ছাত্র-ছাত্রীদের একই পোশাকে আপত্তি মুসলিমদের

ছাত্র-ছাত্রীদের একই পোশাকে আপত্তি
ছাত্র-ছাত্রীদের একই পোশাকে আপত্তি  © সংগৃহীত

লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে একটি স্কুলে ছেলে ও মেয়েদের একই পোশাক চালু করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে মুসলিম সম্প্রদায়। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের কেরালা রাজ্যের একটি স্কুলে। জেলার এক সরকারি স্কুল একাদশ শ্রেণির ছাত্র এবং ছাত্রীদের জন্য একইরকম পোশাক বিধি চালু করেছে। পা ঢাকা নীল প্যান্ট এবং ফুলহাতা নীল স্ট্রাইপ শার্ট পরতে হবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে। তবে এই পোশাক বিধি বাধ্যতামূলক নয়। প্রয়োজনে স্কুল পোশাকের সঙ্গে স্কার্ফ জড়িয়ে আসতে পারবেন ছাত্রীরা।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়। তাদের অভিযোগ, ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপ না করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: বিশ্বের তৃতীয় দূষিত বাতাসের শহর ঢাকা

অভিন্ন পোশাকের বিরোধিতা করা মুসলিম সম্প্রদায়ের কমিটির সদস্য মুজাহিদ বালুসারি বলেছেন, পিটিএর সাধারণ সভার আয়োজন না করেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন তাদের মেয়েরা বাধ্য হবে ছেলেদের মতো পোশাক পরতে। গরিব পরিবারগুলোর জন্য এটি নতুন একটি বোঝা।

বালুসারি এর থেকেও বড় অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, তাদের সন্তানদের ওপর নাস্তিকতার মতাদর্শ চাপিয়ে দেয়ার এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের বিশ্বাসের সঙ্গে আপস করতে পারি না। ছেলে ও মেয়েদের স্বতন্ত্র পরিচয় রাখতে হবে।’

আরও পড়ুন: বাসের ধাক্কায় জবি শিক্ষার্থী আহত

এ ছাড়া তিনি দাবি করেন, মেয়েদেরকে ছেলেদের মতো পোশাক পরার অনুমতি দিলে তারা অবাধ যৌনতায় প্রবেশ করতে পারে। লিঙ্গবৈষম্য দূর করার নামে এটি ছেলেমেয়েদের যৌন স্বাধীনতা প্রদান করতে পারে।

যদিও স্কুলের প্রিন্সিপাল ইন্দু আর দাবি করেছেন তারা স্কুলের পোশাক পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে স্টাফদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। অভিভাবকদের সঙ্গেও মিটিং করেছেন। অধিকাংশই একমত হওয়ায় তারা পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ইন্দু বলেন, ‘মাত্র এক বা দুজন অভিভাবক সমলৈঙ্গিক পোশাকের জন্য তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। আমরা তাদের জানিয়েছি, যদি মেয়েরা চায় ফুলহাতা শার্ট, হিজাব এমনকি ওয়েস্টকোটও পরতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তার স্কুলের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করাটা বিস্ময়কর, যেখানে কেরালার অনেক বেসরকারি স্কুলের ছাত্রীরা আগে থেকেই ট্রাউজার পরে। অনেক সরকারি জুনিয়র স্কুলে সমলৈঙ্গিক পোশাক ২০১৮ সালেই চালু হয়েছে।’

আরও পড়ুন: রাস্তায় শুয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

সমলৈঙ্গিক পোশাকের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক আর বিন্দু বলেন, ‘বৈষম্য দূর করে শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে এই সিদ্ধান্ত। এটা স্বাভাবিক, সমাজে রক্ষণশীল কিছু গোষ্ঠী এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবে। কিন্তু লিঙ্গবৈষম্য দূর করে মানবসমাজের প্রত্যেকের একই দিকে হাঁটা উচিত। এই বার্তা পৌঁছে দিতেই এমন সিদ্ধান্ত।’

শিক্ষায় ভারতের সবচেয়ে এগিয়ে থাকা রাজ্য কেরালা। সবচেয়ে প্রগতিশীল রাজ্য হিসেবেও এটিকে ধরা হয়। কেরালায় সাক্ষরতার হার শতভাগ। ভারতের অন্য কোনো রাজ্য এ নজির গড়তে পারেনি। স্কুলশিক্ষার্থীদের মাঝে ৪৮ শতাংশ নারী। যাদের অধিকাংশই পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেবে।


সর্বশেষ সংবাদ