হিজাব ছাড়া মহিলাদের খুঁজতে ইরানে ড্রোন, পোশাকবিধি অমান্য করলে ধরা পড়বে অ্যাপে
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:৫০ AM , আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:৫০ AM

কোন মহিলা হিজাব পরছেন না, তার ওপর নজর রাখতে এবার ড্রোন ব্যবহার করছে ইরান। তৈরি করেছে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনও (অ্যাপ)। ইরান সরকারের সহায়তায় তৈরি ওই অ্যাপটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘নাজের’। কোনো মহিলা হিজাব ছাড়া ঘুরছেন কিনা, তা ওই অ্যাপের মাধ্যমে পুলিশকে জানাতে পারবেন সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক রিপোর্টে এমনটাই জানানো হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা অনুমান করছেন, ইরান পোশাকবিধির উপর নজর রাখার জন্য বৈদ্যুতিক নজরদারি যন্ত্রের সাহায্য নিচ্ছে। এরমধ্যে অন্যতম হল ড্রোনের ব্যবহার। রাস্তা-ঘাটে মহিলাদের ওপর নজর রাখতে এই ড্রোনগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। তেহরানের আমিরকবির বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ পথে এক বিশেষ ধরনের সফ্টওয়্যার বসানো হয়েছে। সফ্টওয়্যারটি মুখ শনাক্তকরণের জন্য।
তবে এপি জানিয়েছে, কেউ হিজাব ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করছেন কিনা, তাও ওই সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে ধরা হচ্ছে। ইরানের মূল সড়কগুলোর ধারে বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সেগুলোও মূলত পোশাকবিধির উপর নজরদারির জন্যও বসানো হয়েছে।
জাতিসংঘের অনুসন্ধানকারী দল জানিয়েছে, ইরান পুলিশ ‘নাজের’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনও চালু করেছে। রাস্তাঘাটে, গাড়ি, বাসে বা অন্য কোনও প্রকাশ্য জায়গায় কোনও মহিলাকে হিজাব ছাড়া ঘুরতে দেখলে ওই অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো যাবে। অ্যাম্বুলেন্সেও হিজাব ছাড়া কাউকে দেখা গেলে ওই অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ জানানো যাবে। কবে, কোন সময়ে, কোথাও ওই মহিলাকে হিজাব ছাড়া দেখা গিয়েছে, তাও পুলিশকে জানানো যাবে ওই অ্যাপের মাধ্যমে। কোনও গাড়িতে হিজাবহীন অবস্থায় দেখা গেলে, সেই গাড়ির নম্বরও পুলিশকে জানানো যাবে।
ইরানে মহিলাদের পোশাকের ক্ষেত্রে কড়া ফতোয়া রয়েছে। সে দেশে মহিলাদের আবশ্যিক ভাবে মাথা ঢেকে রাখতে হয় হিজাব পরে। রাস্তায় বের হলে সব সময় ঢিলেঢালা পোশাক পরার নিয়ম। ইরানের প্রাক্তন ধর্মগুরু আয়াতুল্লাহ খামেনির পর বর্তমান ধর্মগুরু আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিও এই ফতোয়া জারি রেখেছেন। তা ভাঙলে কড়া শাস্তির বিধানও রয়েছে সে দেশে।
২০২২ সালে ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকেও হিজাব না পরার ‘অপরাধে’ তুলে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের পুলিশ। ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয়েছিল তার। মাহসার মৃত্যুর পর গোটা ইরানে যখন প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গিয়েছিল।
সম্প্রতি এই পোশাক-ফতোয়ার প্রতিবাদে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া আহু দারইয়াই প্রকাশ্যে অন্তর্বাস পরে হেঁটেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের পুলিশ। পরে প্রশাসন থেকে জানানো হয়, তরুণী মানসিকভাবে সুস্থ নন।
একাধিক সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, তাকে এক মানসিক রোগের চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে। ওই মানসিক রোগের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে দারইয়াই ছাড়া পেয়েছেন কিনা, তা পরবর্তীতে প্রকাশ্যে আসেনি।