‘আয় জাগা–সম্পত্তি কিছু ন চাই, আর পুতরে আনি দে’

সজীবের মায়ের আহাজারি
সজীবের মায়ের আহাজারি   © সংগৃহীত

আয় জাগা–সম্পত্তি কিছু ন চাই, আর পুতরে আনি দে (আমি জায়গা–সম্পত্তি কিছু চাই না, আমার ছেলেকে এনে দাও),’ একথা বলতে বলতে বিলাপ করছেন মিরসরাইয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত জিয়াউল হক সজীবের (২১) মা। তার বুকের ধনকে হারিয়ে দিশেহারা মা একটু একটু পর চিৎকার দিয়ে উঠছেন আর ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে বলছেন। 

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের খন্দকিয়া গ্রামের আবদুল লতিফ মাস্টার বাড়ির আবদুল হামিদের ছেলে জিয়াউল। তার বাবা স্থানীয় একটি মুদিদোকানে চাকরি করেন। তার দুই ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে সজীব বড়।

জিয়াউল নগরের ওমরগণি এমইএস কলেজে গণিত দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। পাশাপাশি বাড়ির পাশে আরএনজে কোচিং সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করতেন। দুপুরে দুর্ঘটনায় হতাহত সবাই এই কোচিং সেন্টারের ছাত্র–শিক্ষক। তাঁদের সবার বাড়ি খন্দকিয়া গ্রামে।

সকাল সাতটার দিকে তার ছেলে প্যান্ট, গেঞ্জি ও কেডস পরে কোচিং সেন্টারের সবার সঙ্গে ঝরনা দেখতে যান। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে মায়ের কাছে জানতে চেয়ে ছিলেন তাকে সুন্দর লাগছে কি না। মা বলেছিলেন, অনেক সুন্দর লাগছে। 

আরও পড়ুন: মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরা ইমন যা বললেন

এত সুন্দর করে সেজেগুজে বাড়ি থেকে বের হয়ে লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরবেন এমনটা কেউ কল্পনাও করেনি। এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তার মা। কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করতেন তাই সবাই তাকে মাস্টার সজীব বলে ডাকতেন। তার মা শাহনাজ আক্তারও এই নাম ডাকতেন। বিলাপ করে করে আত্মীয় স্বজনদের বলেছেন, ‘আমার মাস্টার সজীব কই? মাস্টার সজীব কই?’ উপস্থিত কারও মুখে উত্তর নেই। এই প্রশ্নের উত্তর কারও জানা নেই। আর যে কখনও মায়ের সজীব তার বুকে ফিরে আসবেনা এটি কেউ মুখফুটে বলতে পারছেনা। সবার চোখ থেকে কেবল পানি ঝরছে। 

ছেলেকে আল্লাহ হাফেজ বলে বিদায় দিয়েছিলেন তার বাবা। ছেলের সঙ্গে এ কথাই যে শেষ কথা হবে তা ঘুনাক্ষরে ভাবতে পারেননি তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত জিয়াউল হক সজীবের বাবা মো. হামীদ বলেন, ‘নামাজ শেষে বাসায় গিয়ে দুপুরের খাবার খেতে বসেছি; ওই সময় পাশের বাড়ির ভাবি এসে মিরসরাইয়ে এক্সিডেন্টের কথা বলে। তাড়াতাড়ি ছেলেকে কল দিলাম। দেখি মোবাইল বন্ধ। খাবার রেখে ছুটে গেলাম। মাঝপথে একটা এম্বুলেন্সে করে এখানে (চমেক হাসপাতাল) চলে এলাম। আমার ছেলেকে তো পাইনি। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে পড়িয়েছি। সামান্য মুদি দোকানের কর্মচারী আমি। আমার আশা ভরসা সব শেষ।’

ভাইয়ের শোকে মুর্ছা যাচ্ছিলেন সজীবের ছোট ভাই তৌসিব। আহাজারি করে বলছেন, ‘ও আল্লাহ আমাকে নিলে না কেন। আমার ভাইকে ফিরাই দাও। আমার ভাইকে এনে দাও তোমরা। আমার জানের ভাইটা কই। ভাইরে, তুই কই?’

নিহত ব্যক্তির ছোট বোন শারমিন আক্তার বলেন, ‘ভাইয়া কোচিং সেন্টারে পড়ানোর কারণে এলাকায় অনেকে মাস্টার সজীব হিসেবে ডাকেন। ভাইয়াকে ভালো শিক্ষক বানানোর স্বপ্ন ছিল মায়ের।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence