মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষার অভিযোগ

জীববিজ্ঞানের প্রদর্শক পদে কেবল প্রাণিবিদ্যা বিষয়ের নিবন্ধনধারীদের সুপারিশ

ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক
ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক   © ফাইল ছবি

চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে জীববিজ্ঞান বিষয়ের প্রদর্শক পদে কেবল প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ের নিবন্ধনধারীদের নিয়োগের সুপারিশ করার অভিযোগ উঠেছে। যদিও এই পদে প্রাণিবিজ্ঞান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান উভয় বিষয়ের সনদধারীদের সুপারিশ করার কথা বলা হয়েছিল।

চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে জীববিজ্ঞানের প্রদর্শক পদে শূন্য পদ রয়েছে ২১০টি। তবে নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ করা হয়েছে মাত্র ৫২ জনকে। যাদের নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে তারা সকলেই প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ের নিবন্ধনধারী। শুধু তাই নয়; প্রদর্শক পদে আবেদন করা হলেও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ের সনদধারীদের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ ২০২২ সালের ৩০ মে এক নির্দেশনায় জীববিজ্ঞান বিষয়ের প্রদর্শক পদে প্রাণিবিজ্ঞান অথবা উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ে সুপারিশপ্রাপ্তদের এমপিওভুক্তির নির্দেশনা দেয়। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রদর্শক পদে আবেদনের ক্ষেত্রেও প্রাণিবিজ্ঞান/উদ্ভিদবিজ্ঞান দেখানো হয়। এরপরও প্রদর্শক পদে কেবলমাত্র প্রাণিবিজ্ঞানের নিবন্ধনধারীদের সুপারিশ করা হয়েছে।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) দাবি, চাকরিপ্রার্থীদের আবেদন গ্রহণ থেকে সুপারিশের পুরো প্রক্রিয়া সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এখানে তাদের কোনো হাত নেই। সুপারিশের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়ে থাকলে প্রার্থীরা আবেদন করুক। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন: ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির সুপারিশে ‘হ-য-ব-র-ল’, ফল বাতিলের দাবি

জানা গেছে, গত বছরের শেষ দিকে ৬৮ হাজার ৩৯০ জন শিক্ষক নিয়োগের চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ৩১ হাজার ৫০৮ জন এবং মাদরাসা, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি স্কুল-কলেজে ৩৬ হাজার ৮৮২ জন নিয়োগ দেওয়ার কথা জানানো।। আবেদনকৃতদের তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে ৩২ হাজার ৪৩৮ জন প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য প্রাথমিকভাবে সুপারিশ করা হয়েছে। 

চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, প্রদর্শক (উদ্ভিদবিজ্ঞান/ প্রাণিবিজ্ঞান) পদে আবেদন করে অনেকে সহকারী শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। আবেদন করা হয়েছে এক বিষয়ের জন্য। আর সুপারিশ করা হয়েছে ভিন্ন বিষয়ে। আবেদনকৃত পদ ও সনদপত্রের মধ্যে মিল না থাকায় সুপারিশপ্রাপ্তদের কারোই এমপিও হবে না। লিখিত আবেদন দেওয়া হলেও তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। 

তারা জানান, এনটিআরসিএ’র নির্দেশনা অনুযায়ী তারা ৪০টি প্রতিষ্ঠান পছন্দক্রম দিয়েছেন। এরপর হ্যাঁ অপশনও চালু করেছিলেন। তবুও তাদের সুপারিশ করা হয়নি। টেলিটক রেজাল্ট প্রস্তুত করতে উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়কে বাদ দিয়ে শুধু প্রাণিবিদ্যা বিষয়কে সুপারিশ করেছে। এটি না হলে সুপারিশের ক্ষেত্রে এমন হবার কথা নয়। তাই প্রদর্শক (জীববিজ্ঞান) পদে পুনরায় সুপারিশের দাবি জানিয়েছেন তারা।

আরও পড়ুন: চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি: যে কারণে অর্ধেকেরও বেশি পদ ফাঁকা

এ প্রসঙ্গে মো. জাহাঙ্গীর আলম নামে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ের এক নিবন্ধনধারী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ে আমার মেধাতালিকা ২২১। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আমি প্রদর্শক (জীববিজ্ঞান) পদে আবেদন করেছিলাম। তবে আমাকে সুপারিশ করা হয়েছে সহকারী শিক্ষক (জীববিজ্ঞান) পদে। 

তিনি আরও বলেন, প্রকাশিত ফলাফলে প্রদর্শক (উদ্ভিদবিজ্ঞান/ প্রাণিবিজ্ঞান) পদে শুধুমাত্র প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ের নিবন্ধনধারীদের সুপারিশ করা হয়েছে। উদ্ভিদবিজ্ঞান সনদধারীদের প্রদর্শক পদে সুপারিশ না করে সহকারী শিক্ষক (জীববিজ্ঞান) পদে সুপারিশ করা হয়। এই অবস্থায় চাকরি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি। এনটিআরসিএ’র ভুলে আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

মো. সজিবুর রহমান নামে আরেক চাকরিপ্রার্থী জানান, ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রদর্শক আবেদন করি এবং ইয়েস অপশনে ক্লিক করি। যার প্রেক্ষিতে আমাকে সহকারি শিক্ষক জীববিজ্ঞান পদে প্রাথমিক সুপারিশ করা হয়েছে। যা আমার নিবন্ধন সনদের সাথে সাংঘর্ষিক। এ বিষয়ে আমরা এনটিআরসিএতে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।

তার দাবি, প্রদর্শক পদে শুধুমাত্র প্রাণিবিজ্ঞানের সনদধারীদের সুপারিশ করা হয়েছে। উদ্ভিদবিজ্ঞান সনদধারী কাউকেই প্রদর্শক পদে সুপারিশ করা হয়নি। যাদের সুপারিশ করা হয়েছে তাদের মেধাক্রম উদ্ভিদবিজ্ঞানের সনদধারীর চেয়ে অনেক পেছনে। আমরা চাই উদ্ভিদবিজ্ঞান/প্রাণিবিজ্ঞানের যারা সনদধারী আছে তাদের সমন্বয় করে পুনরায় সুপারিশ করা হোক। 

আরও পড়ুন: চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি: নম্বরে এগিয়ে থাকা প্রার্থীদের সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ

প্রার্থীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি এনটিআরসিএ’র সচিব মো. ওবায়দুর রহমানের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে বলেন।

পরবর্তীতে এনটিআরসিএ’র সচিব মো. ওবায়দুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই। কিছু প্রার্থী আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। আমার কাছে এতটুকু তথ্যই রয়েছে। বিষয়টি এনটিআরসিএ’র উপপরিচালক (শিক্ষাতত্ব শিক্ষামান) শাহীন আলম চৌধুরী দেখছেন। আপনি তার সাথে যোগাযোগ করুন।

জানতে চাইলে উপ-পরিচালক শাহীন আলম চৌধুরী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ের নিবন্ধনধারীরা সহকারী শিক্ষক পদে সুপারিশ পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। আমরা তাদের অভিযোগ পেয়েছি। তবে শুধু অভিযোগ করলেই হবে না। অভিযোগের কোনো সত্যতা রয়েছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে।

তিনি আরও জানান, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির প্রাথমিক সুপারিশের পর থেকে অসংখ্য প্রার্থী প্রতিদিন আমাদের কাছে অভিযোগ করছেন। আমরা তাদের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছি। অভিযোগ দেখা ছাড়াও আমাদের অনেক কাজ রয়েছে। তাই কিছুটা সময় লাগছে। প্রার্থীদের অভিযোগের সত্যতা থাকলে আমরা অবশ্যই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। 


সর্বশেষ সংবাদ