ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে জড়িত থাকায় হার্ভার্ডের ১৩ শিক্ষার্থীর ডিগ্রি স্থগিত

আসমার আসরার সাফি ও শ্রদ্ধা জোশি
আসমার আসরার সাফি ও শ্রদ্ধা জোশি   © ফাইল ফটো

ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ শিক্ষার্থীর ডিগ্রি স্থগিত রাখা হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালের স্নাতকদের ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানের পর দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু চার বছর পড়ার পর হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী আসমার আসরার সাফি এখনো সেই ডিগ্রির অপেক্ষায় আছেন। পাকিস্তানের এই শিক্ষার্থীর মতো একই অবস্থায় আছেন আরও ১২ জন। অন্তত এক বছরের মধ্যে তাঁদের স্নাতক ডিগ্রি দেওয়া হবে না বলে জানা গেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা হার্ভার্ড করপোরেশন গত ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে জড়িত থাকার কারণে এই বছরের স্নাতক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়টির সামাজিক অধ্যয়ন এবং জাতিসত্তা, অভিবাসন ও অধিকার বিভাগের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ২৩ বছর বয়সী সাফি বলেছেন, ‘আমি আমার আপিলের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি। আমি একজন রোডস স্কলার। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাট্রিকুলেশন করতে পারি কি না, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। কারণ, হার্ভার্ডে আমার ডিগ্রি এক বছরের জন্য আটকে রাখা হয়েছে। আমি আমার প্রোগ্রামের জন্য সব একাডেমিক শর্তপূরণ এবং আমার ডিগ্রির প্রয়োজনীয়তাও পূরণ করেছি।’

ডিগ্রি না পাওয়া আরেক শিক্ষার্থী শ্রদ্ধা জোশি। সাফির মতো একই কোর্সে পড়াশোনা করা এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আপিল করার পর আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগাযোগের জন্য অপেক্ষা করছি। পুরো প্রক্রিয়ার অস্পষ্টতা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অনুষদ সদস্যরাও বেশ বিভ্রান্ত এবং আপিলের সময়সীমাও অস্পষ্ট। আমরা অস্থিরতায় ভুগছি।’

শ্রদ্ধা বেশ আগেই থেকেই যুক্তরাজ্যে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স করার কথা ভেবেছেন। কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তিনি। শ্রদ্ধা বলেন, ‘হার্ভার্ড-ইউকে ফেলোশিপের অধীনে ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল আমার। কিন্তু স্নাতক ডিগ্রি আটকে যাওয়ায় এখন সবই ধোঁয়াশাপূর্ণ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বচ্ছতা ও যোগাযোগের ঘাটতির কারণে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সেটাও অনুমান করা মুশকিল হয়ে পড়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও একাডেমিক স্বাধীনতা এবং গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের প্রতিবাদ করার অধিকার সম্পর্কে সৃষ্টি হয়েছিল বিতর্ক। বিক্ষোভে জড়িয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি হার্ভার্ডের এক বৈঠকে কলা ও বিজ্ঞান অনুষদ থেকে এ বছর ডিগ্রিপ্রাপ্তদের তালিকায় থাকা ১৩ শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি দেওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন অনেকে। তবে তা কানে তোলেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ ব্যাপারে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘বিক্ষোভ শিবিরে অংশগ্রহণকারীদের প্রতিনিধিদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট গারবারের লেখা চিঠিতে শাস্তিমূলক প্রক্রিয়াগুলোর ফলাফলের ব্যাপারে কথা বলা হয়নি। বরং সেখানে বলা হয়েছে, তিনি (গারবার) শৃঙ্খলা–সম্পর্কিত সংস্থাগুলোকে তাদের বিদ্যমান নজির এবং প্রয়োগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিতে বলেছেন।’

গত ২৪ এপ্রিল নিউইয়র্কের আইভি লিগ কলেজ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে তাঁদের ক্যাম্পাসের মাঠে স্থাপন করেছিল বিক্ষোভ শিবির। ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত বা ব্যবসা করছে—এমন সংস্থাগুলো থেকে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়কে বিচ্ছিন্ন করার দাবি জানান তাঁরা। কালক্রমে এই বিক্ষোভ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। হার্ভার্ডসহ প্রায় ৩০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শিবির স্থাপন করে গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।


সর্বশেষ সংবাদ