‘মেয়েকে আইফোন-লাখ টাকার ল্যাপটপ দিয়েছি, বিক্রির অভিযোগ মিথ্যা’

সুকন্যার মা
সুকন্যার মা   © সংগৃহীত

কলেজছাত্রী ইয়াশা মৃধা সুকন্যাকে বিক্রির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন তার মা নাজমা ইসলাম লাকী। বুধবার (২৪ আগস্ট) বিকালে গণমাধ্যমে এই দাবি করেছেন তিনি।

তিনি জানান, ‘আমি নিজের বাড়িতে থাকি। যে মেয়েকে আইফোন-১২ প্রো ম্যাক্স কিনে দিতে পারি, যাকে এইচপির এক লাখ টাকার ল্যাপটপ কিনে দিতে পারি। যে মেয়েকে দুই-আড়াই লাখ টাকার ডিভাইস কিনে দিতে পারি, সেখানে তিন-চার লাখ টাকা তো কিছুই নয়। এগুলো যদি আমি নাও দিতে পারতাম তাহলে ওর চাচারাও দিতে পারতো। মেয়েকে বিক্রি করে দেবো এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।’

তিনি আরও জানান, ‘আপনারা পারলে আমার এলাকা, স্থানীয় মানুষ ও কোচিং সেন্টারসহ সব জায়গায় খোঁজ নিয়ে দেখেন। আমি মা হিসেবে কেমন তারাই জানাবেন।’

নাজমা ইসলাম বলেন, ‘আমি ওকে বালিশ চাপা দেবো? মা হিসেবে আমি দুটি মাস দ্বারে দ্বারে ঘুরছি মেয়েটাকে পাওয়ার আশায়। আমি যদি এমন কাজ করতাম তাহলে এমনভাবে না দৌড়ে বলতাম ‘ভালো হইছে মেয়ে চলে গেছে!’

তিনি বলেন, ‘এটা কি কোনো মায়ের পক্ষে সম্ভব মনে করেন? এত কষ্ট করে জন্ম দেওয়ার পর লালন-পালন করে বড় করার পর কোনো মা এমন করতে পারে বলে আমার জানা নেই।’

মেয়ের এমন কর্মকাণ্ডে কারোর প্ররোচনা আছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি এখনো বিষয়টা বুঝছি না। ডিবির কাছে আমার মেয়ে আছে। তারা সঠিকভাবে তদন্ত করুক। আমার নামে সব ভিত্তিহীন কথাবার্তা হচ্ছে। আমার এই যে বাড়ি-ঘর, টাকা-পয়সা কে নেবে? আমার সন্তানই তো নেবে। এই সন্তানের দাম মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকা? এটা তো আমার জন্য কোনো অ্যামাউন্টই নয়।’

লাকী আরও বলেন, ‘যে ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ে (পালিয়ে) গেছে তারা বারবার আমাকে বলছে যাতে মামলা উঠিয়ে নেই। মেয়ের সঙ্গে আমি কথা বলতে পারিনি। দুই মাস তাকে দেখিনি। ডিবিকে বলেছিলাম অন্তত ১০ মিনিট কথা বলার সুযোগ করে দিন। আমি একটু জড়িয়ে ধরতে চাই ওকে। আমার বিশ্বাস আমাকে দেখলে ওর যত রাগ-ক্ষোভ সব উঠে যাবে।’

এ ব্যাপারে রমনা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মিশু বিশ্বাস বলেন, ‘ইয়াশাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন তাকে কার হেফাজতে দেওয়া হবে। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজ করবো।’

এদিকে বেসরকারি এক টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইয়াশা জানিয়েছেন, তিনি আর পরিবারের কাছে ফিরতে চান না। মায়ের বিরুদ্ধে নানা ধরনের নির্যাতনের অভিযোগ করেন তিনি। তার অভিযোগ, তার মা তাকে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন।

ইয়াশা আরও বলেন, ‘আমি বাসায় ফিরে যেতে চাই না, কারণ আমি সেখানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি। কোন সময় আমাকে মেরে ফেলবে আমি জানি না। আমি রাতে ঘুমাতেও পারতাম না। নানু খালি বলত, বিয়েটা করে ফেল। সাড়ে তিন লাখ টাকা দেবে, এটা তো কম না। তুই চাইলে আরও দেবে। আমার আম্মু আমাকে সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিচ্ছিল।’

উল্লেখ্য, গত ২৩ জুন মডেল টেস্ট পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ইয়াশাকে কলেজে নিয়ে যান তার মা নাজমা ইসলাম লাকী। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মেয়ে কলেজে প্রবেশ করার পর তিনি কলেজের বাইরে অভিভাবকদের বসার কক্ষে অপেক্ষা করতে থাকেন।

বেলা তিনটায় পরীক্ষা শেষে সব ছাত্রী হল থেকে বের হয়ে এলেও ইয়াশা বের হয়নি। মেয়ের বান্ধবীদের কাছে জানতে চাইলে তারা কিছু বলতে না পারায় ইয়াশার মা বিকাল চারটায় কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জানায় সেদিন পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল ইয়াশা। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও মেয়েকে না পেয়ে তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরদিন সেটি মামলায় রূপান্তর হয়।

আরও পড়ুন: রাবি শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ নেতার মেরে ফেলার হুমকির ঘটনায় তদন্ত কমিটি

গত শনিবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন ইয়াশা মৃধা সুকন্যার মা নাজমা।

এ সময় তিনি বলেন, ‘দুই মাস ধরে মেয়ের অপেক্ষা করছি। আমি কারও কোনো বিচার চাই না, শুধু মেয়েকে ফেরত চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একজন মা আমি তার কাছে আকুল আবেদন করছি আমার মেয়েকে ফেরানোর ব্যবস্থা করার জন্য। ইশতিয়াক নামে যে ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ে সারাদিন ছিল সে নাকি ওকে সন্ধ্যায় রিকশায় তুলে দিয়েছে। তাহলে আমার মেয়ে কোথায়? আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence