চল্লিশে পা দেয়া আমি অনেক কিছু হারিয়েছি

মেহের আফরোজ শাওন
মেহের আফরোজ শাওন

আমার জন্ম চিটাগাং শহরে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা: নুরজাহান ভুঁইয়া’র হাতে। তবে পাসপোর্ট আর অন্যান্য কাগজপত্রে জন্মস্থান হিসাবে নাম দেয়া জামালপুর! কেন যে পাসপোর্টে ভুল জায়গার নাম দেয়া হলো তা জিজ্ঞেস করলে আমার বাবা গম্ভীর ভঙ্গিতে বলেন “জন্মস্থান হিসাবে নিজের গ্রামের বাড়ির নাম দেয়াই উত্তম!”
আমার গ্রামের বাড়ি জামালপুর।

আমার জন্ম তারিখ নিয়েও কাগজপত্রে কিছু ভুল ছিল! এসএসসি পরীক্ষার ফর্ম পূরণের সময় আমার বাবা লিখে দিয়ে আসলেন ‘১২ ডিসেম্বর, ১৯৮২’! সেখানে কেন যে ভুল লিখলেন এটা জিজ্ঞেস করতেই আব্বু লজ্জিত হাসি দিয়ে বলেছিলেন “আমি তারিখ ফারিখ মনে রাখতে পারি না রে মা!”

এই তারিখ অবশ্য পরে আমি ঠিক করেছি। সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট সব জায়গায়। কিন্তু জন্মস্থানটা কেন যেন আর ঠিক করা হয়নি!

‘তারিখ ফারিখ’ আসলেই আমার বাবার মনে থাকে না। আমাদের ৪ ভাইবোনের কারো জন্মদিন তার মনে নেই। আমার সবচাইতে ছোটবোন নিজ দায়িত্বে প্রত্যেকের জন্মদিনের আগের রাতে আব্বু আম্মুকে মনে করিয়ে দেয় যেন তারা জন্মদিনের মানুষটাকে শুভেচ্ছা জানাতে পারে। এবার সেও তাদের মনে করিয়ে দিতে ভুলে গেল। তাই জন্মদিনের প্রথম প্রহরে আব্বু কিংবা আম্মুর কাছ থেকে কোনো শুভেচ্ছা বার্তা পাওয়া হয়নি আমার।

আমি অবশ্য দমে যাবার পাত্র না! নিজ দায়িত্বে রাত ১২.১৫ মিনিটে তাদের ফোন করে বললাম-
“তাড়াতাড়ি আমাকে উইশ করো, আমার জন্মদিন! আর জলদি জলদি বলো গিফট কি দিচ্ছ।”

১২ অক্টোবর ছিল আমার জন্মদিন। জন্মদিনের প্রথম প্রহর শুরু হবার অনেক আগে থেকেই ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, সামাজিক মাধ্যমের দেয়াল আর ইনবক্স শুভেচ্ছার প্লাবনে ভেসেছে। প্রিয় মানুষদের ভালোবাসার সান্নিধ্যে কেটেছে জন্মদিনের প্রতিটি প্রহর। আমি আপ্লুত... বিহ্বল... কৃতজ্ঞ। ঊনচল্লিশ পেরিয়ে চল্লিশে পা দেয়া এই আমি জীবনে হারিয়েছি অনেক কিছু। তারপরও পরম করুণাময় আমায় আজলা ভরে দিয়েছেন। আমার আর কি চাই!

‘তব আশীষ কুসুম ধরি নাই শিরে,
পায়ে দলে গেছি, চাহি নাই ফিরে;
তবু দয়া করে কেবলি দিয়েছ-
প্রতিদান কিছু চাওনি!
আমি অকৃতি অধম বলেও তো কিছু
কম করে মোরে দাওনি...’

ছবি: ১৯৯৬ সালের ১২ অক্টোবর, আমার ১৫ তম জন্মদিন। [ফেসবুক থেকে]


সর্বশেষ সংবাদ