি আর গ্রামীণ ঐতিহ্যই তো সেই শেকড়—যেখান থেকে উৎসারিত হয় বৈশাখের প্রাণ।

বাংলা নববর্ষের শুরুতেই মাটির গন্ধ মিশে যায় সুরে। গ্রামে-গঞ্জে তখন ভোরবেলায় বাজে একতারা, দোতারা আর মৃদঙ্গের শব্দ। বৈশাখ মানেই পালাগান, ভাটিয়ালি, জারি-সারি, বাউল গান। এ গান শুধু বিনোদন নয়, গ্রামীণ জীবনের সুখ-দুঃখ, প্রেম-বিরহ, প্রাকৃতিক চক্র ও ধর্মীয় উপলব্ধির কাব্যিক বহিঃপ্রকাশ।

লালন শাহ, হাসন রাজা, রাধারমন দত্ত—তাদের গান আজও বৈশাখে প্রাণ পায় নতুন করে। এখনো অনেক গ্রাম্য মেলায় দেখা মেলে বাউলদের, পাগল বেশে গাইছে “সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে...”

বৈশাখী মেলা শুধু কেনাকাটা নয়, এটা একটা সাংস্কৃতিক সম্মিলন। স্থানীয় কৃষিপণ্য, মাটির তৈজসপত্র, বাঁশের কাজ, কাঠের খেলনা থেকে শুরু করে ঘুড়ি, ঝাঁপি, হারমোনিয়াম—সব পাওয়া যায় এসব মেলায়। গ্রামবাংলায় এখনো বৈশাখের দিন স্কুল মাঠ, ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর বা নদীর পাড়ে বসে দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসব।

এই মেলাগুলোতে একসময় হতো গম্ভীরা, কথকতা, নাটক ও জারি গানের আসর। এখন হয়তো আধুনিকতার ছোঁয়ায় তার রূপ বদলেছে, কিন্তু ঐতিহ্যের ছাপ রয়ে গেছে।

বৈশাখের দিনে কৃষকরা আগে নতুন ফসলের জন্য প্রার্থনা করত। সেই থেকেই “নবান্ন” বা নতুন ধানের চাল দিয়ে বানানো পিঠা-পায়েসের প্রচলন। পান্তা-ইলিশ এখন শহুরে সংস্কৃতির অংশ হলেও গ্রামে বৈশাখের সকালে নারিকেল কুঁচি দিয়ে মাখানো পান্তা, আলু ভর্তা আর কাঁচা মরিচে ছিল সবার ঘরে।

লোকসংগীত ও গ্রামীণ সংস্কৃতির চর্চা এখন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তরুণ প্রজন্মের অনেকে এই শেকড় থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। তবে আশার কথা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং গণমাধ্যম আজকাল লোকসংগীতকে নতুন করে তুলে ধরছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাশেদা তুলি বলেন, “আমি শহরে বড় হয়েছি, কিন্তু যখন মেলা বা কোনো উৎসবে বাউল গান শুনি, একরকম আত্মিক টান অনুভব করি। এটা যেন আমার পূর্বপুরুষের ভাষা।”

পহেলা বৈশাখের উৎসব শুধুই ক্যালেন্ডার বদলের উপলক্ষ নয়। এটি আমাদের সংস্কৃতির, ঐতিহ্যের আর আত্মপরিচয়ের উৎসব। লোকসংগীত আর গ্রামীণ ঐতিহ্য এই উৎসবের প্রাণ। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence